ভাত বেড়ে কাটল রাত

রেস্তোরাঁর কাজ সেরে বাড়ি ফেরার আগেই ফোন করেছিলেন স্ত্রীকে। জেনে নিয়েছিলেন রাতের খাবারে কী আছে। বসে রইলেন স্ত্রী। আর ফিরলেন না স্বামী। শুক্রবার রাতে কাজের পরে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরবেন জানিয়ে ফোন রেখে দিয়েছিলেন সঞ্জয় সিংহ।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৪৯
Share:

গ্রেফতার: অনিচ্ছাকৃত খুনে অভিযুক্ত আরোহীরা। নিজস্ব চিত্র

রেস্তোরাঁর কাজ সেরে বাড়ি ফেরার আগেই ফোন করেছিলেন স্ত্রীকে। জেনে নিয়েছিলেন রাতের খাবারে কী আছে। বসে রইলেন স্ত্রী। আর ফিরলেন না স্বামী।

Advertisement

শুক্রবার রাতে কাজের পরে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরবেন জানিয়ে ফোন রেখে দিয়েছিলেন সঞ্জয় সিংহ। এরপর শিলিগুড়ির বিধানরোডের রেস্তোরা থেকে স্কুটি চালিয়ে রওনা হয়েছিলেন শালুগাড়ার কমলানগর এলাকায় নিজের বাড়ির পথে। কাছাকাছি পৌঁছে রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা খাওয়া, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব মরসুমেই রুটিন ছিল সঞ্জয়ের। কিন্তু শুক্রবার রাতে সেই রুটিনই সব এলোমেলো করে দিল। ফুটপাথে দাঁড়িয়ে চা খাওয়ার সময়েই বেপরোয়া গাড়ি ফুটপাতে উঠে পিষে দেয় সঞ্জয়কে। মাছের ঝোল-ভাত নিয়ে রাতভর স্বামীর অপেক্ষায় ছিলেন স্ত্রী শশী।

অন্তঃসত্ত্বা শশীদেবীকে প্রসবের জন্য আগামী মাসেই হাসপাতালে ভর্তি করানোর কথা। পরিচিতরা অবশ্য স্বামীর মৃত্যুর খবর তাঁকে জানাননি। সঞ্জয়ের একটি ছোট দুর্ঘটনা ঘটেছে, এমনই জানেন তিনি। সঞ্জয়বাবুর এক ভাই কর্মসূত্রে দিল্লি থাকেন। তিনি ফিরলে অন্ত্যেষ্টি হবে।

Advertisement

সঞ্জয় বরাবরই মিশুকে স্বভাবের ছিল বলে পড়শিদের দাবি। কারও কোনও সাহায্য দরকার হলে তিনি যতটা সম্ভব ততটাই পাশে থাকতেন বলেও জানিয়েছেন তাঁর প্রতিবেশীরা। এলাকার বাসিন্দা প্রবীণ মঙ্গর বলেন, ‘‘সকলেরই নানা প্রয়োজনে শিলিগুড়ি যেতে হতো। সঞ্জয় কারও প্রয়োজনের কথা শুনলে নিজেই সেই কাজ করে দিত।’’ সঞ্জয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে থানায় জড়ো হয়েছিলেন অনেকে। অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়া হতে পারে এমন খবর চাউর হয়ে যাওয়ায় ভক্তিনগর থানায় বিক্ষোভও দেখানো হয় বাসিন্দাদের তরফে।

সঞ্জয়ের ভগ্নিপতি দামোদর উপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা যদি হালকা শাস্তি পায় তবে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে। তাই আমাদের বিচার চাই। দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই।’’ বিচারের দাবিতেও স্লোগানও তোলেন তাঁরা।

তাঁর ছেলে হোক বা মেয়ে নিজের নামের আদ্যক্ষর দিয়েই নাম রাখবেন বলে ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন সঞ্জয়। তাঁর সেই ইচ্ছে অবশ্য পূরণ হওয়া অসম্ভব নয়, কিন্তু তাঁর স্ত্রী এবং গর্ভস্থ সন্তানের ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়েই উদ্বেগ ছড়িয়েছে শালুগাড়ার কমলাবাগানে।

বেপরোয়া

• জানুয়ারি, ১৯৯৯: নয়া দিল্লিতে এক শিল্পপতির বিএমডব্লিউর ধাক্কায় মৃত ছয়


• সেপ্টেম্বর, ২০০২: মুম্বইয়ে সলমন খানের গাড়ি পিষে দেয় চারজনকে, মৃত ১


• জানুয়ারি, ২০০৯: বেঙ্গালুরুতে মদ্যপ চালক ফুটপাতে উঠিয়ে দেয় গাড়ি, মৃত চার


• জানুয়ারি, ২০১৬: কলকাতায় রেড রোডে ভারতীয় বায়ুসেনা কর্মীকে পিষে দেয় এক ব্যবসায়ীর গাড়ি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement