ছিটমহলের জীবন নিয়ে নাটক পোয়াতুরকুঠিতে

নিজেদের জীবনের যন্ত্রণার ছবি নিয়ে নাটক করবেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। আগামী ৫ অগস্ট দিনহাটার পোয়াতুরকুঠিতে বিজয় উৎসব পালন করবেন তাঁরা। ওই উৎসবেই এক ঘণ্টার একটি নাটক মঞ্চস্থ হবে। তার মহড়াও চলছে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

দিনহাটা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:২৬
Share:

নিজেদের জীবনের যন্ত্রণার ছবি নিয়ে নাটক করবেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। আগামী ৫ অগস্ট দিনহাটার পোয়াতুরকুঠিতে বিজয় উৎসব পালন করবেন তাঁরা। ওই উৎসবেই এক ঘণ্টার একটি নাটক মঞ্চস্থ হবে। তার মহড়াও চলছে। নাটকে যেমন থাকবেন ছিটমহলের মানুষ, সে রকমই তাঁদের ঘিরে যে মানুষেরা রয়েছেন, তাঁদেরও চরিত্র থাকবে সেখানে। পুলিশ, মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা, পঞ্চায়েত সদস্য, রোগী থেকে শুরু করে চিকিৎসকের চরিত্র থাকবে ওই নাটকে। থাকবে আন্দোলনের কথাও। নাটকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ছিটমহলের মুক্তি’। ছিটমহলের ২৫ জন মিলে নাটক মঞ্চস্থ করবেন।

Advertisement

পোয়াতুর কুঠির বাসিন্দা ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির সঙ্গে যুক্ত সাদ্দাম মিয়াঁ বলেন, “নাটকের মধ্যে দিয়ে এবার নিজেদের জীবনের কথা সারা দেশের সামনে তুলে ধরতে চাই। ৬৮ বছর ছিটমহলের মানুষদের চরম কষ্ট ও বঞ্চনার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হয়েছে। নাটকে ওই জীবনযাত্রার প্রতিটি মুহূর্ত তুলে ধরতে চাই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এক ঘন্টায় সবটা সম্ভব হবে না। তবে ওই সময়ের মধ্যে অনেকটা সম্ভব হবে।” ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “মানুষ গান, নাটক, সাহিত্যের মধ্যে দিয়েই তার জীবনের কথা তুলে ধরে। ছিটমহলের বাসিন্দারাই তাঁদের অনেক কষ্টের জীবনযাপন নিয়ে গান বেঁধেছেন। এবারে নাটকের মধ্যে দিয়ে তাঁরা তা উপস্থাপন করতে চান। যা শুধু স্মরণীয় হয়ে থাকবে না। ইতিহাস হয়েও থাকবে।”

৩১ জুলাই রাত ১২টায় বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের মধ্যে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ওই দিন মধ্য মশালডাঙাতে মধ্য রাত পর্যন্ত ওই ছিটমহলে স্বাধীনতা দিবস পালন হয়। মঞ্চের সাধারণ মানুষের একেকটি ঘটনা তুলে ধরা হয়। ভুক্তভোগীরা নিজেদের কথা নিজেরাই তুলে ধরেন। ওই এলাকার এক মহিলা তাঁর রচিত গানও পরিবেশন করেন। এবারে বিজয় উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। দীর্ঘ আন্দোলনের পর যে স্বাধীনতা তাঁরা পেলেন, তাতে তাঁদের বিজয় হয়েছে বলেই ধরে নিচ্ছেন বাসিন্দারা। ওইদিন সন্ধ্যা থেকেই পোয়াতুর কুঠিতে উৎসবের আসর বসবে। ওই এলাকার ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে সকলেই নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। লোকসঙ্গীতের আসরও বসবে। এর পরেই এক ঘণ্টার নাটকটি মঞ্চস্থ করা হবে।

Advertisement

ওই নাটকের জন্য এখন থেকেই গ্রামের মানুষের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। রিহার্সাল দেখতে ভিড়ও জমে যাচ্ছে। নাটকে গ্রামের মাতব্বরের ভূমিকায় অংশগ্রহণ করবেন মনিরুল ইসলাম, রোগীর ভূমিকায় কয়সার আলি। তাঁরা বলেন, “জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে কেটেছে আমাদের। একটি সাফল্য আদায় হলে মনে হত জীবনে সব পেলাম। কারণ, কষ্টের তো কোনও শেষ ছিল। সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। সে সব কথাই তুলে ধরব নাটকে। পাকা অভিনেতা নই আমরা। তবে আমাদের জীবন নিয়ে আমরা ভাল অভিনয়ই করতে পারব বলে আশা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন