বাগডোগরায় বিকোকোই ব্যাঙাইচুকে বরণ। নিজস্ব চিত্র।
জাতীয় দলের রেকর্ড সৃষ্টিকারী অধিনায়ক তথা তারকা ফুটবলার সুনীল ছেত্রী রয়েছেন দলে। তা সত্বেও কালিম্পংয়ের জামাই হিসেবে ঘরের ছেলে বিকোকেই ব্যাঙাইচুকে আলাদা করে বরণ করে নিল ‘বিকোকোই ব্যাঙাইচু ফ্যান ক্লাব।’
শুক্রবার শিলিগুড়িতে বাগডোগরা বিমানবন্দরের লাউঞ্জ থেকে বেঙ্গালুরু এফসি দল বেরিয়ে আসতেই হুড়োহুড়ি পড়ে গেল ফ্যান ক্লাবের সদস্য থেকে উপস্থিত সাধারণ যাত্রী ও তাঁদের নিতে আসা লোকজনের মধ্যে। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের রাজ্যে এমন আতিথেয়তা পেয়ে প্রথমে হতভম্ব ও পরে আপ্লুত হয়ে পড়লেন বিকোকেই, সুনীল থেকে বেঙ্গালুরুর সমস্ত ফুটবলার ও সাপোর্টিং স্টাফরাও।
এ বারের আই-লিগ সেরাদের জন্য ছোট্ট পরিসরে রাখা হয়েছিল বিনোদনের ব্যবস্থাও। পাহাড়ের বিখ্যাত লায়ন ডান্স, স্কুল ছাত্রীদের প্যারেডের মাধ্যমে তাঁদের বরণ করে নেন ফ্যানেরা। ঘরের ছেলের পাশাপাশি অটোগ্রাফ ও সেলফির আব্দার জানান সুনীলেরও। সবার আব্দারই মেটানোর চেষ্টা করেছেন তারকারা।
তারকাদের স্পর্শ পেতে ভিড় এমন জমে যায় যে, বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার রাস্তায় যানজট তৈরি হয়ে যায়। আপ্লুত বিকোকেই জানান, এমন উন্মাদনা ও সংবর্ধনা পাবেন বাংলায় তা ভাবতেই পারেননি। তিনি অবাক হয়ে বলেন, ‘‘আমরা তো বাংলার দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া আটকে দিয়েছি। তারপরেও এত আবেগ ভাবা যায় না। এমন বাংলাতেই সম্ভব।’’ খানিকটা অপ্রত্যাশিত হলেও সুনীল ছেত্রী অবশ্য বাংলার আবেগ সম্পর্কে পরিচিত। তিনি দীর্ঘদিন মোহনবাগানে খেলেছেন। তাই তাঁর মতে, ‘‘এখানকার মানুষ ফুটবল বোঝে। খেলা ভালবাসে। গুণীদের সম্মান জানাতে জানে। তাই এখানে ফুটবল খেলা, ও এখানকার দলকে হারানো সব সময় বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগায়।’’
বিকোকেই ফ্যান ক্লাবের বেশিরভাগ সদস্যই কালিম্পংয়ের হলেও, কিছু কার্শিয়াং ও শিলিগুড়ির শালুগাড়া এলাকার সমর্থকরাও রয়েছেন। ক্লাবের মূল উদ্যোক্তা বিকোকেইয়ের শাশুড়ি সমাজকর্মী জ্যোতি কারকি। তিনিই গোটা দলটিকে পরিচালনা করে নিয়ে এসেছেন বাগডোগরায়। সকাল ১০ টার মধ্যেই বিমানবন্দরের বাইরে জমায়েত হন কয়েকশো মানুষ। কালিম্পংয়ের শের-এ ফুটবল ক্লাব, কালিম্পং গার্লস সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল, বিকোকেই এর শিশুপুত্র সহ স্ত্রী এলিনো ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়রা। স্ত্রী এলিনো বিমান নেমেছে শুনেই বারবার ফোন করছিলেন স্বামীকে। কিন্তু তিনি দলের সঙ্গে রয়েছেন, আলাদা করে বাইরে বের হওয়া সম্ভব নয় বলে জানালেও ধৈর্য বাঁধ মানছিল না। তিনি জানান বেশিরভাগ সময় স্বামীর খেলার কারণে আলাদাই থাকতে হয়। তাই যতটুকু সময় বেশি দেখা হয় ততটাই সুবিধা। ‘‘এরপরে তো আবার দলের সঙ্গে হোটেলে চলে যাবেন। তাঁরা ফিরে যাবেন কালিম্পং। কাল আবার ফিরবেন কাঞ্চনজঙ্ঘায় বেঙ্গালুরুর হয়ে গলা ফাটাতে। তাই মোহনবাগানের পাশাপাশি বেঙ্গালুরুর পতাকাও উড়বেই তা এদিনই হলফ করে বলে দেওয়া যায়।
বিকোকেই ব্যাঙাইচু ফ্যান ক্লাব তৈরি হয়েছে ২০০৪ সালে। মেয়ে এলিনোর সঙ্গে তাঁর বিয়েও ওই বছরই। তারও বছর খানেক আগে থেকে বিকোকেই ইস্টবেঙ্গলে থাকাকালীন প্রেম শুরু। এলিনো তখন কলকাতায় একটি নামী প্রসাধনী সামগ্রীর কর্মী। সেই সুত্রে বিজ্ঞাপনের কাজের সূত্রে তাঁর সঙ্গে আলাপ ও প্রেম ও পরে বিয়ে। ঘরের ছেলে ইস্টবেঙ্গলের মত দলে খেলে। তখন থেকেই ফ্যান ক্লাবের সূচনা। এরপরে দল বদলালে সাফল্যের ঝুলি ভরতে থাকে। তাতে ক্লাবের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ক্রমশ। গোটা আই-লিগে সারা বাংলা যেখানে ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের জয় কামনা করেছে, এই ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা ঘরের জামাইয়ের জন্যই বেঙ্গালুরুর হয়ে প্রার্থনা করেছেন। শনিবারও তাই সবুজ-মেরুনের সঙ্গে পাল্লা দেবে লাল-সাদা বলে জানিয়ে দিলেন তাঁরা।