হেলছে স্তম্ভ, ডুবছে সেতু

জলপাইগুড়ি শহরের কাছে এসে বন্ধ হয়ে গিয়েছে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত নতুন দ্বিতীয় রেল লাইন তৈরির কাজ। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন লাগোয়াই তিস্তা রেল সেতু। তার পাশ দিয়ে দ্বিতীয় লাইন যাওয়ার জন্য নতুন সেতুর পিলার মাথা তুলে রেখেছে জলের উপরে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ০৬:২০
Share:

থমকে: তিস্তায় বেঁকে যাওয়া স্তম্ভটির জন্যই হচ্ছে না ডবল লাইনের কাজ। জলপাইগুড়িেত। নিজস্ব চিত্র

প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার পথে ডবল লাইন বসানোর কাজ থামিয়ে দিয়েছে একটি মাত্র স্তম্ভ।

Advertisement

জলপাইগুড়ি শহরের কাছে এসে বন্ধ হয়ে গিয়েছে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত নতুন দ্বিতীয় রেল লাইন তৈরির কাজ। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন লাগোয়াই তিস্তা রেল সেতু। তার পাশ দিয়ে দ্বিতীয় লাইন যাওয়ার জন্য নতুন সেতুর পিলার মাথা তুলে রেখেছে জলের উপরে। তার উপরে পাটাতন বসানোই বাকি। তখনই ঘটে বিপত্তি।

রেল দফতরের লোকজনেরা হঠাৎই দেখতে পান, হেলে গিয়েছে একটি স্তম্ভ। পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, সেতুর নীচে পাথরের স্তর। তাতেই তৈরি হয়েছে সমস্যা। হেলে যাওয়া স্তম্ভের উপরে এখনও চাপানো আছে ওজন। এই স্তম্ভটি বাদ দিয়ে সেতু তৈরি করা কখনও সম্ভব নয়। আবার সম্ভবটি ব্যবহারেরও অনুপযুক্ত। তা হলে?

Advertisement

বিশেষজ্ঞের দল জানিয়েছেন, নদী গর্ভের পাথর সরাতে ডিনামাইট ফাটাতে হবে। তাতে আবার অন্য স্তম্ভগুলির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা। এই গেরোয় আপাতত নতুন রেল সেতু তৈরির কাজ বন্ধ রেখেছে রেল। আটকে রয়েছে ডবল লাইন তৈরির কাজও।

এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে রেল। সেতু ছোট হোক বা বড়, নদী গর্ভে পাথর থাকলে তার ওপরে স্তম্ভ তৈরি করা যায় না। বিশেষজ্ঞদের দাবি, যে কোনও সময়ে অতিরিক্ত জলের তোড়ে পাথর ভেসে গেলে স্তম্ভটি জলের তলায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একাধিকবার সমীক্ষা করে তবেই ঠিক হয়, কোথায় সেতু হবে আর কোথায় তা সম্ভব নয়।

জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীতে সেতু তৈরির ক্ষেত্রে কি সেই সমীক্ষা কতটা হয়েছিল— উঠেছে সেই প্রশ্ন। এক রেলকর্তার কথায়, “সেতু তৈরির কাজ অর্ধেক হওয়ার পরে জানা গেল, একটি স্তম্ভের নীচে পাথর রয়েছে। এটা মানা কঠিন। রেল বোর্ডেও খবর পৌঁছেছে। দিল্লি থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।”

বিষয়টি প্রথম নজরে আসে মাসতিনেক আগে। তার পর থেকে সেতুর কাজ আর এগোয়নি। গুয়াহাটি, দিল্লি, কলকাতা থেকে পরের পর বিশেষজ্ঞ দল এসে ঘুরে গিয়েছে। কিন্তু কেউই কোনও উপায় বাতলাতে পারেনি। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মূল রুটগুলি ডবল লাইন করার জন্য সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এনজেপি থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত প্রায় ৪৯৩ কিলোমিটার পথের ডবল লাইন তৈরি হয়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়। তৈরি হয়েছে অন্তত ১২টি নতুন রেল সেতুও। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন থেকে এগিয়ে তিস্তা সেতুর মুখ পর্যন্ত নতুন লাইন বসানোর কাজ শেষ। সেতুর অন্য প্রান্ত দোমহনিতেও নতুন লাইন বসে রয়েছে। মাঝখানে তিস্তা নদীই আপাতত বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে পুরো রুটের সংযোগ। কবে, কীভাবে নির্মীয়মান তিস্তা সেতুর নীচ থেকে পাথর সরবে, তার কোনও উত্তর এখনও রেলের কাছে নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন