আর্সেনিক-মুক্ত জলের দাবিই উঠছে ভোটে

নলকূপ কিংবা নলবাহিত পানীয় জল থাকলেই মালদহের সমস্যা মিটবে না। এটা নেতা-কর্তা-আমলারা সকলেই জানেন। জানেন আম-বাসিন্দারাও। কারণ বিপদ আরও গভীরে। তা হল, আর্সেনিক। মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলে আর্সেনিকের মাত্রা মারাত্মক। সরকারি তরফে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল প্রকল্পের কথাও ঘোষমা হয়েছে। কিছু এলাকায় কাজও হয়েছে। কিন্তু, যতটা আড়ম্বর, ততটা কাজ হয়নি।

Advertisement

সায়নী মুন্সি

মালদহ শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৩
Share:

এমন জলের ব্যবসাই বাড়ছে শহরে। —নিজস্ব চিত্র।

নলকূপ কিংবা নলবাহিত পানীয় জল থাকলেই মালদহের সমস্যা মিটবে না। এটা নেতা-কর্তা-আমলারা সকলেই জানেন। জানেন আম-বাসিন্দারাও। কারণ বিপদ আরও গভীরে। তা হল, আর্সেনিক। মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলে আর্সেনিকের মাত্রা মারাত্মক। সরকারি তরফে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল প্রকল্পের কথাও ঘোষমা হয়েছে। কিছু এলাকায় কাজও হয়েছে। কিন্তু, যতটা আড়ম্বর, ততটা কাজ হয়নি। ফলে, শহর ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই এখন ভরসা রাখেন বেসরকারি সংস্থার সরবরাহ করা পানীয় জলের উপরে। তাতেই শহরের নানা এলাকায় জাঁকিয়ে বসছে জলের ব্যবসা।

Advertisement

জেলা শিল্প দফতরের তথ্য অনুযায়ী, অনুমোদন প্রাপ্ত পানীয় জল সরবরাহকারীর সংখ্যা সাতটি। কিন্তু, শহরে পানীয় জল তুলে পরিস্রুত করে বাজারে বিক্রি করছে অনেক সংস্থাই। কটি সংস্থার সরকারি অনুমোদন রয়েছে তাও স্পষ্ট নয় পুরসভা কিংবা প্রশাসনের কাছে। শহরের শিক্ষাবিদ পুষ্পজিৎ রায় বলেন, “প্রশাসনিক স্তরে অভিযোগ, অনুযোগ না করে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন হতে হবে। সকলে মিলে পরিস্রুত পানীয় জলের দাবিতে সরব হতে হবে।” প্রশাসনের একটি সূত্র অবশ্য দাবি করছে, মানিকচকের শঙ্করটোলা ঘাট থেকে গঙ্গার আর্সেনিকমুক্ত জল শহরে আনা হচ্ছে। তবে তাতে পানীয় জলের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে বলে মনে করেন না অনেকেই।

মালদহ পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর বিজেপি নেতা অম্লান ভাদুড়ি বলেন, “এখানকার মানুষের ধারণা, পুরসভার জল পরিষ্কার নয়। তা ছাড়া, মালদহে ডায়রিয়া-সহ অন্য জলবাহিত রোগ বেশি হয়। তাই সবাই বেসরকারি সংস্থার জল কেনার দিকে ঝুঁকেছেন।” জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যনির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার ঋতম ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেন, দরিয়াপুরের কাছে একটি ‘ওয়াটার প্ল্যান্ট’ বসানোর কাজ চলছে। তাঁর কথায়, “কাজ শেষ হলেই আন্তর্জাতিক স্তরের বিশুদ্ধ পানীয় জল উৎপাদন হবে। তবে বাজারে আনতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি দরকার। তা সময়সাপেক্ষ। সরকারি ওই উদ্যোগ কার্যকর হলে পিছু হঠতে বাধ্য হবে অন্য সংস্থা।”

Advertisement

পুরভোটের বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী গায়ত্রী ঘোষ বললেন, “ন’বছর আগে রাজ্যে বাম আমলে মহানন্দার জল আর্সেনিক মুক্ত করে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। পুরবোর্ড বদল হওয়ায় সেটি আর ফলপ্রসূ হয়নি। আমরা এ বার ক্ষমতা দখল করতে পারলে আগে ওই প্রকল্পটিকেই চালু করার ব্যবস্থা করব।”

২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির প্রার্থী মানবেন্দ্র চক্রবর্তী অবশ্য মনে করেন, সরকারি স্তরে পরিস্রুত জল দিতে না পারলে বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে হবে। তাঁর মতে, “এতে বেকারদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। চাকরির যা অবস্থা তাতে বেকার কিছু তরুণ যদি পরিশুদ্ধ জল বিক্রি করেও উর্পাজন করেন তাতে বাধা নেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা হয় না। তাই জিতলে আগে খতিয়ে দেখতে চাইব কারা কারা পরিশুদ্ধ পানীয় জল বিক্রি করে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা হবে।”

বস্তুত, সরকারি ভাবে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সে জন্য পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের নানা এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে। তাই জল তুলে তা পরিস্রুত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল পুরসভার উদ্যোগেই। ইংরেজবাজার শহর জুড়ে প্রায় ৭৫টি এমন জলাধার রয়েছে। প্রতিটি ওর্য়াডেই কমপক্ষে চারটি করে রয়েছে। লক্ষাধিক টাকা খরচ করে সাধারণ মানুষের জন্য নানা ওয়ার্ডে জলাধার হয়েছে। কিন্তু, কোথাও তালাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। কোথাও আবার জলাধারের নলগুলি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষ জলাধারগুলি থেকে জল নিতে আগ্রহী হন না। কারণ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। সেগুলি নিয়মিত পরিস্কার করাও হয় না। রাজ্যের মন্ত্রী তথা পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “শহরের প্রতিটি ওর্য়াডেই ৩ থেকে ৪টি করে জলাধার বসানো হয়েছে। সেই সংখ্যা বাড়ানো হবে। যেগুলি বন্ধ তা দেখে মেরামত করা হবে।”

ইংরেজবাজার পুরসভার প্রতিটি ওর্য়াডের যেমন মাধবনগর, মকদমপুর, সর্বমঙ্গলা পল্লি, সুভাষ পল্লি, কোঠাবাড়ি, গয়েশপুর, পিরোজপুর, পিঁয়াজি মোড়, বাঁশ বাড়ি এলাকায় গেলে দেখা যায় পুরসভার উদ্যোগে গড়ে তোলা পরিস্রুত পানীয় জলের জলাধারগুলির দুরবস্থারছবি। তবে কৃষ্ণেন্দুবাবুর দাবি, “এই ছবি আগামী দিনে আরও বদলে যাবে।” সর্বত্রই পর্যাপ্ত পরিস্রুত পানীয় জল মিলবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আগামী পুরবোর্ড মালদহ শহরের জল-ছবি বদলাতে পারে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়। (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন