রোশনাই থাকলেও দীপাবলির রাতেও কিছুটা যেন নিষ্প্রভই দার্জিলিং পাহাড়। ইতিউতি রংমশাল, তুবড়ি জ্বালানো হলেও জমজমাট ব্যাপার চোখে পড়ছে না কালিম্পঙেও। তুলনায় কার্শিয়াং, মিরিক একটু বেশি ঝলমলে। বৃহস্পতিবার পাহাড়ের দুই জেলা সদরেই এমন ছবি চোখে পড়েছে।
পাহাড়ে দীপাবলির জৌলুস যে এ বার অনেকটাই কম, সেটা বুঝতে পারছেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীরাও। সেবক রোডের ব্যবসায়ী ববি অগ্রবাল, বিধান মার্কেটের অভিজিৎ ঘোষরা জানান, দেওয়ালিতে আলো, আতসবাজি কেনার জন্য পাহাড়ের যে ভিড় উপচে পড়ার কথা তার অর্ধেকও হয়নি। সব মিলিয়ে পাহাড়ের পুরোপুরি ছন্দে ফিরতে যে আরও সময় লাগবে, তা নিয়ে পাহাড়-সমতলের প্রায় কারও সংশয় নেই। কিন্তু সে অপেক্ষাতেই রয়েছেন সমতলের ব্যবসায়ীরাও।
কালীপুজোর রাতে পাহাড়বাসীদের অনেকেই লক্ষ্মীপুজো করে থাকেন। বিশেষ উৎসবকে বলা হয় ‘তেহার’। পুজো উপলক্ষে পাহাড়বাসীরা সাধারণত গরু, কাক, কুকুরকে খাওয়ান। অনেকে কুকুরের গলায় মালা পরিয়ে দিয়ে থাকেন। এ বারেও পাহাড়ের সেই উৎসব পালনের দৃশ্য দেখা গিয়েছে। তবে স্বতঃস্ফূর্ত হইচই তেমন চোখে পড়েনি। কার্শিয়াঙের তাসি লেপচা, কালিম্পঙের সুরেন প্রধান, মিরিকের নির্মল ছেত্রীরা আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে জানান, পুজোর মরসুমে বন্ধের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য না হওয়ায় পাহাড়বাসীর হাতে তেমন টাকার জোগান নেই। সেই কারণেই উৎসবের ছবিটা তুলনায় ম্লান বলে তাঁরা মনে করেন।
পর্যটকদের মধ্যে একটা সংশয় যে রয়েছে, তা মনে করছেন জিটিএ প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গও। তিনি জানান, পরিস্থিতি এখন ঠিক আছে। তিনি বলেন, ‘‘পর্যটকেরা নির্ভয়ে আসুন। কোনও সমস্যা নেই। রাজ্যের সঙ্গে কথা হচ্ছে, পর্যটক বান্ধব দার্জিলিং-এ টুরিস্ট ফেস্টিভ্যালও হবে।’’
অনির্দিষ্টকালের বন্ধ সামলে পাহাড়ের রেস্তোরাঁ, হোটেলেও লোক আসতে শুরু করেছে। সকালে কেভেনটার্সের ছাদ থেকে ক্লকটাওয়ার দেখতে দেখতে সসেজ, বেকনপ্রিয় ভোজন রসিক বিদেশিদের সঙ্গে দেশি পর্যটকদেরও কিছু দেখা মিলেছে। আবার দুপুরে গ্লেনারিজের জানালায় বসে কাঞ্চনজঙ্ঘার শোভা দেখতেও দেখা গিয়েছে কিছু পর্যটকদের। সকাল নাগাদ চৌরাস্তার লাগোয়া মহাকাল মন্দিরেও লোকজনের আনোগানো ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ধীরে ধীরে পাহাড় স্বাভাবিক হচ্ছে। লোকজন আসছেন ঠিকই। তবে সংখ্যাটা কম রয়েছে। এখনও বেশি লোক সিকিমে যাচ্ছেন। আসলে গোলমাল হতে পারে, এই আশঙ্কা অনেক পর্যটকেরই আছে। সেখান থেকে পরিস্থিতি বদল করার দায়িত্ব পুলিশ-প্রশাসন এবং জিটিএ-র।