—প্রতীকী।
চা বাগানের শ্রমিকদের একাংশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রহস্যময় ভাবে কয়েক কোটি টাকা করে জমা পড়ছে। পরে তা তুলেও নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির বিধাননগর এলাকার সৈয়দাবাদ চা বাগানে এই ঘটনার কথা সম্প্রতি জানাজানি হয়েছে।
অভিযোগ, ওই চা বাগানের কুঠি লাইনের বাসিন্দা গনার মুণ্ডা, প্লাডিউস কুজুর, স্প্রিয়া কুজুরদের মতো অন্তত ৩০ জনের নামে নকশালবাড়ির একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি আমানত খোলান হয়। বাগানেরই একজন কর্মী গোপাল ছেত্রীই ওই আমানতগুলো খুলবেন বলে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তদন্তে জানা গিয়েছে, তিনি শ্রমিকদের বলেছিলেন, জিরো ব্যাল্যান্সে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সুবিধাও মিলবে। গোপালবাবু তৃণমূলের স্থানীয় নেতা বলেই পরিচিত। শ্রমিকেরা রাজি হলে গোপালবাবু এবং বাগানের কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূল নেতার বাড়িতে ব্যাঙ্কের লোকেরা গিয়ে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলান।
তখন শ্রমিকদের একটি করে ছবি, আধার পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি দিতে হয়। আমানতকারীদের প্রত্যেককে ওই দিনই ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’-এ পুরো চেকবইতে সই করিয়ে নেওয়া হয়। তবে ব্যাঙ্কের পাসবই, এটিএম কার্ড, চেক বুক কিছুই তাঁদের দেওয়া হয়নি। জানানো হয়, সে সব তাঁদের পরে দেওয়া হবে। কিন্তু মোবাইলে টাকা জমা ও তোলার মেসেজ আসছিল। কিছু দিন পর থেকেই তাঁরা দেখেন কারও অ্যাকাউন্টে চার লক্ষ, পাঁচ লক্ষ করে টাকা ঢুকছে। আবার তা তুলে নেওয়া হচ্ছে। গনার, দেউনিশিয়ারা বলেন, ‘‘গোপালবাবু জানিয়েছিলেন, ও সব কিছু নয়। সময় মতো ব্যাঙ্কের পাসবই, বই চেক সবই আমরা পাব। কিন্তু কোথা থেকে অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকা ঢুকছে বুঝতে পারছি না।’’ শ্রমিকেরা বারবার জিজ্ঞাসা করছে দেখে সম্প্রতি আমানতকারীদের পাঁচশো টাকা করে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। কয়েক জনের পরামর্শে বৃহস্পতিবার তাঁরা দল বেঁধে নকশালবাড়িতে ব্যাঙ্কের শাখায় যান। ব্যাঙ্কের আধিকারিক (অপারেশন বিভাগের প্রধান) বিশ্ব ঘোষকে বিস্তারিত জানান।
বিশ্ববাবু বলেন, ‘‘ওই শ্রমিকের বিষয়টি জানিয়েছেন। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ছুটিতে। ১২ জুলাই ফিরবেন। ব্যাঙ্কের তরফে শ্রমিকদের কাছে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদেরও ওই দিন ডাকা হয়েছে।’’ কিন্ত এ ধরনের ঘটনার পর ব্যাঙ্কের তরফে বা আমানতকারীরা এখনও পুলিশে অভিযোগ করেননি কেন? বিষয়টি জানতে পেরে শ্রমিকদের ডাকেন আইএনটিইউসি নেতা অলক চক্রবর্তী। তিনি তাঁদের পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন। অলকবাবু বলেন, ‘‘বড় কোনও চক্র কাজ করছে। ব্যাঙ্কের একাংশের সঙ্গে শাসকদলের স্থানীয় লোকজন জড়িত বলে শ্রমিকেরাই জানিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত হওয়া দরকার।’’ আমানতকারীরা জানান, তাঁরা উদ্বেগে রয়েছেন। দ্রুত পুলিশে অভিযোগ জানাবেন। গোপালবাবু জানান, ‘‘আমার স্ত্রীর নামেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করেছি। তার ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে।’’ বিধাননগর এলাকার তৃণমূল নেতা তথা শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের বিরোধী দলনেতা কাজল ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টি আমিও শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।’’