সরকারি সহায়তা নেই। চাষ পদ্ধতি শেখানোর জন্যে কর্মশালাও নেই। চারা কিনতে গিয়ে ঠকতেও হয়েছে। এত সবের পরেও লাভের মুখ দেখেছেন আপেল কুলের চাষিরা। রাজগঞ্জ ব্লকের তিস্তা পাড়ের গ্রাম টাকিমারিতে আপেল কুল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এবারের মরসুমে গ্রামের বেশির ভাগ চাষিই আপেল কুল চাষ করতে চাইছেন।
টাকিমারির আলু চাষি অধীর দাস আলুখেত থেকে মাত্র সাত কাঠা জমি নিয়ে পরীক্ষা করার ভঙ্গিতে আপেলকুলের চাষ শুরু করেছিলেন। সেই প্রচেষ্টাতেই সোনা ফলেছে তাঁর। প্রায় ১০ কুইন্টাল আপেল কুল ফলিয়ে গ্রামের সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের তিস্তা নদীর ডান তীরের গ্রাম টাকিমারিতে আপেল কুল তাই আলোচনার বিষয়ও হয়ে উঠেছে।
এবারে আগামী মরসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই গ্রামের চাষিদের মধ্যে অনেকেই আপেল কুল চাষ করবেন বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টাকিমারির তিস্তার একেবারে ধার ঘেঁষেই বাড়ি অধীর দাসের। অধীরবাবুর কথায়, “গত মরসুমে পাশের গ্রামের দুই একজন চাষিকে আপেল কুল চাষ করতে দেখি। গাছ ফলে ভরে যাওয়ার পর ভাল দামও মিলেছে বলে জানতে পারি। গত বছরের মার্চ মাসেই খোঁজ খবর নিয়ে বর্ধমান থেকে চারা আনতে চলে যাই।”
বর্ধমান থেকে চারা প্রতি ১২০ টাকা করে দাম দিয়ে ৭০টিরও বেশি চারা আনেন তিনি। এপ্রিল মাসের শুরুতেই চারা লাগিয়ে বাগানের পরিচর্যা শুরু করেন তিনি। অক্টোবরের শেষ দিক থেকেই গাছে ফুল সহ ফল দেখা যেতে থাকে। এর পর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি একটানা ফল মিলেছে। গড়ে একটি গাছ থেকেই ১৫ কেজি করে ফল পেয়েছেন তিনি।
টাকিমারির আরেক আপেল কুলের চাষি প্রতাপ দাসও একেকটি গাছ থেকে ১৩ থেকে ১৬ কেজি করে ফল পেয়েছেন। শিলিগুড়ির পাইকারি ফল ব্যবসায়ীরা নিজেরাই টাকিমারিতে এসে যোগাযোগ করে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে ফলও কিনে নিয়েছেন বলে জানান তাঁরা। মার্চ মাস পড়তেই চা গাছের মতো করে গাছকে ছেঁটে দিয়ে পরিচর্যা করলেই ফের একই হারে আগামী বছরেও ফল মিলবে বলে চাষিরা জানান। বহুবর্ষজীবি এই আপেল কুল যে লাভদায়ক চাষ তা চাষিরা নিজেরা নিজেদের মত করে বুঝে নিয়েছেন।
জলপাইগুড়ি জেলা স্তর থেকে কোনও সাহায্য বা পরামর্শ মেলেনি। জেলা হর্টিকালচার আধিকারিক শুভাশিস গিরি বলেন, “কুল জাতীয় ফলের ক্ষেত্রে দফতরের কোনও প্রকল্প এখনো গৃহীত না হওয়ায় আমরা আপেল কুল নিয়ে এগোতে পারিনি। কিন্তু আপেল কুল দক্ষিণবঙ্গের বাগনান এবং কৃষ্ণনগরের বেসরকারি নার্সারিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা চারা প্রতি দামে কিনতে পাওয়া যায়। টাকিমারিতে চাষিরা ১০০ টাকারও বেশি দরে যে চারা কিনেছেন তা ন্যায্যমূল্যে কেনা হয়নি বলেই মনে হচ্ছে।”
তবে আপেল কুল চাষে ব্যাপক লাভের সুযোগ থাকায় এখন জলপাইগুড়ি জেলার চাষিরা উৎসাহিত হহওয়ায় সরকারি তরফে কিছু চিন্তাভাবনা হচ্ছে বলে দাবি করেন শুভাশিসবাবু।