স্বপ্নাদেশ, স্নান করিয়ে, সিঁদুর পরিয়ে গোখরোর পুজো হল বাড়িতে!

চন্দ্রেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘প্রায় ২০ বছর ধরে বাড়িতে মনসা পুজো করে আসছি। আমার স্ত্রীই স্বপ্নাদেশ পেয়ে সাপটিকে বাড়িতে নিয়ে আসতে বলেছিলেন। ওই সাপটি আমাদের ‘মা’ বলে দাবি করেন তিনি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৫২
Share:

প্রতীকী ছবি।

জ্যান্ত বিষধর সাপ। ফণা তুলছে যখন তখন। দু’সপ্তাহ ধরে নিত্যানন্দপুর গ্রামে মমতা কর্মকারের বাড়িতে সেই বিষধর সাপকে পুজো করা হচ্ছে। সাপ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই করে সাপটিকে অশেষ যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

সাপ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন বহু লোক। গ্রামবাসীদের বাধার মুখে পড়ে সাপটিকে উদ্ধারে গিয়েও ফিরে আসতে হয় পুলিশ, বন দফতরের কর্মীদের। বনবিভাগের মালদহের আধিকারিক কৌশিক সরকার বলেন, “সাপটি উদ্ধারে গেলে বাধা দেওয়া হয়। বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনে ওই পরিবারকে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হচ্ছে। তারপরেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মালদহ শহর থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুরাতন মালদহের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নিত্যানন্দপুর গ্রাম। পৌষ সংক্রান্তির দিন ওই গ্রামে একটি সাপ ধরা হয়। ওই সাপটিকে গ্রামেরই একটি বাগানে রেখে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারপরেই দাবি, ‘স্বপ্নাদেশ’ পান গ্রামেরই মমতা কর্মকার নামে এক মহিলা। তাঁর কথা মতোই সাপটিকে বাগান থেকে নিয়ে আসা হয়। তারপর থেকেই মমতাদেবীর বাড়ির মনসা মন্দিরে সাপটিকে রেখে শুরু হয় পুজো। সাপের মাথায় দেওয়া হয়েছে সিঁদুর। পরিবারের দাবি, সাপকে স্নান করানো হচ্ছে। এ ছাড়া নিয়মিত দুধ, খই খেতে দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

শহর থেকে মাত্র ১০ কিমি দূরে নিত্যানন্দপুরে পুজো করা হচ্ছে বিষধর সাপকে। —নিজস্ব চিত্র।

মমতাদেবীর স্বামী চন্দ্রেশ্বর কর্মকার শ্রমিক। তাঁদের চার ছেলে মেয়ের মধ্যে তিন মেয়ে পড়াশোনা করে। আর ছেলে একটি পার্লারে কাজ করেন। চন্দ্রেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘প্রায় ২০ বছর ধরে বাড়িতে মনসা পুজো করে আসছি। আমার স্ত্রীই স্বপ্নাদেশ পেয়ে সাপটিকে বাড়িতে নিয়ে আসতে বলেছিলেন। ওই সাপটি আমাদের ‘মা’ বলে দাবি করেন তিনি।’’

ওই গ্রামেই একটি প্রাথমিক এবং জুনিয়ার হাই স্কুল রয়েছে। এ ছাড়া ওই গ্রাম থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে রয়েছে সাহাপুর হাই স্কুল। এ ছাড়া গ্রামে শিক্ষিতের হার প্রায় ৭০ শতাংশ। তারপরেও গ্রামের মানুষেরা বিষধর সাপকে দেবতা হিসেবে পুজো করায় উদ্বিগ্ন শিক্ষা মহল থেকে শুরু করে বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরা। সাহাপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিশোর বণিক বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে ঘটনাটি শুনেছি। ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক। গ্রামের মানুষকে আমরাও গিয়ে বোঝাব।” বিজ্ঞান মঞ্চের মালদহ শাখার সম্পাদক সুনীল দাস বলেন, “গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে আমরা সেখানে যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন