সুনসান বাজার।—নিজস্ব চিত্র।
এক শ্রমিকের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ নিয়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ‘আন্দোলনে’-র জেরে গত দুই দিন ধরে শিলিগুড়ি পাইকারি বাজারে একাংশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। গত শনিবার এবং রবিবার বাজারের ৫৩টি আলু-পেঁয়াজের দোকান বন্ধ হয়ে রয়েছে। গত সপ্তাহেই ব্যবসায়ীদের তরফে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী, পুলিশ, প্রশাসন এবং শ্রম দফতরে বিস্তারিতভাবে সব জানানো হয়েছে।
পুজোর মাত্র দুইদিন আগেই পাইকারি বাজারের এই অবস্থায় আলু, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ, সোমবার শিলিগুড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দুই পক্ষকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। সম্প্রতি পাইকারি মাছ বাজারেও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে দাম সহ নানা বিষয় নিয়ে আড়াতদারদের গোলমাল হয়। তৃণমূলের খুচরো মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ না কিনে আন্দোলনে নামেন। এতে গোটা শিলিগুড়ি শহরের বাজারগুলিতে মাছের আকাল দেখা দেয়।
এর আগেও গত জুলাই মাসে নতুন মজুরি চুক্তির দাবিতে তৃণমূলের সংগঠনটি আলু পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে আচমকা পাঁচদিন বন্ধ ডাকে বলে অভিযোগ। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন বলে অভিযোগ করেন। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের এহেন একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচির জেরে পাইকারি বাজারে মাঝে মধ্যেই অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। এতে বহু সরবরাহকারী ইতিমধ্যে বিহারে চলে যাচ্ছেন বলেও ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল বন্ধ-ধর্মঘটের বিপক্ষে থাকলেও তাঁদের দলের সংগঠন কীভাবে এমন কাজ দিনের পর দিন করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “পুজোর মুখে এমন হলে চলবে না। আমি আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি তো বটেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। দ্রুত দুই পক্ষকে বসে সমস্যা মেটাতে বলা হয়েছে।” আর শিলিগুড়ি পাইকারি বাজার কমিটির সচিব সুব্রত দাস বলেন, “বিষয়টি পুরোটাই দ্বিপাক্ষিক। শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে সমস্যা। বিভিন্ন স্তরে কথাবার্তা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যা মিটবে।”
পাইকারি বাজার সূত্রের খবর, গত ২৫ অগস্ট পাইকারি বাজারে বেচন চৌধুরী (৫৫) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তৃণমূলের সংগঠনটির দাবি, “কর্মরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে বেচন মারা গিয়েছেন। তাই তাঁর পরিবারের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ মালিকপক্ষকে দিতে হবে। মালিকক্ষ তা ঠিক মতো না দেওয়ায় সমস্যা বাড়ছে।”
ব্যবসায়ীদের পাল্টা অভিযোগ, মৃতের পরিবারকে ইতিমধ্যে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর পরেও ক্ষতিপূরণের দাবি ওঠায় তা পুজোর পর আলোচনার কথা বলা হয়। তাতে শ্রমিক সংগঠনটি রাজি হয়নি। উল্টে, ওই শ্রমিক যে গদিতে কাজ করতেন, সেখানে গত সপ্তাহে শ্রমিকেরা কাজ করা বন্ধ করে দেন। বাকি ব্যবসায়ারী ওই গদি মালিকের পাশে দাঁড়ানোয় গত দুই দিন ধরে ওই সংগঠনের কেউ কাজ করছেন না। গদিগুলি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে হয়েছে। গত শনিবার কয়েকজন মালিক নিজেরাই গাড়িতে মালপত্র তোলার কাজও করেছেন।
বাজারের আলু ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাম অবতার প্রসাদ বলেন, “আইএনটিটিইউসি কোনও কথাই শুনতে চাইছে না। আমরা ভয়ে আছি। জোর করে শ্রমিকদের কাজ করতে মানা করে দিয়েছে। এমন চললে তো পাইকারি বাজার বন্ধ হয়ে যাবে।” শিলিগুড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ওমপ্রকাশ অগ্রবাল বলেন, “আমাদের আশা, সোমবারের বৈঠকে সমস্যা মিটবে।”
দার্জিলিং জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি অরূপরতন ঘোষের অবশ্য দাবি, “ওই শ্রমিকের পরিবারকে ২২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। আরও কিছু টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। আমাদের সঙ্গে কথা না বলে উল্টো কথা বলা হচ্ছে।” তিনি জানান, আমরাও বন্ধ, ধর্মঘটের বিপক্ষে। কিন্তু অচলাবস্থা মালিকেরাই তৈরি করেছেন। তাই শ্রমিকেরা বাধা হয়ে কাজ বন্ধ রেখেছেন।