পুলিশ প্রহরায় মনোনয়ন পত্র জমা দিতে চলেছেন প্রার্থীরা।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারবার সংযত হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের তৃণমূলের অন্যতম নেতা তথা পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাতে কিছুটা হলেও গোলমাল কমেছে। তবে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির অভিযোগ কমেনি। মঙ্গলবারও শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক কলেজে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। কোথাও ছিঁড়ে ফেলা, কোথাও কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ। আবার কোথাও তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যেই ঠেলাঠেলির অভিযোগ। মঙ্গলবার কয়েকটি কলেজের ছবি কেমন ছিল তা দেখে নেওয়া যাক।
• নকশালবাড়ি
এসএফআইয়ের ৫ প্রার্থীকে মারধর করে মনোনয়ন পত্র কেড়ে ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নকশালবাড়ি কলেজে। এসএফআইযের দাবি, তাদের তিন ছাত্রী মাথায় চোট পেলেও মনোনয়ন জমা হয়েছে। এক প্রার্থীকে ক্যাম্পাসের বাইরে টিএমসিপির লোকজন বেধড়ক পিটিয়েছে। টিএমসিপির জেলা সভাপতি নির্ণয় রায় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কেউ মারধর বা গোলমালে যুক্ত নয়।’’ কলেজে ২২টি আসনে ৪৬ টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, ‘‘আমি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের বলেছি মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী কেউই চান না, কোনও রকম রক্তপাত ঘটুক। তা সে যে রাজনৈতিক দলই হোক। শাসক পক্ষের বলে আমাদের ছাত্র সংঘঠনের বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে। আমি ছাত্র নেতাদের সঙ্গে কথা বলব।’’
শিলিগুড়ি কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পথে ছাত্রছাত্রীরা।
• শিলিগুড়ি
শিলিগুড়ি কলেজে মনোনয়ন জমা করার কাউন্টারে ঢুকে এ দিন এসএফআই প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বেলা আড়াইটে নাগাদ এসএফআইয়ের পাঁচ জন মনোনয়ন জমা করতে কলেজে গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার পরে তাঁদের ঘিরে হাতাহাতি করতে থাকে টিএমসিপির পড়ুয়ারা। কাউন্টারের কাছে গেলে ঢোকার রাস্তা আটকে দেয় টিএমসিপির পড়ুয়ারা। এরপর পুলিশ গিয়ে তাঁদের কোনও রকমে কাউন্টারের সামনে নিয়ে যান। মনোনয়ন জমা করতে গেলে কাউন্টার থেকে কেড়ে ছেকি শেরপা এবং সোনম শেরপার মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। দর্শনের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছেকির অভিযোগ, অভিযুক্ত ছাত্র তাঁর ক্লাসেই পড়েন। এসএমএস পাঠিয়ে তাকে না দাঁড়াতে হুমকি দিয়েছিলেন। এ দিন মনোনয়নপত্র জমা করতে গেলে কেড়ে নেয়। কলেজের ক্যাম্পাসের ভিতরে টিএমসিপির ছাত্রছাত্রীরা দীর্ঘ সময় ধরে জড়ো হয়ে থাকলেও তাদের সরানো হল না কেন? কর্তৃপক্ষের দাবি, মনোনয়ন জমা করার নাম করেই ওই ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসে ঢুকেছে। সকলেই কলেজ পড়ুয়া। অধ্যক্ষ সুজিত ঘোষ বলেন, ‘‘কাউন্টারে জমা করার সময় দুই পড়ুয়ার মনোনয়নপত্র কেড়ে ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ পেয়েছি। তার পরই তাদের আবার মনোনয়ন দেওয়ার এবং জমা করার ব্যবস্থা করা হয়।’’ এদিন ছাত্র পরিষদও মনোনয়ন পত্র জমা করেছে। শিলিগুড়ি কলেজে ৫৪টি আসনের মধ্যে এসএফআই মাত্র ৫টি জমা করেছে বলে দাবি। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌরভ দাস বলেন, ‘‘১২টি মনোনয়ন পত্র তুলেছিলাম। ৫টি জমা করতে পেরেছি।’’ ছাত্র পরিষদের কলেজে ইউনিটের সভাপতি সন্দীপ রবিদাসের দাবি, তাঁরা ১৫টি মনোনয়ন জমা করেছেন। টিএমসিপির বিভিন্ন গোষ্ঠী মনোনয়নপত্র তুলেছে। সব মিলিয়ে ১৪৩টি মনোনয়ন পত্র তোলা হয়। জমা পড়েছে ১২২টি।
• জলপাইগুড়ি
২০ জানুয়ারি কলেজ নির্বাচনের দিন জলপাইগুড়ি শহরের তিন কলেজে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিল পুলিশ৷ র্যাফ, সশস্ত্র পুলিশের পাশাপাশি তিন কলেজের নিরাপত্তার জন্য জেলার বিভিন্ন থানা থেকে বাছাই করা পুলিশ অফিসারদের মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এ দিকে গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে টিএমসিপি নেতা সৌরভ সরকারকে জখম করার অভিযোগে এ দিন একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ জলপাইগুড়ি শহরের তিনটি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে সরগরম জলপাইগুড়ির ছাত্র রাজনীতি৷ ধৃত চন্দ্রশেখর সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে দাবি অভিজিৎ সিংহের গোষ্ঠীর৷ যদিও তা মানতে চাননি সৈকত৷ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘চন্দ্রশেখর তৃণমূল কর্মী৷ তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কেউ নন।
মনোনয়ন পত্র ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ এক প্রার্থীর।
• ইসলামপুর
ইসলামপুর কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে ৪৪টি আসনের জন্য ৮৮ টি ফর্ম তোলা হয়। জমা দেওয়ার সময় দেখা গেল ৫০টি ফর্ম জমা পড়েছে। ফলে তৃণমূলের নিজেদের মধ্যেই আলোড়ন পড়ে। এলাকার বিধায়ক কানাইয়ালাল অগ্রবালের অনুগামী কৌশিক গুন বলেন, ‘‘আমরা ঠিকঠাকই মনোনয়ন জমা করেছি। তবে ওদের পক্ষ থেকে বেশি হয়েছে। যা করবেন বিধায়ক হামিদুল রহমান করবেন।’’ টিএমসিপির ইসলামপুর টাউনসভা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী করিম চৌধুরী অনুগামী রাহুল সরকার বলেন, ‘‘ভুল অন্যরা করেছে। বিষয়টি দেখছি কী করে মেটানো যায়।’’ হামিদুল জানান, একটি ভুল বুঝাবুঝি থেকে ওই সমস্যা তৈরি হয়েছে। অধ্যক্ষ গৌর ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
• আলিপুরদুয়ার
আলিপুরদুয়ার জেলার সাতটি কলেজের বীরপাড়া ছাড়া আর কোনওটিতেই বিরোধীরা মনোনয়ন তুলতে পারেনি বলে অভিযোগ। তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী দাবি করেন, আলিপুরদুয়ার কলেজ, মহিলা কলেজ, ফালাকাটা কলেজ, কামাক্ষ্যাগুড়ি কলেজ, বিবেকানন্দ কলেজ ও জয়গাঁ কলেজে বিরোধী ছাত্রদের দেখা পাওয়া যায়নি। এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি দীপক বর্মনের অভিযোগ, টিএমসিপির দাপটেই তাঁরা চেষ্টা করেও ফর্ম তুলতে পারেননি।
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।