অস্ত্র আইন উপেক্ষা করে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির বেশ কিছু এলাকার বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তা রক্ষীদের একাংশের বিরুদ্ধে । জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলা আইনি পরিষেবা সমিতির পক্ষ থেকে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার এবং শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, উত্তরবঙ্গের সাত জেলায় ২০টিরও বেশি বেসরকারি সংস্থা আইন না মেনে ‘গানম্যান’ নিয়োগ করছে। আইনি পরিষেবা সমিতির তরফে সংস্থাগুলিকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের অফিস থেকে তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
সম্প্রতি শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটেও চিঠি পাঠিয়ে বেআইনি ভাবে অস্ত্র ব্যবহার বন্ধের অনুরোধ করেছে জলপাইগুড়ির আইনি পরিষেবা সমিতি, ওই সমিতির সম্পাদক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “এ বিষয়ে কিছুদিন আগেই শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকে দু বার চিঠি দিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করার অনুরোধ করা হয়েছে। কোনও সাড়া মেলেনি।”
দার্জিলিং জেলা আইনি পরিষেবা সমিতির পক্ষ থেকেও বিধি ভেঙে অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তোলা হয়েছে। দার্জিলিং জেলা আইনি পরিষেবা সমিতির সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, “শুধু শিলিগুড়ি নয়, উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলোতেও এই রকম সংস্থাগুলি বেআইনিভাবে রাইফেল ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশকেও জানানো হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।” অমিতবাবু জানান, বছর খানেক আগে এনজেপি এলাকায় এক নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে এক ব্যক্তি খুন হন। ওই বন্দুকধারী অন্যের নামে নেওয়া লাইসেন্সে বন্দুক ব্যবহার করেছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, যে কোনও ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার জন্য আবেদন জানালে, তার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না তা পুলিশ যাচাই করে দেখবে। তার পরেই পুলিশ আবেদন মঞ্জুর করে। তবে কোনও কারণে ওই ব্যক্তির পরিচয় কিংবা ব্যক্তি সম্পর্কে কোনও রকম সন্দেহ থাকলে আবেদন বাতিলও করতে পারে। একজন সর্বাধিক তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে পারেন। তবে এই লাইসেন্স হস্তান্তর করা যায় না। যাঁর নামে লাইসেন্স, তাঁকেই আগ্নোয়স্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়। নিদির্ষ্ট সময়ের পর তা নবীকরণ করাতে হয়।
এ বিষয়ে শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসি অংমু গ্যামসো পাল বলেন, “কোনও ব্যক্তি নিজের নামে নেওয়া লাইসেন্স-সহ আগ্নেয়াস্ত্র অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দিতে পারেন না। তবে কোনও চিঠি পাঠানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন কোনও সংস্থা শিলিগুড়ি পুলিশের অধীনে রয়েছে কি না, তা আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। অভিযোগ সত্যি হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, “আমাদের আভ্যন্তরীণ বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার যা করার করবেন।”
শিলিগুড়ির এক নিরাপত্তারক্ষী সংস্থার কর্ণধার বিজয় সরকার জানান, তাঁরা ‘গানম্যান’ রাখার ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদেরই সুযোগ দেন। তিনি বলেন, “বাইরের কোনও লোককে আমরা রেখে উটকো ঝুট ঝামেলা বাড়াতে চাই না। তবে কেউ এমন আইনবিরুদ্ধ কাজ করছে কি না, তা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়।” অন্য এক সংস্থার ম্যানেজার সুপ্রিয় চৌধুরী বলেন, “ব্যক্তিগত লাইসেন্স না থাকলে গানম্যান নিয়োগ করা হয় না। তবে কয়েকটি সংস্থা এমন কাজ করে বলে শুনেছি। পুলিশের ব্যপারটি দেখা উচিত।”