আদালত চত্বরে এ ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে মোটরবাইক, মেলে না শেড বা অন্য পরিকাঠামো। —নিজস্ব চিত্র।
বসার নির্দিষ্ট জায়গা বা শেড নেই। সিঁড়ি, করিডর থেকে বারান্দা, ফাঁকা খুঁজে বসে পড়ছেন বিচারপ্রার্থীরা। অনুমতি ছাড়াই বসে গিয়েছে একের পর এক দোকান। স্ট্যান্ড নেই। যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকে বাইক-সাইকেল। মাঝেমধ্যে বাইক, সাইকেল চুরির অভিযোগও উঠছে। উত্তর দিনাজপুর জেল আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নূন্যতম কোনও পরিষেবা মেলে না বলে অভিযোগ।
বর্তমান পরিকাঠামোয় অবশ্য শুধু বিচারপ্রার্থীরা নন, আইনজীবীদেরও সমস্যায় পড়তে হয়। বার অ্যাসোসিয়েশনের কোনও পৃথক গ্রন্থাগার নেই। তারফলে জরুরি কোনও মামলার তথ্য জোগাড় করতে আইনজীবীদের নাকাল হতে হয় বলে অভিযোগ। স্থায়ী ভবন না থাকায়, গাছতলায় বসে কাজ করতে হয় আদালতের মুহুরিদেরও। জেলা আদালত গঠনের পর থেকেই পরিকাঠামোর নানা খামতি রয়েছে বলে অভিযোগ। আইনজীবীদের একাংশের দাবি, আদালতের পরিকাঠামো ফেরাতে প্রশাসনের তরফেও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
রায়গঞ্জে প্রায় ১৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আদালত চত্বর রয়েছে। আদালত চত্বরেই বেশ কিছু খাবারের দোকান বসে গিয়েছে অভিযোগ। একাংশ দোকানের কোনও অনুমতিও নেই বলে অভিযোগ। পরিকল্পনা ছাড়া দোকান বসে যাওয়ায় আদালত চত্বর যেমন ক্রমশ ঘিঞ্জি হয়ে পড়ছে, তেমনিই ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ করতেও সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা। আদালত চত্বরে এসে বিচারপ্রার্থীদেরই সর্বাধিক দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থী বা তাঁদের সঙ্গীদের বসার কোনও শেড নেই। চড়া রোদ বা বৃষ্টি উপেক্ষা করতে আদালত ভবনের বারান্দা, কড়িডরে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না বলে বিচারপ্রার্থীদের দাবি। সে কারণেই করিডরে সার দিয়ে বসে থাকার দৃশ্যও দেখা যায় রায়গঞ্জের আদালতে। যার জেরে আইনজীবী থেকে বিচারপ্রার্থী সকলেরই চলাচলের সমস্যা হয়। সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নবকুমার রায়। সভাপতির অভিযোগ, “আদালত চত্বরে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। সে সব সমস্যা নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হলেও, কোনও ফল মেলেনি। সমস্যার কথা হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে।”
পৃথক গ্রন্থাগার না থাকা সহ সাইকেল-বাইক স্ট্যান্ড না থাকার কারণেও সমস্যায় পড়তে হয় বলে আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ। জেলা আদালতে ৩২১ জন আইনজীবী এবং ৯০ জন মহুরি রয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন অন্তত শ’পাঁচেক বিচারপ্রার্থী আদালতে আসেন। সকলেরই বাইক-সাইকেল রাখতে সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ। অনেক সময়ে আদালত গেটের মুখেই বাইক-সাইকেল দাঁড়িয়ে থাকায় ভবনে ঢোকাই সমস্যা হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নজরদারির অভাবে বাইক-সাইকেল চুরির প্রবণতাও ক্রমশ বাড়ছে বলে আইনজীবীরাই অভিযোগ করেছেন। পৃথক স্ট্যান্ড থাকলে এই প্রবণতা এড়ানো যেত বলে দাবি। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ বলেন, “আদালত চত্বরের পরিকাঠামোর উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত পদক্ষেপ হবে।”
সমস্যা রয়েছে শৌচালয়েরও। সাধারণ বিচারপ্রার্থী বা মুহুরিদের জন্য কোনও শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই। মহুরি সংগঠনের সভাপতি বিধুভূষণ দাসের অভিযোগ, “শৌচালয়ের সমস্যা তো রয়েইছে। তবে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল নিজস্ব অফিস না থাকায় প্রতিদিনই কাজে প্রচুর সমস্যায় পড়তে হয়। সংগঠনের তরফেও নানা মহলে দাবি জানানো হয়েছে।” পৃথক ভবন না থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে গাছতলায় বসেই কাজ করতে হয় জেলা আদালতের মহুরিদের।
বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর দিনাজপুর জেলা আদালতকে ‘মডেল কোর্ট’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব রয়েছে। সেই প্রস্তাব কার্যকর হলে, আদালত চত্বরের পরিকাঠামো উন্নতি হতে পারে বলে আইনজীবীদের একাংশের দাবি।