বালা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীকে আর্জি বাবার

আর যেন কেউ সন্তান না হারায়

মন্ত্রীকে দেখেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন মধ্য পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। শীর্ণ শরীর। মন্ত্রীর গাড়ি বালা নদীতে নামার আগে ধীর গলায় আউড়ালেন, ‘‘যদি মন্ত্রীর গাড়ি আটকাত, তাহলেই তিনি বুঝতেন কী অবস্থায় আমরা থাকি। তাহলেই উপকার পেত জয়ন্তীবাসী।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০১:১৪
Share:

মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলছেন ধীরেন দাস। ছবি: নারায়ণ দে।

মন্ত্রীকে দেখেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন মধ্য পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। শীর্ণ শরীর। মন্ত্রীর গাড়ি বালা নদীতে নামার আগে ধীর গলায় আউড়ালেন, ‘‘যদি মন্ত্রীর গাড়ি আটকাত, তাহলেই তিনি বুঝতেন কী অবস্থায় আমরা থাকি। তাহলেই উপকার পেত জয়ন্তীবাসী।’’

Advertisement

বুধবার বেলা তিনটে নাগাদ জয়ন্তী ও বালা নদী পরিদর্শন করতে যান রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যয়। বালা নদীর অল্প জল দেখেই দাঁড়িয়ে পড়ে মন্ত্রীর গাড়ি। মন্ত্রী নিজে নেমে খালি পায়ে জলের গভীরতা মাপেন বালা নদীতে। গত ৩০ জুন এই নদীতেই জল বেশী থাকায় অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে হাসপাতাল পোঁছতে পারেননি জয়ন্তীর বাসিন্দা ধীরেন দাস। মারা যায় চার বছরের আরাধ্য দাস। এ দিন মন্ত্রীর গাড়ি সেই নদী পেরোতে দেখে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সু্ব্রত মুখোপাধ্যায় বালা নদীতে নেমে দেখেন পাশে নির্মীয়মাণ সেতুর কাজ জলের জন্য থমকে রয়েছে। বর্ষায় পাহাড়ি নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় জয়ন্তী বনবস্তির বাসিন্দাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজাভাতখাওয়া ও আলিপুরদুয়ারের সঙ্গে। সেই সময় রোগীদের নিয়ে চরম সমস্যার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। মৃত আরাধ্যর বাবার মুখে ঘটনাটি শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন সুব্রতবাবু। তিনি বলেন, “পাকা সেতু না হওয়া পর্যন্ত বালা নদী পেরোনোর জন্য অস্থায়ী ভাবে কোনও রাস্তা বানানোর বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।”

৩০ জুলাই ধীরেনবাবুর একমাত্র ছেলে আরাধ্যের জ্বর এসেছিল। রাতে জ্বর বাড়ায় দিনমজুর ধীরেনবাবু একটি গাড়ি ভাড়া করে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে রওনা হন। রাত ১২টা নাগাদ বালা নদীর পারে পৌঁছে দেখেন প্রবল জলস্রোত। গাড়ি নদীর ওপারে না যাওয়ায় কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে আসেন জয়ন্তীতে। রাতেই মারা যায় আরাধ্য। বুধবার সেই বালা নদীর পারে দাঁড়িয়ে ধীরেনবাবু বলছিলেন, “আমি একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছি। আর কাউকে যাতে সন্তান হারাতে না হয় নদীর জন্য সেই ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।”

Advertisement

এ দিন পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বেলা ১টা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি জানান, বন্ধ চা বাগান গুলিতে জেলা পরিষদের তরফে বিভিন্ন সাহায্য করা হচ্ছে। তার জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন। তাছাড়া নতুন জেলা পরিষদের অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি দেখছে অর্থ দফতর। কলকাতায় জলপাইগুড়ি ভবনে আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। পরে আলাদা ভবন তৈরি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন