জমে উঠছে মদনমোহনের রাস। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
বছরখানেক পরে ফের বাজল নহবত। ফুলে ও আলোয় সাজানো হয়েছে মন্দির। কাছেই পড়েছে সার্কাসের তাঁবু, নাগরদোলা, টয়ট্রেন। মেলা বসছে। মদনমোহনের রাসোৎসব শুরু হল মহাসমারোহে।
রাজাদের আমলের এই উৎসব কোচবিহারের নিজস্ব পরিচয়ের চিহ্ন। এখন রাজারা নেই। কিন্তু মদনমোহন মন্দিরের রাস এখন যেন সারা কোচবিহারেরই উৎসব হয়ে উঠেছে। রাসচক্রটি তৈরি করেছেন আলতাফ মিঞা। নহবত বেজেছে ভগীরথ ব্যাধের সানাইয়ে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮১২ সালে কোচবিহারের ভেটাগুড়িতে মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের আমলে প্রথম রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয়। কোচবিহারের জেলাশাসক তথা দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি রীতি মেনে রাতে বিশেষ পুজোর পর রাসচক্র ঘুরিয়ে ওই উৎসবের সূচনা করেন। দিনভর উপোস থেকে জেলাশাসক পি উল্গানাথন পুরোহিতের পাশে বসে মন্ত্রোচ্চারণও করেন। জেলাশাসক বলেন, “সত্যিই এ এক অন্য অনুভূতি। কোচবিহারের সমস্ত বাসিন্দার মঙ্গল চেয়ে প্রার্থনা করেছি।” বুধবার রাতে রাসমেলার উদ্বোধন করেন রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “এবারেও উত্তরবঙ্গের অন্যতম সর্ববৃহৎ এই মেলায় জনজোয়ার হবে।”
রাসমেলা ঘিরে কোচবিহার জুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে জেলা পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, এদিন থেকে কোচবিহার পুরসভা ও লাগোয়া এলাকায় নাকাবন্দি করে নজরদারি শুরু হয়েছে। অসমগামী যানবাহনে তল্লাশি হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়েও নিয়মিত বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। মেলার প্রবেশ পথে ডোরফ্রেম, মেটাল ডিটেক্টর বসানো হয়েছে। মেলা চত্বরে ক্লোজড সার্কিট টিভি, ওয়াচ টাওয়ার বসান হয়েছে। তৈরি হয়েছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প, লকআপ, এমনকি খোদ পুলিশ সুপারের বসবার জন্য নির্দিষ্ট অফিস। মেলায় উপচে পড়া ভিড় হবে। জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য নেওয়া হচ্ছে মূলস্রোতে ফিরে আসা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির লিঙ্কম্যানদের। কোচবিহারে পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “যে সব সোর্স রয়েছে, তার সব কাজে লাগান হবে।” ইভটিজিং রোখা, যান নিয়ন্ত্রণ, শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। এ দিন রাসমেলা নিয়ে জেলা পুলিশের তরফে একটি গাইড ম্যাপও প্রকাশ করা হয়।
মেলায় সার্কাস থেকে শুরু করে রকমারি খাবার, প্রসাধনী সামগ্রী থেকে আসবাবপত্র মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার স্টল থাকছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্টলে বিকিকিনিও শুরু হয়েছে। কোচবিহার পুরসভার চেয়ারপার্সন রেবা কুন্ডু বলেন, “এ বার ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেলা চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে মেলা পুরোপুরি জমজমাট হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।” মেলার মাঠে তৈরি সাংস্কৃতিক মঞ্চে খ্যাতনামা শিল্পীদের নিয়ে সংগীতানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছে পুরসভা কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে মদনমোহন মন্দির চত্বরের মঞ্চে যাত্রা, কীর্তন, জাদু প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে দেবোত্তর ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ। গত ডিসেম্বরে সানাই বাদক হরিশংকর বিনবংশীর মৃত্যুর পর নহবত বন্ধ হয়ে যায় । এদিন ভগীরথ ব্যাধ নামে সানাই বাদককে অস্থায়ীভাবে ওই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে রাসে মদনমোহন মন্দিরে নহবত চালুতে খুশি বাসিন্দারা।