দু’দেশেই ভোট, প্রচারে তাতছে সীমান্তের গ্রাম

দেশের প্রচারকে ছাপিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ভোট প্রচার। অন্তত ভোটের প্রচারে মাইক ব্যবহারের নিরিখে বাংলাদেশে সীমান্ত লাগোয়া কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম দরিবস ও জারিধরলার বাসিন্দাদের অনেকের তেমনই উপলব্ধি। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দু’পারেই চড়ছে ভোটের পারদ। একদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। অন্যদিকে বাংলাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের ভোট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দিনহাটা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

দেশের প্রচারকে ছাপিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ভোট প্রচার। অন্তত ভোটের প্রচারে মাইক ব্যবহারের নিরিখে বাংলাদেশে সীমান্ত লাগোয়া কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম দরিবস ও জারিধরলার বাসিন্দাদের অনেকের তেমনই উপলব্ধি।

Advertisement

এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দু’পারেই চড়ছে ভোটের পারদ। একদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। অন্যদিকে বাংলাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের ভোট। সকাল থেকে দিনভর মাইকে প্রচারে সরগরম হয়ে উঠছে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা। ওই মাইক প্রচারের শব্দেই ভোটের আঁচ বুঝছেন সীমান্ত গ্রাম দু’টির বাসিন্দারা। ওপার বাংলার মোগলহাট থেকে মাইকের শব্দ ভেসে আসছে বেশ জোরাল ভাবেই।

অথচ নদী বিচ্ছিন্ন ওই গ্রামে এ রাজ্যের কোন দলই মাইকে প্রচার চালায়নি। প্রার্থীরা গ্রাম ঘুরেছেন। বাড়ি বাড়িও গিয়েছেন অনেকে। তবে মাইক ব্যবহার সেভাবে এখনও হয়নি। একটিমাত্র সভায় সাউন্ডবক্স ছিল। ধারাবাহিক মিটিং, মিছিলও নেই। বরং দেশের ভোট প্রচারকে ছাপিয়ে এলাকা তাতছে বাংলাদেশের ভোট প্রচারে। কানে যাচ্ছে দাবি-পাল্টা দাবির লড়াই।

Advertisement

কিন্তু জেলার সর্বত্র পাড়ায় পাড়ায় যখন মাইক মিটিংয়ের ব্যস্ততা। পুলিশ-প্রশাসনের দরবারে সভার অনুমতি নেওয়ার হিড়িক। সেখানে দরিবস, জারিধরলার মত সীমান্ত এলাকায় কেন মাইক মিটিংয়ে এমন অনীহা ? এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনহাটার গীতালদহ বাজার এলাকা থেকে প্রায় তিন কিমি দূরে সিঙিমারি নদী। ওই নদী পেরিয়ে দুই কিমি বালুচর পেরিয়ে দরিবস গ্রাম। জারিধরলা পৌঁছতে পেরোতে হয় আরও একটি নদী। রাস্তা, যানবাহন কিছুই নেই। ফলে মহকুমা সদর দিনহাটা কিংবা গীতালদহ থেকেও সেভাবে মাইক নিয়ে সভা আয়োজনের হ্যাপা পোহাতে চান না কোন দলের নেতাকর্মীরা। দরিবসের বাসিন্দা গিরীশ বর্মন বলেন, “ এখনও আমাদের এখানকার কোন দল মাইকে সভা করেনি। প্রার্থীরা এসে এলাকায় মুখে মুখে প্রচার করেছেন। ভোটের তাপটা সেভাবে বুঝতামই না যদি বাংলাদেশের মোগলহাটের মাইক প্রচারের শব্দে দিনভর কান ঝালাপালা হত।” এক যুবক আসাদুল হক বলেন, “ বাংলাদেশের ভোটের স্লোগানই দিনভর কানে বাজছে।” কয়েকজন রসিকতার সুরে বলেন, চাকা, কলম, লাঙ্গল নৌকা, ধানের শিসের মত নানা প্রতীকগুলি যেন এখানকার বাসিন্দাদের অনেকের কাছে বেশি চেনা হয়ে উঠেছে। রোজ শুনলে যা হয় আর কী।

যুযুধান রাজনৈতিক শিবিরের প্রার্থীরাও ওই এলাকায় মাইক প্রচারে সমস্যার কথা মানছেন। সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ রায় বসুনীয়া বলেন, “বাম জমানায় ওই এলাকায় কোনও কাজ হয়নি। বিদায়ী কংগ্রেস বিধায়কও কিছু করেননি। ফলে সমস্যা রয়েছে। মাইক নিয়ে গিয়ে সভা করা হয়নি। একটি কর্মী সম্মেলনে অনেক কষ্টে সাউন্ডবক্স নেওয়া হয়।” বাম গণতান্ত্রিক জোটের কংগ্রেস প্রার্থী বিদায়ী বিধায়ক কেশব রায় বলেন, “তৃণমূল সরকারের নানা মহলে ওই এলাকার উন্নয়নে দরবার করে লাভ হয়নি। যোগাযোগের মত সমস্যা মেটেনি। মাইক নিয়ে সভা, মিছিল সম্ভব নয়। বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি।” বিজেপি প্রার্থী ভবেন চন্দ্র রায় বলেন, “বাম, তৃণমূল, কংগ্রেস কেউ কিছু করেনি। মানুষ হেঁটে যেতে পারে না। মাইক নিয়ে যাবে কী করে?”

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েক দফায় বাংলাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। ৭ মে পরের দফার ভোট। শেষ হবে জুন মাসে। অন্যদিকে কোচবিহারে রাজ্য বিধানসভার শেষ দফার ভোট নেওয়া হবে ৫ মে। ফলে দুই বাংলাতেই প্রস্তুতি তুঙ্গে। কোচবিহারের বাসিন্দা প্রাবন্ধিক ও গবেষক দেবব্রত চাকি জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভোট এখানকার পঞ্চায়েত ভোটের প্রায় সমতুল্য। ফলে প্রচারে উৎসাহ, উন্মাদনা বেশি থাকে। দরিবস, জারিধরলা শুধু নয়, জেলার শীতলখুচি-হাতিবান্ধা, কুচলিবাড়ি-নয়া বাংলাবাড়ি, শুকারুরকুঠি-ফুলবাড়ি সীমান্তও দুপ্রচারে সরগরম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন