গত ২৬ জানুয়ারির রাত। থানায় বড়বাবুর ঘরে জামাকাপড়ে ধুলো মেখে কাঁপতে কাঁপতে এক যুবক এসে ঢুকল। ঘরে ঢুকেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। তত ক্ষণে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের এনজেপি থানার ঘরে অফিসারদের ভিড় জমে গিয়েছে। কিছু ক্ষণ পর যুবকটি জানায়, রোজকার কাজ শেষ করে ফুলবাড়ির ক্যানেল রোড দিয়ে ফেরার সময় আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে চার দুষ্কৃতী সর্বস্ব লুঠ করে নিয়েছে মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা ৪ যুবক। বাইক, মোবাইল, ১০ হাজার টাকা সব নিয়ে গিয়েছে। কোনওক্রমে যুবকটিকে বসিয়ে শান্ত করে জল খাইয়ে কোনওক্রমে বাড়ি পাঠানো হয়।
একে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লুঠ, তার উপর প্রজাতন্ত্র দিবসের রাত, পুলিশ অফিসারেরা রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ক্যানেল রোডে তদন্তে গিয়েই প্রথম খটকা লাগে পুলিশের। ওই রাস্তায় থাকা একাধিক ট্রাকের চালক, খালাসি পুলিশকে জানিয়ে দেন, চোখে দেখা তো দূরের কথা লুঠের এমন ঘটনা তারা শোনেনওনি। সঙ্গে সঙ্গে যুবকের বক্তব্য অনুসারে লুঠ হওয়ায় মোবাইলটিতে নজরদারি করতে গিয়ে ঝোলা থেকে বার হল বেড়াল। পুলিশকে বোকা বানাতে গিয়ে উল্টে পুলিশের জালেই ধরা পড়ল যুবকটি।
বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিম ধনতলার বাসিন্দা, বুদ্ধদেব ছেত্রী নামের যুবকটিকে দুর্গাপুরের এক মহিলাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে পালিয়ে থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল। শুক্রবার সকালে আদালত থেকে তাকে পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ির ডিসি (পূর্ব) গৌরব লাল বলেন, ‘‘ধর্ষণের অভিযোগে ওই যুবককে ধরা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
কিন্তু ধর্ষণ করে পালিয়ে থাকার সময় বাইক, মোবাইল লুঠের গল্প কেন ফাঁদল বুদ্ধদেব!
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই মহিলাকে শুধু ধর্ষণ নয়, তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছিল অভিযুক্ত বুদ্ধদেব। এক সময় বিয়েও করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সম্প্রতি টাকার জন্য মহিলা চাপ দিতে শুরু করতেই বিপদে পড়ে বুদ্ধদেব। আংটি, পাথরের ব্যবসা করে সামান্য রোজগার থেকে ওই টাকা শোধ করার মতো অবস্থা তার এখন নেই। উপরন্তু, বাইকটি সেবক রোডের এক বেসরকারি ঋণদানকারী সংস্থার কাছ থেকে ঋণে কেনেন। মাস গেলে তার জন্য হাজার দেড়েক টাকাও গুণছিল বুদ্ধদেব। শেষে বাইকটি ট্রেনে করে বর্ধমান হয়ে দুর্গাপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। মহিলাকে টেলিফোন করে সেটিকে বিক্রি করে টাকা নিতে বলে।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, বাইকটি দুর্গাপুরে পাঠিয়ে একদিক বকেয়া মেটানোর ব্যবস্থা করলেও ঋণদানকারী সংস্থার হাত থেকে বাঁচার উপায় ছিল না। তাই সে বাইকটি চুরির গল্প ফাঁদে। সংস্থার পুলিশের অভিযোগের কপি জমা দিতে পারলেই মাসিক কিস্তি যেমন বন্ধ হত, তেমনই বাইকটি উদ্ধার না হলে কিছুদিন পর থেকে বীমার টাকা পাওয়ার রাস্তা খুলে যেত। বুদ্ধদেবের দাবি, ‘‘আমি কিছু করিনি। আমাকে ফাঁসিয়ে দিল।’’
মোবাইলটিতে নজরদারি করার পরেই দুর্গাপুরের মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে শিলিগুড়ি ডেকে আনা হয়। তার পরেই বুদ্ধদেবের মুখোশ খুলতে পুলিশের আর বেশি সময় লাগেনি।