নোটবাতিলের দু’ বছর

কোথায় কালো টাকা? প্রশ্ন স্বামীহারা সবিতাদেবীর

এখনও ওই দিনটার কথা মনে পড়লে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননা তিনি। নিজেকে যেন কিছুতেই সংযত করতে পারেন না।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:৪০
Share:

দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও ওই দিনটার কথা মনে পড়লে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননা তিনি। নিজেকে যেন কিছুতেই সংযত করতে পারেন না। প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন দিনহাটার বাসিন্দা সবিতা ভৌমিক। তিনি, “বলুন তো কী লাভ হল? কোথায় কালো টাকা? শুধু শুধু কত জীবন চলে গিয়েছে! কত কষ্ট হয়েছে মানুষের!” কারও কাছেই যুতসই উত্তর তিনি পাননি।

Advertisement

নোট বাতিলের পরে ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর দীর্ঘসময় টাকা তোলার জন্য এটিএম লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সবিতাদেবীর স্বামী ধরণীকান্ত ভৌমিক। দ্রুত তাঁকে প্রথমে হাসপাতাল পরে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’দিন দু’রাত লড়াই করেও বেঁচে ফিরতে পারেননি ধরণীবাবু। ১৫ নভেম্বর মৃত্যু হয় ধরণীবাবুর। পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক স্বামীর এমন মৃত্যুতে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েন সবিতাদেবী।

বুধবার সে কথা বলতে বলতেই বার বার আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনি। সবিতাদেবী জানান, তাঁর মেয়ে শ্রাবণী এ বারে স্নাতকোত্তর হয়েছেন। ছেলে শৈবাল উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ করে এ বারে অঙ্কে অনার্স নিয়ে দিনহাটা কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, “এই দীর্ঘসময় কী ভাবে যে চলেছি আমি জানি। আমার পাশে কেউ ছিল না। পেনশন চালু হয়েছে দু’মাস আগে। চাকরি এখনও মেলেনি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, সংসার খরচ চালাতে হয়েছে আমাকে।” তাঁর আক্ষেপ, ওই সময় অনেক নেতা থেকে শুরু করে অনেকেই তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরে আর কাউকেই তিনি পাননি। সে সব কথা বলতে বলতেই তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বলেন, “পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাতিল করে কী লাভ হয়েছে জানি না। আমার তো কোনও লাভ হয়নি এ টুকু বুঝি। আমার এতবড় ক্ষতি হয়েছে যা কোনওভাবেই পূরণ করা সম্ভব না।” তাঁর আর্জি, এ বারে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।

Advertisement

ধরণীবাবুর ছেলে শৈবাল সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছেন। রাজনীতি থেকে অর্থনীতি সব খবরই রাখেন তিনি। তাঁর কথায়, “কালো টাকা সাদা হওয়ার ঘটনা তো জানতে পারলাম না। যাঁদের কালো টাকা ছিল তাঁরা নিশ্চয়ই তা সাদা করে নিয়েছেন। আবার জাল নোটের কারবারও বন্ধ হল না। এখন তো দু’হাজার টাকার নোটও জাল হচ্ছে বলে শুনছি। তাহলে লাভ কী হল?” কিছুটা থেমে শৈবাল বলে, “অসুস্থ হয়ে আমার বাবা মারা গেলেন। এটিএমে দীর্ঘসময় না দাঁড়ালে বা দুশ্চিন্তা না হলে এমন হত না।”

২০১৬ সালে ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের অনেকেই নোট বাতিলের সাফল্য দাবি করেন। তবে নোট বাতিলের পরে টাকা নিয়ে সঙ্কটে একাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ধরণীবাবু ছাড়াও দিনহাটার গোসানিমারিতে টাকা তুলতে গিয়ে দশ ঘণ্টা এটিএমের সামনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ধনেশ্বর বর্মণ। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। ছোট্ট পানের দোকান করে সংসার চালাতেন তিনি। কোচবিহারে ভূমি সংস্কারে দফতরে কর্মরত কলকাতার ব্যান্ডেলের বাসিন্দা কল্লোল রায়চৌধুরীর মৃত্যু হয় এটিএমের লাইনে অসুস্থ হয়ে পড়েই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন