গত চার বছরে মেয়ে বাড়ি ফিরেছিল একবার। সেটাও তিন বছর আগে। দ্বিতীয়বার বাড়ি ফিরল শবদেহ হয়ে। রবিবার বিকেলে তাঁর নিথর দেহ কফিনবন্দি করে বাড়িতে আনা হল। মালদহ জেলা প্রশাসনের তরফেই মৃতদেহ মালদহের বাড়িতে আনার ব্যবস্থা হয়।
মালদহের হবিবপুরের আকতৈল গ্রাম পঞ্চায়েতের পলাশ গ্রামের বাসিন্দা অনামিকা (নাম পরিবর্তিত) চার বছর আগে দিল্লিতে পরিচারিকার কাজে গিয়েছিলেন। পাশের হবিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কন্যাডুবি গ্রামের বাসিন্দা তাঁরই এক আত্মীয়ার হাত ধরে তিনি দিল্লি যান। অভিযোগ, বছর তেইশের অনামিকা দিল্লিতে যে বাড়িতে কাজ করতেন, সেই গৃহকর্তা ও তাঁর স্ত্রী তাঁকে মারধর করতেন। নির্মম প্রহারে তাঁর একাধিক হাড় ভেঙে যায়। গুরুতর চোট লাগে মেরুদণ্ডে। দীর্ঘদিন খেতে না দেওয়ায় অপুষ্টিরও শিকার হয়েছিলেন। গত মাসের শেষ দিকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে দিল্লির একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালেও ভর্তি করানো হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বুধবার তিনি মারা যান। মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পেয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর কন্যাডুবি গ্রামের এক আত্মীয়াকে নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন মা। মেয়ের মৃত্যু নিয়ে তিনি দিল্লির মুখার্জিনগর থানায় অভিযোগও জানান। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই গৃহকর্তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং কন্যাডুবি গ্রামের যে আত্মীয়া তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
মালদহ জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, রাজ্য মহিলা ও শিশুকল্যাণ দফতর মারফত দিল্লিতে সেই মেয়েটির মৃত্যুর খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক অরুণায়ন শর্মাকে দিল্লি পাঠানো হয়েছিল। তিনিই কফিন বন্দি দেহটি দিল্লি থেকে প্রথমে বিমানে দমদম বিমান বন্দর ও পরে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতা থেকে এ দিন হবিবপুরের পলাশ গ্রামে এনে পৌঁছে দেন, সঙ্গে মেয়েটির মাও ছিলেন।
এ দিকে, অনামিকার দেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছতেই গোটা গ্রাম জুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়। পরিবারের লোকজন তো বটেই, প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়ে। এ দিনই সন্ধেয় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। দাদা ভাইরো মার্ডি বলেন, ‘‘আমার একমাত্র বোনকে চার বছর আগে পরিচারিকার কাজের জন্য দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু যাওয়ার এক বছর পর একবার বাড়ি এলেও আর আসেনি। ফোনও করত না. কিন্তু সেই বোনকে আর দেখতে পাব না।’’ খুড়তুতো ভাই বিশ্বনাথ মার্ডি বলেন, ‘‘অনেক বছর ধরেই অনামিকার কোনও খোঁজ নেই. ফোন করলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হত না। সে কোনওদিন এসব অত্যাচারের কথা গোপনে ফোন করেও জানাতে পারেনি. জানালে হয়তো এমন দিন দেখতে হত না।’’
অনামিকার উপরে যাঁরা অত্যাচার চালিয়েছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছে গ্রাম। মনোরঞ্জন হেমব্রম, রজনী মুর্মু, মুন্সি হেমব্রম প্রমুখ গ্রামবাসীরা বলেন, এ ভাবে যে নির্যাতন করা হতে পারে, তা আমরা ভাবতেই পারছি না।’’