West Bengal Lockdown

করোনা যুদ্ধে সম্প্রীতির জোট বাধল গ্রাম

চাকুলিয়ার এই পারুল গ্রামে একই রাস্তার ধারে রয়েছে দুর্গা মন্দির ও মসজিদ। দূরত্ব মাত্র একশো মিটার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২০ ০৫:১৫
Share:

গাছে সাঁটানো পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

গ্রামে ঢোকার পথে বাঁশের ব্যারিকেড। সেটা টপকানোর আগে ভাল ভাবে সাবান জয়লে হাত ধুতে হবে। ব্যারিকেডের সামনেই হাতে লেখা পোস্টার—‘করোনা রুখতে লকডাউন মেনে চলুন। ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন।’ রয়েছে সচেতনতামূলক পোস্টারও। তাতে লেখা মাস্ক না পরে বাইরের কেউ গ্রামে প্রবেশ করতে পারবেন না।

Advertisement

চাকুলিয়ার এই পারুল গ্রামে একই রাস্তার ধারে রয়েছে দুর্গা মন্দির ও মসজিদ। দূরত্ব মাত্র একশো মিটার। এক পাশ থেকে ধুপকাঠি আর অন্য পাশে আতরের গন্ধ পাওয়া যায়। মসজিদে চলছে জিকর, মন্দিরের উলুধ্বনি। এখন লকডাউনের জেরে মন্দির-মসজিদে তালা বন্ধ। আর করোনা মোকাবিলায় শহর থেকে বহু দূরের এ গ্রামে জাতি ধর্ম বর্ণের ভেদাভেদ মুছে একজোট হয়ে যুদ্ধে নেমেছেন সৌরভ দাস, রফিকুল ইসলাম, জগদীশচন্দ্র দাস, সুনীল টুডুরা।

পাড়ায় ঢোকার পরও দূরত্ব বজায় রেখেই বলতে হবে কথাবার্তা। মুদির দোকানেও চুনের গণ্ডির ভিতরে দাঁড়িয়েই দিতে হচ্ছে লাইন। এমনকি, পালা করে জীবাণুনাশক দিয়ে অলিগলিও পরিষ্কার করা হচ্ছে। এখন এ পাড়ার এটাই নিয়ম। পিংকু, সচিন, উমাচরণ, রফিকুলররা গ্রামের দুঃস্থদের হাতে পৌছে দিচ্ছেন ত্রাণও। চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রমজ (ভিক্টর) বলেন, “কঠিন সময়ে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে গোটা গ্রাম একজোট হয়ে বড় দৃষ্টান্ত রেখেছে।“

Advertisement

গ্রামে সব মিলিয়ে তিন হাজার মানুষের বসবাস। বেশির ভাগ বাসিন্দাই দিনমজুর। আছে বিদ্যুৎ, প্রাথামিক বিদ্যালয়, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। জেলায় মাঝে মধ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা হয়। সেখানে এই গ্রামের মানুষেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করোনা মোকাবিলাতেও সম্প্রীতির নজির রাখলেন।

সৌরভরা বলছিলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে এখানকার বাসিন্দারা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে রয়েছেন। যে যার ধর্মীয় আচার পালন করেন নির্দ্বিধায়।” স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক পিংকু দাস বলেন, “সম্প্রীতি ও সহাবস্থান এই গ্রামে চিরদিনই। স্থানীয় আদিবাসীরা বড়দিনে উৎসব পালন করেন। সেই উৎসবে সকলেই শামিল হন।’’

মন্দিরের পাশেই সিরাজুল ইসলামের আনাজের দোকান। তার পাশে সচিন দাসের মুদির দোকান। সেখানে চুন দিয়ে সাদা দাগ কেটে দেওয়া হয়েছে। সকলে বিধি মেনে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। সচিন বলেন, “মাস্ক না পরে এলে এবং দোকানে সামাজিক দূরত্ব না বজায় রাখলে জিনিস দেওয়া বন্ধ। এখন সকলে বুঝেছেন। এই নিয়ম তো নিজেদের সুরক্ষার জন্যই।“

গোয়ালপোখোর ২ ব্লকের বিডিও কানাইয়াকুমার রায় বলেন, “ওই গ্রামের বাসিন্দাদের প্রয়াস সত্যি দৃষ্টান্ত। নিজেরা সতর্ক থেকে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি যে মেনে চলছেন এটা খুবই ভাল কথা।“

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন