২০১৪ সালের লোকসভা বা ২০১৬’র বিধানসভা ভোটে মালদহ জেলায় একটি আসনেও জিততে পারেনি তৃণমূল। গত পঞ্চায়েতেও এই জেলায় দলের ফলাফল ছিল শোচনীয়। তবে দলবদলের রাজনীতির জেরে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ক্ষমতা এখন এনেকটাই তাঁদের কব্জায়। সামনেই ফের পঞ্চায়েত ভোট। কিন্তু তাতেও জেলায় দলের দ্বন্দ্ব মেটার কিন্তু কোনও লক্ষণই নেই।
এক সময় কৃষ্ণেন্দু-সাবিত্রী ঝগড়া দলকে বিড়ম্বনায় ফেলেছিল। এখন ঝগড়া কৃষ্ণেন্দু-নীহারের। শুধু তাই নয়, দ্বন্দ্বের ছায়া পড়েছে গ্রামেও। কালিয়াচক, চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর সহ জেলার দিকে দিকেই দলের অন্দরে-প্রকাশ্যে চলছে গোলমাল। দলের নিচুতলার কর্মীদের তাই আক্ষেপ, মালদহে তৃণমূল আছে তৃণমূলেই।
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে মালদহের দু’টি আসনেই তৃণমূল গোহারা হারে। বিধানসভা ভোটেও জেলার ১২টি আসনের সব ক’টিতেই হারে তারা। যদিও পরে গাজোলের সিপিএম বিধায়ক দিপালী বিশ্বাস ও ইংরেজবাজারের নির্দল বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ তৃণমূলে নাম লেখান। এখন জেলা পরিষদ, ১৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ১৩টি ও প্রচুর গ্রাম পঞ্চায়েত তাঁরা দখল করেছে। কিন্তু দলের দ্বন্দ্ব যে তিমির সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে।
এখন কৃষ্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে বিধায়ক তথা পুরপ্রধান নীহার রঞ্জন ঘোষের ঝগড়া জেলার রাজনীতিতে জোর চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা পুরসভার বোর্ড মিটিংই হোক বা দলের জেলা কমিটির বৈঠক সবেতেই বাঁধছে ঝগড়া। জেলায় এসে নেত্রী এক সভায় ওই ঝগড়া মিটেছে কি না, তার খোঁজও নেন। দলে নাম লেখানো এক কাউন্সিলরকে ঘিরে কয়েকদিন আগে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে তো দু’জনের মধ্যে রীতিমতো তুলকালাম বাঁধে। শেষমেশ বোর্ড মিটিংয়ে বহিরাহত লোকজন ঢুকে পড়ে।
আবার দিন কয়েক আগে কালিয়াচক ১ ব্লকের কর্মিসভাকে ঘিরেও দলীয় দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে হাতাহাতি, ধস্তাধ্বস্তির মধ্যে দিয়ে। সভা ভণ্ডুল হয়ে যায়। সেখানে দলীয় ব্লক সভাপতি আবু নাসের খানকে কোনওরকমে সভাস্থল থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়। চাঁচলেও জেলা স্তরের বুথ কর্মিসভার প্রস্তুতিতে দলের নেতা-কর্মীরা বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল। হরিশ্চন্দ্রপুরে একপক্ষ দলীয় সভা-সমিতিতে ডাক পেলেও আর এক পক্ষ কোথাও ডাকই পাচ্ছেন না। হবিবপুরেও দলের প্রতিষ্ঠাদিবস পালন করা হয় দু’টি আলাদা ভাবে।
মোদ্দা কথা, জেলার ১৫টি ব্লক ও ২টি পুরসভাতেই দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের একই অবস্থা। দলের নিচুতলার কর্মীরা বলছেন, মালদহে দলের নেতৃত্বরা বদলালেন না। দ্বন্দ্ব যদি না মেটে তবে এ বারের পঞ্চায়েতেও ফের একই ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। যদিও দ্বন্দ্বের তত্ত্ব মানতে নারাজ দলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, এক সংসারে পাঁচ ভাই থাকলে ঠোকাঠুকি একটি-আধটু হতেই পারে। কিন্তু সেটা নিজেরাই বসে মেটানো যায়। পঞ্চায়েতে ভাল ফরই হবে।’’