উপহার: আসছে ভ্যালেন্টাইনস ডে। নিজস্ব চিত্র
‘স্নো-গার্ল’ থেকে ‘গোল্ড ক্রাউন’, আবার ‘লাকি লেডি’ থেকে ‘ফার্স্ট লাভে’র মতো বাজার মাতানো ডাচ গোলাপের প্রজাতির সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিচ্ছে উত্তরবঙ্গের স্থানীয় গোলাপ ‘মিনি পার্ল’। কাল, বৃহস্পতিবার ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন’স ডে। সম্প্রতি পার গিয়েছে রোজ ডে। তাতে স্থানীয় এই গোলাপের চাহিদা ছিল ডাচ গোলাপের মতোই। দাম এবং উৎপাদন বেশি হওয়ায় ফুল ব্যবসায়ীরাও এই গোলাপ দেদার কিনে বিক্রি করছেন। রাজ্য কৃষি দফতরের সাহায্যে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ির বিভিন্ন প্রান্তে পুরোদমে চলছে মিনি পার্ল গোলাপের চাষ।
কৃষি দফতরের দাবি, ডাচ গোলাপের চাষ করার জন্য গ্রিন হাউস বা পলি হাউস বাধ্যতামূলক। সেখানে স্থানীয় প্রজাতির মিনি পার্লের জন্য পলি আচ্ছাদন প্রয়োজন হয় না। তাতে খরচ কম হওয়ায় ফুলের দামও কম পড়ে। ডাচ গোলাপের শক্ত কাণ্ড হয়। জৈব সারে তৈরি মিনি পার্ল গোলাপ গাছগুলির ফুলের রং এবং কাণ্ড মোটামুটি ডাচ গোলাপের পরিপূরক হিসাবেই বাজার মাতিয়েছে। শুধু ভ্যালেন্টাইনস ডে-র জন্য ফুল ব্যবসায়ী থেকে কেক, পেস্ট্রি বা উপহারের দোকানিরাও ওই গোলাপের বরাত দিয়েছেন। এ ছাড়াও হাগ ডে, প্রপোজ ডে ছাড়াও সারা বছরের বিয়ে, জন্মদিন, অন্নপ্রাশন বা বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে স্থানীয় গোলাপের চাহিদা বেড়েছে। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে বিশেষ দিনে, উপহার, মিষ্টি, কেক বা চকোলেটের সঙ্গে গোলাপ দেওয়ার চল বেড়েছে।
দফতর সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ির বেরপবাড়ি, গজলডোবার মিলনপল্লি, টাকিমারি, খড়িবাড়ির বিন্নাবাড়ি, মেটেলির বাতাবাড়ি, ধূপগুড়ির ডাউকিমারি এবং বিধাননগরে কিছু জমি বাছাই গত কয়েক বছর ধরে গোলাপের চাষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে কমবেশি ১৫ বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ হয়। কিন্তু বিধাননগরেই খালি পলিহাউসের মাধ্যমে ডাচ গোলাপ বেশি চাষ হচ্ছে। কৃষি দফতরের সঙ্গে উদ্যান পালন দফতর এবং নার্বাড এক সঙ্গে কিছু কর্মশালাও করেছে।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম সহ কৃষি অধিকর্তা মেহফুজ আহমেদ বলেন, ‘‘ডাচ গোলাপের চাহিদা সব সময় রয়েছে। কিন্তু জৈব সারে তৈরি দেশি মিনি পার্ল বাজার ধরে নিয়েছে। তাতে চাষিরাও লাভবান হওয়ায় উৎসাহ পাচ্ছেন। আমরা ওদের নানা প্রযুক্তিগত সাহায্য থেকে বাজারজাত করার কাজেও সাহায্য করছি।’’
উত্তরবঙ্গে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, কোলাঘাট এবং মেদিনীপুর থেকে রোজ রাতে ট্রেনে ডাচ গোলাপ আসে। তেমনই, স্থানীয় মিনি পার্লও ভোরের মধ্যে বাজারে পৌঁছায়। মহাবীরস্থান উড়ালপুলের নিয়ে ভোরের অস্থায়ী ফুল বাজার থেকে সরাসরি ফুলের দোকানে পৌঁছয় গোলাপগুলি। একটি ডাচ গোলাপ কমবেশি ১০ টাকায় বিক্রি হয়। মিনি পার্ল সেখানে মেলে ৫ টাকায়। বিশেষ দিনগুলিতে ডাচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ১২-১৫ টাকা অবধি দাম ওঠে। খোলা বাজারে ৩০ টাকা অবধি বিক্রি হয়। সাদা, হলুদ বা গোলাপির তুলনায় লাল, কালচে লাল রঙের গোলাপের চাহিদা বেশি।
গজলডোবার সুজিত দাস, ডাউকিমারির অমর রায়, মালকিনির রানা বর্মন বা খড়িবাড়ির হরিপদ দাস, অংশু দাসদের মতো গোলাপ চাষিরা জানান, মোটামুটি ৫০০ বর্গমিটার জমিতে পলিহাউস দিয়ে চাষের জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। ভর্তুকি পেলেও ২-৪ হাজার টাকার বেশি লাভ হয় না। মিনি পার্ল চাষে এক বিঘাতে ১২ হাজার টাকা খরচ করে ৫ হাজার টাকা অবধি লাভ হয়।