কৈশোর থেকেই চ্যালেঞ্জে নির্ভীক

দলের বিপদে শক্ত থাকত কিশোর পাপালির চোয়ালও

মনে পড়ে যাচ্ছে সেই দুপুরটা। অনূর্ধ্ব তেরোর একটি ক্রিকেট ম্যাচ চলছে শিলিগুড়ির কলেজ মাঠে। হাতে গোণা দর্শক। জলপাইগুড়ির একটি ক্লাবের সামনে পড়ে শিলিগুড়ির অগ্রগামীর বেশ কয়েকটা উইকেট পড়ে যায়।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০২:৫১
Share:

স্যালুট: ঋদ্বিমানের শতরান উদ্‌যাপন করছে খুদেরা, ঋদ্ধিরই পাড়ার কোচিং ক্যাম্পে। রবিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

মনে পড়ে যাচ্ছে সেই দুপুরটা। অনূর্ধ্ব তেরোর একটি ক্রিকেট ম্যাচ চলছে শিলিগুড়ির কলেজ মাঠে। হাতে গোণা দর্শক। জলপাইগুড়ির একটি ক্লাবের সামনে পড়ে শিলিগুড়ির অগ্রগামীর বেশ কয়েকটা উইকেট পড়ে যায়। ম্যাচ প্রায় হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ছোটখাট পাপালি নামল প্যাড ঠিক করতে করতে। আস্তে আস্তে ম্যাচ বার করে নিল একা হাতে।

Advertisement

ঋদ্ধিমান সাহার কোচ জয়ন্ত ভৌমিক রবিবার দুপুরে রাঁচীতে ছাত্রের টেস্ট সেঞ্চুরি দেখতে দেখতে বললেন, ‘‘সে দিন ওর চোখে মুখে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ইচ্ছেটা দেখেছিলাম। সেই ইচ্ছের সম্মান দিয়েছিলাম। ও আমাকে সেই সম্মান ফিরিয়ে দিল।’’

জয়ন্তবাবুর কথায়, এখন আর ঋদ্ধি চাপের মুখে পড়ে ভাল খেললে তাই অবাক হন না। সপ্তাহান্তে বন্ধুদের সঙ্গে লাটাগুড়ির বনাঞ্চলে ঘুরতে গিয়েও রিসর্টের ঘরে বসে ঋদ্ধির ইনিংস দেখে কাটালেন তিনি। শতরানের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ঋদ্ধিমানের এই শতরানের বেশ কিছু গুরুত্ব তুলে ধরতে চান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘একে বিপক্ষে যে দল রয়েছে, তারা অস্ট্রেলিয়া। এরকম একটা দলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে শতরান করা কৃতিত্বের তো বটেই। দ্বিতীয়ত, ঋদ্ধিমান যখন খেলতে নেমেছে তখন বিরাট কোহালিরা আউট হয়ে গিয়েছে। চেতেশ্বর পূজারা দলকে লড়াইতে ফিরিয়ে আনছে। এ সময় হাল ধরাটা বিরাট দায়িত্বপূর্ণ। ঠিক সেই কাজটাই করেছে ঋদ্ধিমান ওরফে পাপালি।’’

Advertisement

জয়ন্তবাবুর মতে এই সময় কোনও অঘটন ঘটলে ভারতের কাছে তা চাপের হয়ে যেত। এই রকম সময় নেমে এ ধরনের ইনংস খেলতে পারাটা যে কোনও ক্রিকেটারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাতে ‘কনফিডেন্স’ বাড়ে। আর ঋদ্ধিমান যখন এ ধরনের ইনিংস খেলছে তখন তা তাঁর কাছে আলাদা অনূভূতি, আলাদা আনন্দের কারণ হয়ে ওঠে বলে তিনি উচ্ছ্বসিত।

শনিবার দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে লাটাগুড়িতে গিয়েছেন জয়ন্তবাবু এবং তাঁর বন্ধুরা। ঠিক ছিল এদিন জঙ্গলে ঘুরতে বার হবেন। কিন্তু কোথায় কী। পূজারার সঙ্গে জুটি বেঁধে ঋদ্ধিমানের ব্যটিংয়ের দাপট তাঁদের আটকে দিয়েছে রিসর্টেই। জয়ন্তবাবু এবং কয়েকজন তাই আর বাইরে বার হননি।

উত্তরবঙ্গ সফরে এসে ঋদ্ধিমানের শতরানের খবর পেয়ে অভিনন্দন জানান ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস-ও। তিনি বলেন, ‘‘ওর জন্য আমরা গর্বিত। ও আরও অনেক দূর যাবে।’’

শিলিগুড়ির ক্রীড়ামহল, শহরে ঋদ্ধিমানের পরিবারের লোকেরা, পরিচিতরা সকলেই এই আনন্দের শরিক। ফেসবুকেও পরিচিতদের উচ্ছ্বাস ঋদ্ধিমানকে ঘিরে। টেস্টের দ্বিতীয় দিন খেলার পরে রাতে পাপালির সঙ্গে হোয়াট্সঅ্যাপে কথা হচ্ছিল শক্তিগড়ের বাসিন্দা মামা পার্থ গোস্বামীর। তিনি বলেন, ‘‘তখন ওকে বলেছিলাম তুই ইনিংসের সর্বোচ্চ রানটা করবি। ও বলেছিল দেখা যাক। কিন্তু ও কতটা সিরিয়াস ছিল এদিন ওর খেলা দেখার পর বুঝেছি। খেলার বিষয়ে সবেতেই ও সিরিয়াস।’’

শিলিগুড়িতে আই লিগের ফিরতি ডার্বির প্রস্তুতি নিয়ে কাজকর্মে এ দিন সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ক্রীড়া পরিষদের অফিসে এসেছিলেন মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতন ঘোষ এবং কয়েকজন কর্মকর্তারা। তাঁরা সেখানে বসেই ঋদ্ধিমানের খেলা দেখেন।

অরূপবাবু বলেন, ‘‘১০০ করা পর্যন্ত ও কোনও সুযোগ দেয়নি। ও যত খেলবে, ওর ঝুলিতে এ ধরনের ইনিংসের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকবে।’’ উচ্ছ্বসিত শিলিগুড়ির অগ্রগামী সঙ্ঘের উঠতি ক্রিকেটাররা। এই ক্লাবেই ঋদ্ধিমান খেলতেন। উইকেট কিপার ঋদ্ধিমান আর ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান দুই ক্ষেত্রেই আরও চমক দেখতে আগ্রহী শিলিগুড়ির ক্রিকেটপ্রেমীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন