উল্লাস: রাজেনবাবুকে কাঁধে তুলে হুল্লোড় এলাকাবাসীর। নিজস্ব চিত্র
গতকালও তাঁর পরিচিতি ছিল দলের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে। এলাকার বাইরে কেউ তাঁর নামটুকু পর্যন্ত জানতেন না। আর আজ তিনিই ‘নায়ক’। জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের তাঁতিপাড়ার বাসিন্দা পেশায় কৃষক রাজেন রায় সম্পর্কে এমনটাই বলছেন এলাকার লোকজন।
বুধবার সকাল থেকে এলাকায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের গাড়ির লাইন পড়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের মুখে একটাই কথা, রাজেনবাবু কাজের মত একটা কাজ করেছেন বটে। এ বার গ্রামের সমস্যা মেটার আশা করছেন তাঁরা। রাজেনবাবুকে কাঁধে তুলে নিয়ে একচোট নাচানাচিও করে নিয়েছেন সকলে।
মঙ্গলবার পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ছুট লাগিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির দিকে। একপাতার একটা চিঠি তিনি তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। ওই একটা চিঠিই তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। ছুটে এসেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। গতকাল চিঠি দেওয়ার পরেই রাজেন রায় আশ্বস্ত গলায় জানিয়েছিলেন, ‘‘দিদি চিঠি নিয়েছেন, এ বার কিছু হবেই।’’
সেই চিঠিতে পাহাড়পুর এলাকার সমস্যা তুলে ধরেছিলেন তিনি। জলপাইগুড়ি শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে পাহাড়পুর গ্রাম। সেখানে শুধু ‘নেই’ রাজ্য। পরিস্রুত পানীয় জল নেই। সজলধারা প্রকল্প সেই কাজ চালু হলেও মাঝপথে থমকে গিয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থাও তথৈবচ। হাতে গোনা কয়েকটা জায়গায় নর্দমা আছে, কালভার্টও আছে। কিন্তু তা ঠিকঠাক না থাকার কারণে জল আটকে থাকে অধিকাংশ জায়গাতেই।
বুধবার সকাল ১০টা থেকেই পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সামনে গাড়ির লাইন পড়ে যায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের। এসেছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অম্লানজ্যোতি সাহা, বিডিও (সদর) তাপসী সাহা সহ আরও অনেকে। আসেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাস্তুকারও।
রাজেনবাবুকে লোক পাঠিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে আনা হয় গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে। তাঁর কাছ থেকে সমস্যার কথা শুনে নেন আধিকারিকরা। এলাকার অনেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন পঞ্চায়েত অফিসে। সেই ভিড় থেকেও উড়ে আসছিল নানা না পাওয়ার অভিযোগ। কেউ একশো দিনের কাজ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন, কেউ আবাস যোজনার ঘর না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। যদিও এসব অভিযোগ মানতে চাননি পঞ্চায়েত প্রধান রাহেনা খাতুন। বিগত পাঁচবছর ধরে তৃণমূলের দখলেই রয়েছে এই পঞ্চায়েত। তাই সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কাজ না হওয়ার অভিযোগ যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন প্রধান।
তাঁর দাবি, এতদিন পর্যন্ত তাঁর কাছে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর পিছনে দলেরই একটা অংশের ‘উস্কানি’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকালের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার পরে ডিআইবি’র তরফে রাজেন বাবুর সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার খবর নেই। পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বা কোতোয়ালি থানার আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকার ফোন ধরেননি।