University of North Bengal

দু’দফায় সাত ঘণ্টা ঘেরাও উপাচার্য

এ দিন সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের এক তলায়, পরে, দোতলায় সভাকক্ষের বাইরে বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু করে ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৭
Share:

বিক্ষোভ: উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: স্বরূপ সরকার।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্ম সমিতির বৈঠক করতে এসে সোমবার দু’দফা মিলিয়ে প্রায় সাত ঘন্টা দফতরে ঘেরাও হয়ে রইলেন উপাচার্য সিএম রবীন্দ্রন। ১৬ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি নিয়েই মূলত এ দিন অস্থায়ী কর্মীদের ওই ঘোরাও আন্দোলন। বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি কর্ম সমিতির বৈঠকের আলোচনাসূচির (অ্যাজেন্ডা) মধ্যে রাখা হবে, এমনই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি আন্দোলনকারীদের। এ দিন সে বৈঠক বাতিল হলেও, দাবির বিষয়টি মানতে হবে বলে বেলা ১২টা নাগাদ উপাচার্যকে ঘেরাও করেন ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষা বন্ধু সমিতি’র সদস্যেরা। সঙ্গে ছিলেন অস্থায়ী শিক্ষকেরাও। ৬টা পর্যন্ত এ ভাবে আটকে থাকার পরে, উপাচার্য তাঁদের ডেকে দফতরের পাশে সভাকক্ষে বৈঠক করেন। দেড় ঘন্টার বেশি বৈঠক চলে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়, অস্থায়ী কর্মীদের ১০ শতাংশ বেতন বাড়ানো হবে। তার পরে ফের উপাচার্যকে ঘেরাও করেন অস্থায়ী শিক্ষকেরা। তাঁদের ঘেরাও ওঠে রাত সাড়ে ৮টায়।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বপন রক্ষিত বলেন, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যায় উচ্চ শিক্ষা দফতরের ই-মেল পেয়েছিলাম, কর্মসমিতির বৈঠক করা যাবে না বলে। শনি-রবিবার ছুটি ছিল। এ দিন উপাচার্যকে লিখিত ভাবে তা জানালে তিনি বলেন, রাজ্যের সম্মতি না থাকায় বৈঠক হবে না।’’ যদিও কর্ম সমিতির ১৭ জন সদস্যের মধ্যে এ দিন উপাচার্য, আচার্য তথা রাজ্যপালের প্রতিনিধি, একটি বিভাগের প্রধান ছাড়া, আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাতে ‘কোরাম’ও সম্ভব হয়নি। রাজ্য এবং রাজ্যপাল ‘সংঘাতে’ প্রশাসনিক কাজে সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদ ছাড়তে চেয়ে উপাচার্যের কাছে এ দিনই আর্জি জানিয়েছেন স্বপন। যদিও তা গৃহীত হয়নি।

এ দিন সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের এক তলায়, পরে, দোতলায় সভাকক্ষের বাইরে বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু করে ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি’। উচ্চ শিক্ষা দফতর থেকে বৈঠক করতে নিষেধ করা হলেও, তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলা হয়। অস্থায়ী কর্মীদের ১৬ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি ওঠে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা মোতায়েন ছিলেন ক্যাম্পাসে।

Advertisement

আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করলে, তাঁদের জানানো হয়, কর্ম সমিতির বৈঠক হচ্ছে না। এর পরে, উপাচার্য সিএম রবীন্দ্রন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে নিয়ে দফতর থেকে বেরোতে চাইলে, আন্দোলনকারীরা রাস্তা আটকে, করিডরে বসে পড়েন। উপাচার্য দফতরে ফিরে যান। বেলা ২টো নাগাদ আচার্যের প্রতিনিধি তথা ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল ধীরজকুমার ত্রিবেদী ওই দফতর থেকে বেরোতে চাইলে, একই ভাবে বাধা দেন আন্দোলনকারীরা। জানানো হয়, বেতন বৃদ্ধির দাবি মানা না হলে, তাঁরা কাউকে যেতে দেবেন না। পরে, ধীরজের ফেরার উড়ান রয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের উপাচার্য দফতরে ডেকে অনুরোধ করলে, আচার্য-প্রতিনিধিকে যেতে দেন তাঁরা। উপাচার্যকে অবশ্য দফতরে আটকে আন্দোলন চলতে থাকে। পরে, উপাচার্য আন্দোলনকারীদের ডেকে সভাকক্ষে বৈঠক করেন। উপাচার্য সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেননি।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষা বন্ধু সমিতি’র আহ্বায়ক রঞ্জিত রায় বলেন, ‘‘আলোচনায় ঠিক হয়েছে, ১০ শতাংশ বর্ধিত ডিএ (ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স) মার্চ মাস থেকে পাবেন কর্মীরা। বাকি তিন শতাংশ করে দু’বছরের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি পরবর্তী কর্ম সমিতির বৈঠকে ঠিক হবে।’’ এর পরে পৌনে ৮টা নাগাদ উপাচার্য কনফারেন্স হল থেকে দফতরে যান। সেখানে তাঁর দফতরের বাইরে বসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নীতি মোতাবেক বেতনের দাবিতে অবস্থান চালাতে থাকেন সংগঠনের সদস্য অস্থায়ী শিক্ষকেরা। ফের শুরু হয় আলোচনা।

রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত উপাচার্যের দফতরে আলোচনার পরে, অস্থায়ী শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি মানা হয়। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বলেন, ‘‘অস্থায়ী কর্মীদের ১০ শতাংশ বেতন বাড়ছে। তিন শতাংশ করে ইনক্রিমেন্ট পরবর্তী কর্ম সমিতির বৈঠকে ঠিক হবে। অস্থায়ী শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নীতি মোতাবেক বেসিক স্যালারি পাবেন।’’

নিজের পদত্যাগের আবেদন প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দাবি, ‘‘উচ্চ শিক্ষা দফতর এবং আচার্যের দফতরের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব দেখা যাচ্ছে। তা প্রতিফলিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্মে। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত শারীরিক সমস্যা রয়েছে। তাই পদ ছাড়তে চেয়ে চিঠি দিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন