ডানকানের ১৪ বাগানে কর্মবিরতি শ্রমিকদের

চার মাস ধরে মজুরি ও রেশন না পাওয়ার অভিযোগ তুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির পথে নামলেন ডুয়ার্সে ডানকান গোষ্ঠীর চোদ্দটি চা বাগানের শ্রমিকেরা। সোমবার থেকে ওই কর্মবিরতি শুরু করেছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে লাগাতার আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাম ও ডান দুই পক্ষের শ্রমিক সংগঠনগুলিও।

Advertisement

নিলয় দাস

ফালাকাটা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০২:০৯
Share:

ফাঁকা ডামডিমা বাগান।—নিজস্ব চিত্র।

চার মাস ধরে মজুরি ও রেশন না পাওয়ার অভিযোগ তুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির পথে নামলেন ডুয়ার্সে ডানকান গোষ্ঠীর চোদ্দটি চা বাগানের শ্রমিকেরা। সোমবার থেকে ওই কর্মবিরতি শুরু করেছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে লাগাতার আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাম ও ডান দুই পক্ষের শ্রমিক সংগঠনগুলিও।

Advertisement

শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, কাজ করিয়েও প্রাপ্য মজুরি না মেটানোর বিষয়ে রাজ্য সরকারের শ্রম দফতরকে বহু বার বলেরও কোনও ফল মিলছে না। প্রয়োজনে মালিক পক্ষের হাত থেকে বাগান কেড়ে নিয়ে সমবায়ের মাধ্যমে বাগান পরিচালনার দায়িত্ব শ্রমিকদের হাতে তুলে দেবার দাবিও তুলেছেন শ্রমিকদের একাংশ। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেছেন, ‘‘এর আগে বৈঠকের পর ডানকান কর্তৃপক্ষ এক মাসের মজুরি শ্রমিকদের দিয়েছিলেন। সে সময় তাঁরা নিয়মিত মজুরি ও রেশন মেটাবে বলে কথা দেন। তবে আবার কেন, এই ধরনের ঘটনা ঘটছে তা আমি খতিয়ে দেখছি।’’

বাগান সূত্রে খবর, গত দেড় বছরের বেশী সময় ধরে ডানকান গোষ্ঠীর চা বাগান গুলিতে অচলাবস্থা চলছেন। মজুরি ও রেশন-সহ জ্বালানি সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ছিল। এমনকী, কয়েক কোটি টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কর্তৃপক্ষ মেটাননি বলে অভিযোগ। গত এক বছর ধরে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে মজুরি ও রেশন। ডানকান গোষ্ঠীর বাগান নিয়ে শ্রম দফতরকে কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করতে হয়েছে। সাময়িক সমাধান হলেও পরে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। গত ছ’মাস যাবত বাগানগুলির ২৫ হাজার শ্রমিকর তাদের রেশন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। চার মাস ধরে মিলছে না মজুরিও। কর্তৃপক্ষ মজুরি মেটাবেন বলে এর আগে তিন দফা দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। শেষবার তাঁরা ১১ জুলাই মজুরি দেবে বলে জানিয়ে দেন। তা না পেয়েই শেষ পর্যন্ত তাঁরা অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘটের পথে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে শ্রমিকদের দাবি।

Advertisement

শ্রমিকদের অভিযোগ, ‘‘মালিক পক্ষ চা বিক্রি করে মুনাফার টাকা ঘরে তুলেছেন। বাগান ও সেখানকার শ্রমিকদের প্রতি তাঁরা কোন নজর দিচ্ছেন না। ২০০২ সাল থেকে টানা ছ’বছর ধরে বিশ্ব বাজারে ডুয়ার্সের চায়ের মন্দা দশা চলাকালীন সময়ে বহু বাগান বন্ধ হলেও ডানকান এর বাগানগুলি বন্ধ হয়নি। পরবর্তী সময়ে কর্তৃপক্ষ বাগান নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ করে দেন। নিয়মিত পরিচর্যার পিছনে কোনও রকম ব্যয় না করায় পাতা কম মিলতে শুরু করে।’’ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার ফলে বাগানের আজ এই অবস্থা বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। ডানকান গোষ্ঠীর ডুয়ার্সের হান্টাপাড়া চা বাগানের শ্রমিক পম্পা বিশ্বকর্মার কথায়, ‘‘মজুরি ও রেশন না মেলায় চরম অভাবে দিন কাটাচ্ছি আমরা। দু বেলার খাবার জোটানো দায় হয়ে পড়েছে।’’

উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজওয়ান বলেছেন, ‘‘প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে মালিক পক্ষ সমস্যায় রয়েছে। সে কারণে শ্রমিকদের মজুরি কর্তৃপক্ষ মেটাতে পারছে না বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ এদিন বীরপাড়ার সহকারী লেবার কমিশনার কে ডেপুটেশন দেয় আরএস র চা শ্রমিক সংগঠন। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দ্বারস্থ হবেন ওই সংগঠনের নেতারা। আরএসপি নেতা গোপাল প্রধানের কথায়, ‘‘চায়ের বাজার মন্দা নয়। মালিক পক্ষের কারণে বাগানের এই অবস্থা।’’

বাগান বাঁচাও কমিটির আহবায়ক বিষ্ণু ঘাতানি বলেছেন, অনগ্রসর শ্রেণীর লোকজনকে কাজ করিয়ে টাকা না মিটিয়ে যে ভাবে মালিক পক্ষ প্রতারণা করছেন তার বিরুদ্ধে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব। বাগান গুলি মালিকের হাত থেকে কেড়ে তার পরিচালনার দায়িত্ব শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেছি আমরা। আদিবাসী নেতা জন বার্লার কথায়, ‘‘মজুরি না মেটানো পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। গেট মিটিং সহ ডুয়ার্স জুড়ে আন্দোলনে নামব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন