নোট বাতিলের পর কিছুদিনের জন্য হলেও থমকে গিয়েছিল কারবার। আতান্তরে পড়ে জাল নোটের কারবারিদের কেউ একশো দিনের কাজে নেমেছিল। কেউ বা কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছিল ভিন রাজ্যে। কিন্তু তিন মাস কাটতে না কাটতেই একের পর এক দু’হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার হতে শুরু করায় উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। জাল নোটের কারবারিরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলেই মনে করছেন পুলিশ কর্তারা।
বুধবার পাশের মুর্শিদাবাদ জেলার ইসলামপুর থেকে ৪০টি দু’হাজার টাকার জাল নোট সহ গ্রেফতার করা হয় মালদহের বৈষ্ণবনগরের হিজলতলার বাসিন্দা আজিজুর রহমানকে। এতেই উদ্বেগ আরও বেড়েছে। বৃহস্পতিবার আজিজুরের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেন গোয়েন্দারা। বিএসএফ এবং এনআইএও খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে নতুন করে জাল নোটের কারবার সংক্রান্ত তথ্য জানার চেষ্টা শুরু করেছে তারা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আজিজুরকে জেরা করতে মালদহ থেকে জেলা পুলিশের একটি দল ইসলামপুর যাচ্ছে।
কিছুদিন থমকে থাকার পর ফের জাল নোটের কারবার মাথাচাড়া দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, কালিয়াচকও কী তবে কালিয়াচকে ফিরছে?
কিছুদিন আগেও গুলি-বোমা, আফিম ও জাল নোটের কারবারে শিরোনামে ছিল মালদহের কালিয়াচক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে উত্তরবঙ্গ পুলিশের এডিজি নটরাজন রমেশবাবুর কড়া পদক্ষেপে কালিয়াচকে গুলি-বোমার লড়াই অনেকটাই থমকে। ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের পর থেকে কালিয়াচকে থমকে গিয়েছিল জাল নোটের রমরমা কারবারও। কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছিল, নোট বাতিলের জেরে জাল নোটের দফারফা হয়ে যাবে। কিন্তু তিন মাস ঘুরতে না ঘুরতেই কালিয়াচক থেকে একের পর এক দু’হাজারি জাল নোট উদ্ধার হতে শুরু করায় কেন্দ্রের সেই দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ বৈষ্ণবনগর থানার বাখরাবাদ চর থেকে পিয়ারুল শেখ নামে ১৫ বছরের এক কিশোরকে দু’হাজারের জাল নোট সহ গ্রেফতার করা হয়। এ মাসের ৪ তারিখ বৈষ্ণনগরেরই ১৭ মাইল থেকে দু’হাজারের দু’টি জাল নোট সহ পঞ্চায়েত সমিতির এক কংগ্রেসি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া তিনটি জাল নোট সম্ভবত কালার ফটোকপি করে করা হয়েছে। তাতে থ্রেড দিয়ে আসল নোটের চেহারা আনার চেষ্টা হয়েছে। তবে নোটের কাগজ নিম্নমানের।
মুর্শিদাবাদের ইসলামপুর থেকে ধৃত বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা আজিজুর রহমানের কাছে যে ৪০টি দু’হাজার টাকার জাল নোট মেলে, তা অফসেট প্রিন্ট হওয়ায় পুলিশকে আরও ভাবিয়ে তুলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়িতে আজিজুরের বাবা, মা, স্ত্রী, এক সন্তান এবং দুই দাদা ও তাঁদের পরিবার রয়েছে। শীতকালে আজিজুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সরষে খেতের পাশে মৌমাছি চাষ করতেন। অন্য সময় দিনমজুরের কাজ করেন। তবে পুলিশ জানতে পেরেছে, আগেও জালনোটের কারবার করলেও কখনও ধরা পড়েনি।
মালদহে থাকা এনআইয়ের এক আধিকারিক জানান, জেলায় ফের জাল নোটের কারবার নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। তাই কারা এর সঙ্গে জড়িত তা জানার চেষ্টা চলছে।