অস্ত্রপাচারে অভিযুক্ত তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ

রাজ্যের বনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচারের অভিযোগ ওঠায় ফের অস্বস্তিতে পড়ল তৃণমূল। বনমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ শাসক দলের মাদ্রাসা শিক্ষক সংগঠনের নেতা বাতেন আলির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচারের অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদে ওই অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ পত্রের নিচে পাঁচ জনের নাম লেখা থাকলেও তাঁদের পরিচয়ের বিস্তারিত উল্লেখ নেই। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সচিব সৈয়দ নুরুস সালাম কোচবিহারের জেলা স্কুল পরিদর্শককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০২:০৫
Share:

রাজ্যের বনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচারের অভিযোগ ওঠায় ফের অস্বস্তিতে পড়ল তৃণমূল।

Advertisement

বনমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ শাসক দলের মাদ্রাসা শিক্ষক সংগঠনের নেতা বাতেন আলির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচারের অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদে ওই অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ পত্রের নিচে পাঁচ জনের নাম লেখা থাকলেও তাঁদের পরিচয়ের বিস্তারিত উল্লেখ নেই। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সচিব সৈয়দ নুরুস সালাম কোচবিহারের জেলা স্কুল পরিদর্শককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

ওই নির্দেশপত্র বুধবারই জেলা স্কুল পরিদর্শকের হাতে পৌঁছয়। বাতেনবাবু মাদ্রাসা বোর্ডের কোচবিহারের ডিস্ট্রিক্ট লেভেল ইন্সপেকশন টিমের (ডিএলআইটি) সদস্য। তিনি ওই অভিযোগকে কোনও গুরুত্ব দিতে চাননি। তিনি স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, কিছু অনৈতিক কাজের বিরোধিতা করায় দলেরই কয়েকজন তাঁকে অপদস্থ করার ষড়যন্ত্র করে ওই অভিযোগ তুলেছেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অব মাদ্রাসা এডুকেশনের সচিব বলেন, “নানা অভিযোগ আমার কাছে জমা পড়ে। সমস্ত ক্ষেত্রেই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিই।”

Advertisement

অতীতে তৃণমূল সাংসদ ইমরান আলির সঙ্গে বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলে বিরোধী দলের তরফে অভিযোগ উঠেছে। অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে। কোচবিহার জেলা নেতারাও এলাকার একজনের বিরুদ্ধে এখই ধরনের অভিযোগ ওঠায় বিব্রত।

বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “বাতেন আলিকে যতটুকু চিনি, তাতে এমন অভিযোগ শুনে খুব অবাকই হচ্ছি। অভিযোগ যখন উঠেছে, তখন তদন্ত করে দেখা হোক।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমি কলকাতায় বিধানসভায় আছি। কোচবিহারে ফিরে বিষয়টি নিয়ে ভাল করে খোঁজখবর নেব।”

তৃণমূল দলে কোচবিহারে বাতেন আলি পরিচিত নাম। বর্তমানে তিনি মাথাভাঙ্গা হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি শাসক দলের মাদ্রাসা শিক্ষক সংগঠনের দায়িত্বেও ছিলেন। সব সময়ই তাঁকে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতাদের পাশে দেখা যায়। এমনকী, ঘন ঘন কলকাতায় গিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি।

এক সময় তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের গাড়িতে দেখা যেত তাঁকে। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বাতেন আলিকে বনমন্ত্রীর সঙ্গে ঘুরতে দেখা যায়। ইদানীং বনমন্ত্রীর গাড়িতে তাঁকে দেখা যায় বলে দলের অনেকেই জানিয়েছেন। দলীয় সূত্রের খবর, মাস আটেক আগে বাতেন আলিকে ডিএলআইটির সদস্য করার জন্য নাম সুপারিশ করেন বনমন্ত্রী। দলের আরেক নেতা কাওসার আলম ওই পদে ছিলেন। তাঁকে সরিয়ে বাতেন আলিকে ওই পদে বসানো হয়।

ওই ঘটনার পর দুই গোষ্ঠীর বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। অনুমোদনহীন মাদ্রাসাগুলিকে অনুমোদন দেওয়ার আশ্বাস দিলে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলার অভিযোগ ওঠে বাতেনবাবুর বিরুদ্ধে। এবারে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি স্কুল ফাঁকি দেওয়া এবং বিভিন্ন ভাবে টাকা তোলার অভিযোগও রয়েছে। বাতেন আলি অবশ্য দাবি করেন, তিনি ওই টিমের সদস্য হওয়ার জানতে পারেন, কোটি কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার পর কাওসার আলম, ওই টিমের আরেক সদস্য মজিবর রহমান সহ দলের চারজন নেতা এবং এক মাদ্রাসার দায়িত্বে থাকা স্কুল পরিদর্শক তাঁকে অপদস্থ করার চেষ্টা শুরু করেন।

তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকলে সরাসরি করুক। তা না করে পরিচয়হীন কিছু লোকের নাম লিখে অভিযোগ করা হচ্ছে কেন? তদন্ত হোক, এটা আমিও চাই। তবে সব কিছুর তদন্ত করতে হবে। ওই পাঁচ নেতা অল্প কয়েকদিনের মধ্যে জমি, বাড়ি, গাড়ি কিনেছেন। সেই টাকা উনি কোথা থেকে পেলেন?”

কাওসার আলমের সঙ্গে অবশ্য ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। মজিবর রহমান বলেন, “ওই বিষয়টি আমি জানি না। বাতেন আলির বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ উঠছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন