Madhyamik

মায়ের স্বপ্ন বয়ে রাজ্যে দ্বিতীয়

সকালে পর্ষদ থেকে নাম ঘোষণা হতেই রীতিমতো উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল তাদের বাড়িতে। ক্রমেই যে উৎসব বাড়ির গণ্ডী ছাড়িয়ে শ্রেয়সীর স্কুল সহ যেন ছড়িয়ে গেল গোটা ফালাকাটাতে।

Advertisement

অরুণাংশু মৈত্র 

ফালাকাটা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ১২:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

মায়ের কাছ থেকেই জেদটা পেয়েছে। স্কুলের পরীক্ষায় বরাবর প্রথম স্থানটি তার জন্য পাকা ছিল। তার পরে মাধ্যমিকেও দ্বিতীয়। ফালাকাটার শ্রেয়সী পালকে জড়িয়ে ধরে তার মা বিশাখাদেবী বললেন, ‘‘আমি বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে এসে এমএ পড়ে পাশ করেছিলাম। ইচ্ছা ছিল চাকরি করার। ইচ্ছে ছিল আরও এগনোর। আমার মেয়ে এ বার সেই ইচ্ছাটা বয়ে নিয়ে যাবে। আমি চাই ও অনেক দূর পর্যন্ত যাক।’’ পাশে তখন চুপ করে দাঁড়িয়ে শ্রেয়সী।

Advertisement

সকালে পর্ষদ থেকে নাম ঘোষণা হতেই রীতিমতো উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল তাদের বাড়িতে। ক্রমেই যে উৎসব বাড়ির গণ্ডী ছাড়িয়ে শ্রেয়সীর স্কুল সহ যেন ছড়িয়ে গেল গোটা ফালাকাটাতে।

হবে না-ই বা কেন? ক্ষুদ্র জনপদ ফালাকাটার স্বপ্নপূরণ হল শ্রেয়সীর হাত ধরে। ফালাকাটা গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী শ্রেয়সী ৬৯১ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করার পরে সারা রাজ্যেরই নজর গিয়ে পড়ে ফালাকাটার উপরে। গোটা ফালাকাটার মানুষেরই মন তাই যেন জয় করে ফেলেছে শ্রেয়সী। যার জেরে ফল ঘোষণার পর থেকেই গোটা বাড়িতে উপচে পড়েছে ভিড়৷ ফুল ও বই দিয়ে ভরে গিয়েছে বাড়ির বিভিন্ন ঘর৷ বাড়িতে এতো মানুষকে সামলে দুপুরে নিজের স্কুলে পৌঁছতেই শুরু ফের উৎসব৷ শ্রেয়সীকে নিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা স্কুলের শিক্ষিকা থেকে শুরু করে সহপাঠীদের সকলে৷

Advertisement

রাজ্যে যুগ্ম দ্বিতীয় শ্রেয়সী বাংলায় ৯৬, ইংরাজিতে ৯৭, ভূগোলে ১০০, অংকে ১০০, জীবন বিজ্ঞানে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ১০০, ইতিহাসে ৯৯ পেয়েছে৷ একাদশ শ্রেণীতে কোনও স্কুলে ভর্তি হবে, তা এখনও চূড়ান্ত করেনি সে৷

তবে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন অনেকদিন থেকেই দেখে আসছে শ্রেয়সী৷ তার কথায়, ‘‘চিকিৎসক হতে পারলে, সবার পাশে দাঁড়ানোর বড় একটা সুযোগ পাব৷’’

গান আবৃত্তিরও শখ আছে৷ শ্রেয়সী জানায়, সাত জন গৃহশিক্ষকের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকরাও তাকে যথেষ্টই সহযোগিতা করেছেন৷ সেই সঙ্গে সাহায্য করেছেন বন্ধুরাও৷

আর পাশে ছিল মা। “বাড়িতে পড়ার সময় মা পাশে বসে থাকতো”—জানাল শ্রেয়সী৷

বাবা শ্যামাপ্রসাদ পাল অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক। বড় দিদি বিএসসি পাশ করে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শ্রেয়সীর বাবা বলেন, “আমার মেয়ের কোনদিন দ্বিতীয় হয়নি। কী যে খুশি হয়েছি বলে বোঝাতে পারবনা৷” তবে মেয়ের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তা রয়েছে তাঁর৷ তাঁর কথায়, “পেনশনের অল্প টাকায় মেয়ের ইচ্ছা কী ভাবে কত দূর পূরণ করতে পারব, সেটাই আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷”

ফালাকাটা গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শিপ্রা সাহারায় দেব বলেন, ‘‘আমরা শ্রেয়সীর জন্য গর্বিত। আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। আমাদের স্কুলে অনেক কিছুই নেই৷ তার মধ্যেও শ্রেয়সীর এই ফল বাকিদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।’’

ভারতীয় জীবনবীমা নিগমের তরফে প্রতি বছর ১২ হাজার টাকা স্কলার শিপ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান নিগমের ফালাকাটার প্রবন্ধক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রেয়সীকে অভিনন্দন জানাতে তার স্কুলে এসেছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী, জেলা পরিষদের সহ সভাপতি মনোরঞ্জন দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন