বহুতলে ঘুলঘুলি নেই, কমেছে গাছ ঘিরে কিচিরমিচিরও

ঘর হারিয়ে বিপন্ন চড়াই

এক তলা, দোতলা, তিন তলা বদলে গিয়েছে বহুতলে। সেই বহুতলে ঘুলঘুলি নেই। ভিটে হারিয়ে চড়াইয়ের দল বাসা বেঁধেছিল গাছে। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের দাপটে পাখির বংশে শুরু হয়েছে মড়ক। মোবাইলে টাওয়ারের প্রভাবে চড়াইয়ের প্রজননেও প্রভাব ফেলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০২:৫১
Share:

এক তলা, দোতলা, তিন তলা বদলে গিয়েছে বহুতলে। সেই বহুতলে ঘুলঘুলি নেই। ভিটে হারিয়ে চড়াইয়ের দল বাসা বেঁধেছিল গাছে। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের দাপটে পাখির বংশে শুরু হয়েছে মড়ক। মোবাইলে টাওয়ারের প্রভাবে চড়াইয়ের প্রজননেও প্রভাব ফেলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। সব মিলিয়ে উত্তরের চড়াইয়ের দল মোটেই ‘মহাসুখে’ নেই।

Advertisement

শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের পাশে বছর কুড়ি ধরে রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন হরজিৎ সিংহ। মহানন্দা সেতু লাগোয়া রাস্তার পাশের গাছগুলোর পাতার ভিতরে প্রতি সন্ধ্যায় চড়াইয়ের ঝাঁক ঢুকে পড়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে তাঁর চোখের সামনেই। বছর দশেক আগের কথা। কিচিরমিচিরে ভরা থাকত হিলকার্ট রোডের ধারের বিকেল। তবে প্রতিদিন সকালে গাছের নীচে পড়ে থাকত একটি দু’টি মরা পাখি। রাতে ঝড় হলে গাছের নীচে পাখির সংখ্যা বাড়ত। এখন পাখির ঝাঁকে ভিড় কম বলে দাবি করেন হরজিৎ সিংহ। বললেন, ‘‘এখনও কিছু পাখি গাছে থাকে। সেই কিচিরমিচির নেই।’’

দক্ষিণের তুলনায় উত্তরবঙ্গে বরাবরই এই পাখি কম দেখা যায় বলে দাবি করা হয়। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘চড়াই পাখি আরামপ্রিয়। রোদ-ঝড়-বৃষ্টির প্রতিকূলতা সহ্য করতে পারে না। সে কারণে বাড়ির ঘুলঘুলিই তাদের নিরাপদ আশ্রয়। উত্তরবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টি বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই তাই দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরে এই পাখির সংখ্যা কম।’’ ঝড় জলে থেকে যাওয়া উত্তরের বাড়ন্ত চড়াইয়ের দলের সামনে এখন সঙ্কট বাসস্থানের।

Advertisement

বহুতল আবাসন তৈরি হয়ে চলছে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি থেকে উত্তরের সর্বত্রই। আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের সভাপতি অমল দত্ত বলেন, ‘‘আধুনিক বহুতলে ঘুলঘুলির আর জায়গা নেই। হাওয়া ঢোকার জন্য বৃত্তাকার ছোট্ট জায়গা। তাতেও মোটা কাঁচ অথবা ফাইবারের ঢাকনা। চড়াইয়ের জন্যই বহুতলগুলোতে ঘুলঘুলি অথবা ওই ধাঁচের কিছু তৈরি করা হয়।’’ পরিবেশকর্মী রাজা রাউত মনে করেন, এটা নিয়ে আইন তৈরি হওয়া প্রয়োজন। একটি প্রমোটারি সংস্থার কর্ণধার জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রাহকদের দাবি মতোই আমরা ফ্ল্যাট বা আবাসন তৈরি করি। ঘুলঘুলি পছন্দ করলে তেমনই বানানো হবে।’’

শুধু ঘুলঘুলি না থাকাই চড়ুই লুপ্ত হওয়ার একমাত্র কারণ নয় বলে দাবি পরিবেশপ্রেমীদের। বালুরঘাটের প্রাচ্যভারতীতে পুরনো আমলের দালান এখনও রয়েছে। পাকা ঘরগুলোর চার দিকে চারটি ঘুলঘুলি। বেশির ভাগ ঘুলঘুলিতে শুকনো খড় ও পাতার পাখিরবাসা এখনও ঝুলছে। কিন্তু ঘুলঘুলির অতি পরিচিত বাসিন্দা সেই চড়াই পাখির আর দেখা নেই।

শহরের পাখিপ্রেমী দেবব্রত ঘোষের আক্ষেপ, ‘‘কয়েক বছরের মধ্যে পাড়াগুলো একাধিক মোবাইল টাওয়ারে ঘেরাও হয়ে পড়েছে। বাতাসে সেই মোবাইলের সেই জোরাল তরঙ্গে ক্রমশ চড়ুইয়েরা বিপন্ন হয়ে প্রাণ হারিয়েছে।’’ পরিবেশপ্রেমী বিশ্বজিত বসাক দায়ী করেন চাষের জমিতে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারকে। কীটনাশকের ব্যবহারে ছোট কীটপতঙ্গ মরে গিয়ে খাবারে টান পড়েছে। দেখা গিয়েছে, ডিম পুষ্ট না হওয়ার দরুণ ছানা ফুটে বের হওয়ার আগে চড়াইয়ের ডিম ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তা হলে, চড়াই রক্ষা করতে কী হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন