লড়াই: চেরাই কলে আলিজান বিবি। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
শাড়ির উপরে সাদা জামা পরা। মাথায় শক্ত করে বাঁধা গামছা। একের পর এক কাঠের গুঁড়ি পাঁজাকোলা করে নিয়ে গিয়ে মেশিনে চেরাই করে চলেছেন বছর পঞ্চাশের মহিলা। শরীরের শক্তি যেন এতটুকু টলেনি।
কোচবিহার থেকে দিনহাটা যাওয়ার রাস্তায় মহাকালধামে পাকা সড়কের পাশেই একটি করাতকলে দেখা মিলবে তাঁর। তিনি আলিজান বিবি। করাতকল থেকে একশো মিটার দূরেই তাঁর বাড়ি। গর্বই করে বলেন, “বয়স অনেকটা হয়েছে। তাতে কী! শরীরের শক্তি তো কারও থেকে কম নেই। কাজ করে পেটের ভাত যোগাই।”
এই ভারী কাজে মূলত পুরুষদের দেখেই অভ্যস্ত গ্রামের মানুষও। তাঁরা বলেন, “এমনটা আর কোথাও দেখিনি। এক মহিলা কি সাবলীল ভাবে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাঠ চেরাই করছেন।”
আলিজানের তিন মেয়েরই বিয়ে হয়েছে। বড় মেয়ে নুরজাহান স্বামীকে নিয়ে তাঁদের ভিটেতে থাকলেও হাঁড়ি আলাদা। বয়সের ভারে ন্যুব্জ সত্তরোর্ধ স্বামী নুরউদ্দিন মিয়াঁ বেশির ভাগ সময়েই অসুস্থ থাকেন। ফলে বহু দিন ধরেই সংসারের দায়িত্ব একাই কাঁধে তুলে নিয়েছেন আলিজান। কাঠের গুঁড়ির ওজন তাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।
বছর দশেক ধরে দিনমজুরির কাজ করেন তিনি। বছর পাঁচেক আগে বাড়ির পাশেই এই করতকলে কাজের সুযোগ পান। প্রথমটায় শুধু কাঠের গুঁড়ি টানার কাজই করতেন। কারখানা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর। ধীরে ধীরে মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে শিখতে থাকেন কাঠ চেরাই। এখন খুব সহজেই চোয়াল শক্ত করে পুরুষ সহকর্মীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করেন গোটা কাজ।
স্বামী নুরউদ্দিন বলেন, “বিপিএল কার্ড রয়েছে আমাদের। ডিজিটাল কার্ড এখনও পাইনি। সরকারি সাহায্য বলতে মাসে চারশো টাকা ভাতা পাই। তা দিয়েই কি সংসার চলে?” কিছু ক্ষণ চুপ করে থাকার পরে আবার বলেন, “বউ সারা দিন খেটে যা নিয়ে আসে তা দিয়েই চাল, ডাল কিনতে হয়।”
করাতকলের মালিক উপেন চন্দ বলেন, “আমরা সবসময় ওঁকে মেশিনের সামনে দাঁড়াতে দিই না। অন্য কাজ করাই।’’ লোকের অভাব থাকলে তিনি সহজেই সব কাজ সামলে নেন বলে জানাচ্ছেন উপেনবাবু।