ভাঙচুরের পরে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার দফতর। —নিজস্ব চিত্র।
জাতীয় সড়ক অবরোধের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির দফতরে চড়াও হয়ে যথেচ্ছ ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠল বাসিন্দাদের একাংশের বিরুদ্ধে। মালদহের চাঁচলের মালতিপুর বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির দফতরে সোমবার দুপুরে ওই ঘটনা ঘটে। চাঁচল-২ নম্বর ব্লকের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের একাংশের বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠেছে।
টানা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে এদিন মালতিপুরে বিদ্যুৎ দফতরের সামনে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা। বিক্ষোভ চলাকালীন আন্দোলনকারীদের একাংশ দফতরে চড়াও হয়ে ভাঙচুর শুরু করেন। তাদের বাধা দেওয়ায় দফতরের বেশ কয়েকজন কর্মীকে মারধর করে জামাকাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হেনস্থা করা হয় স্টেশন ম্যানেজারকেও। নথিপত্র ছিঁড়ে ফেলে চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার, টেলিফোন ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি ক্যাশ কাউন্টারে লুঠপাট চালানো হয় বলেও অভিযোগ। মারধরে আহত এক কর্মীকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বেধড়ক লাঠি চালায় বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ আটজন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে। চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লাঠিপেটা নয়, পুলিশ তাড়া করে বাসিন্দাদের হঠিয়ে দিয়েছে। সমস্যা যাই থাকুক সরকারি দফতরে ভাঙচুরের ঘটনা ঠিক নয়।’’
বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির মালতিপুরের স্টেশন ম্যানেজার অর্ক বসাক বলেন, ‘‘একদল বাসিন্দা আচমকাই চড়াও হয়ে দফতরে ভাঙচুর শুরু করে। কর্মীদেরও মারধর করে তাঁরা। ওরা কোন এলাকার তাও বুঝতে পারিনি। ওরা আলোচনার কোনও সুযোগও দেয়নি।’’
চাঁচল-২ ব্লকের চন্দ্রপাড়া ও জালালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পাঁচ মাস আগে বোরো ধানের মরসুম থেকেই সমস্যার শুরু বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁরা জানান, তখন দফতরের কর্তারা দ্রুত সমস্যা মিটবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচমাস বাদেও সমস্যা মেটা দূরের কথা, তা আরও তীব্রতর হয়েছে।
বাসিন্দারা জানান, ২৪ ঘন্টার মধ্যে দু’ঘণ্টাও বিদ্যুত থাকে না। বাকি সময় এতটাই লো-ভোল্টেজ থাকে যে তাতে পাম্পসেট না চলায় এলাকার বোরো ধানের চাষ মার খেতে বসেছে। পাশাপাশি আলোর অবাবে বিপাকে পড়েছে পড়ুয়ারাও।
রবিবারদিনও ওই এলাকায় বিদ্যুত ছিল না। এরপরেই বিদ্যুৎ দফতরে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য দু’টি প়ঞ্চায়েত এলাকায় মাইকে প্রচার করা হয়। এদিন ১৫- ২০ কিলোমিটার দূর থেকে বাসিন্দারা এসে প্রথমে দফতর লাগোয়া ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই সময়ই তাঁদের একাংশ দফতরে চড়াও হয়ে তাণ্ডব শুরু করেন বলে অভিযোগ। মেরে ক্যাশিয়ার তাপস ভট্টাচার্য়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
ওই এলাকারই বাসিন্দা জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সৈয়দ মানজারুল ইসলাম, প্রাক্তন বিদ্যুত কর্মাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ‘‘দফতরে ভাঙচুর বা কর্মীদের মারধর করা হয়ে থাকলে তা অন্যায়। কিন্তু দু’টি প়ঞ্চায়েতে ৬০ হাজার বাসিন্দার সমস্যার কথাটাও মাথায় রাখা জরুরি। অধিকাংশই কৃষিজীবী। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে বলেই তারা মরিয়া হয়ে আন্দোলনে নেমেছে।’’
মারধর, ভাঙচুর ঠিক নয় জানিয়ে মালতিপুরের আরএসপি বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সিও বলেন, ‘‘সমস্যার কথা ডিভিশনাল ম্যানেজারকে একাধিকবার বলা হলেও তিনি কোনও গুরুত্ব দেননি।’’ বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির উত্তর মালদহের ডিভিশনাল ম্যানেজার অমিয় আদক টেলিফোন ধরেননি। এলাকার সমস্যা ও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে এসএমএসেরও জবাব দেননি তিনি।