মহিলাকে নির্যাতন। ইংরেজবাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র।
মোড়ল মাতব্বরদের নির্দেশে কখনও মহিলার মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে। আবার কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাছে বেঁধে রাখা হয়েছে মহিলাকে। মালদহের গ্রামগঞ্জগুলিতে এমন ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। এ বার খোদ ইংরেজবাজার শহরের মধ্যেই ডাইনি অপবাদে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলাকে চুল কেটে অত্যাচার করা হল। তাঁকে জুতোর মালা পরানো হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে তাঁর মুখে কালিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
রবিবার সকালে শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মালঞ্চপল্লিতে এই কাণ্ডের পরে পুলিশ গিয়ে শেষ পর্যন্ত ওই মহিলাকে উদ্ধার করে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করায়।
মাস তিনেক আগে ইংরেজবাজারের অমৃতিতে এক মহিলাকে গাছে বেঁধে রাখার অভিযোগ উঠেছিল মোড়ল-মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হয়েছিল ওই মহিলার আত্মীয়েরা। একই থানা এলাকার যদুপুরে অবৈধ সর্ম্পকের সন্দেহে এক বধূর মাথার চুল কদম ছাঁট করে ছেটে দেওয়া হয়েছিল। এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল মানিকচকেও। জেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে এমন ঘটনা নিয়মিত দেখা গিয়েছে। তবে সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে এ দিন সকালে খোদ ইংরেজবাজার শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মালঞ্চপল্লির ঘটনা। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁডে তল্লাশিও শুরু হয়েছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা বিএসএনএলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী প্রদীপ বসাক। তাঁর স্ত্রী চিত্রাদেবী বছর আটেক আগেই অসুস্থতার কারণে মারা গিয়েছেন। প্রদীপবাবু তাঁর একমাত্র ছেলে সুদীপকে নিয়ে থাকতেন। সুদীপ মানসিক ভারসাম্যহীন বলে পরিবার সূত্রে দাবি। ওই বাড়িতেই দশ বছর ধরে পরিচারিকার কাজ করে আসছেন ইংরেজবাজার শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণকালিতলা এলাকার বাসিন্দা ওই পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা। ওই মহিলার স্বামী একটি বেসরকারি স্কুলে ভ্যান চালান। তাঁর একে ছেলে পেশায় টোটো চালক, দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছেন।
প্রদীপবাবুর আত্মীয় স্বজনের দাবি, ওই মহিলা দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করার সুবাদে ওই মহিলা পরিবারের খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। সেই ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে মহিলা প্রদীপবাবুর সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও দাবি করা হয়। প্রদীপবাবুর আত্মীয় স্বজনদের একাংশ সে কারণে ওই মহিলাকে এ দিন নির্যাতন করেন বলে দাবি। এলাকার কিছু পুরুষও তাঁদের সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ। ঘণ্টাখানেক ধরে এমন চললেও এলাকার কাউন্সিলর সিপিএমের পরিতোষ চৌধুরী ঘটনাস্থলে আসেননি বলে অভিযোগ। পুলিশ স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে।
ওই মহিলা বলেন, ‘‘আমার কিছু জিনিস ওই বাড়িতে থাকায় আনতে গিয়েছিলাম। তখন আমাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে জুতোর মালা, মুখে কালি মাখিয়ে চুল কেটে দেওয়া হয়। আমার উপরে এমন অত্যাচার চললেও সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি।’’
কাউন্সিলর বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। তবে এমন ঘটনাকে কখনও সমর্থন করা যায় না। এখানে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
প্রদীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’ তাঁর ভ্রাতৃবধূর বক্তব্য, ‘‘ওই মহিলা ঝাড়ফুঁক দিয়ে পরিবারের লোকেদের ক্ষতি করেছেন। আর সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। উনি যাতে কোথাও এমন কাজ করতে না পারেন তার জন্য এমন করা হয়েছে।’’
ঘটনায় তীব্র নিন্দা করেছেন শহরের বিভিন্ন সংগঠন। এপিডিআর-এর জেলা সম্পাদক জীষ্ণু রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রত্যেককে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। আমরা ওই মহিলার পাশে রয়েছি।’’ রাজ্যের মন্ত্রী তথা ইংরেজবাজারের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’