উত্তরের কড়চা

বয়সের সঙ্গে নাকি জেল্লা বেড়েছে। গাঢ় হয়েছে গায়ের লালচে রঙ। পঁচাত্তরে পা দিয়েও তার অনুরাগীর সংখ্যা কমেনি। পোশাকি নাম ক্ষীর কালাকাঁদ। পরিচিতরা ‘ভাঙাঘরের কালাকাঁদ’ বলে থাকেন। অনেকে বলেন, কড়াপাকের কালাকাঁদ। সেই কালাকাঁদের হীরক জয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু করেছে জলপাইগুড়ির ‘ঢাকেশ্বরী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের’ মালিক রাজা পাল। জলপাইগুড়ি শহরেই জন্ম হলেও, ক্ষীর কালাকাঁদের খ্যাতি রয়েছে আশেপাশের শহরেও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০২:২৪
Share:

রাজার কালাকাঁদ

Advertisement

ভাঙাঘরের হীরকছটা

বয়সের সঙ্গে নাকি জেল্লা বেড়েছে। গাঢ় হয়েছে গায়ের লালচে রঙ। পঁচাত্তরে পা দিয়েও তার অনুরাগীর সংখ্যা কমেনি। পোশাকি নাম ক্ষীর কালাকাঁদ। পরিচিতরা ‘ভাঙাঘরের কালাকাঁদ’ বলে থাকেন। অনেকে বলেন, কড়াপাকের কালাকাঁদ। সেই কালাকাঁদের হীরক জয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু করেছে জলপাইগুড়ির ‘ঢাকেশ্বরী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের’ মালিক রাজা পাল। জলপাইগুড়ি শহরেই জন্ম হলেও, ক্ষীর কালাকাঁদের খ্যাতি রয়েছে আশেপাশের শহরেও। শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলার মিষ্টির দোকানে নববর্ষ, রংখেলা, অষ্টমী, বিজয়া দশমী ভাইফোঁটার মতো উত্‌সবের দিনগুলিতে ভোর থেকে গ্রাহকদের লাইন পড়ে। সারা রাত ধরে ভিয়েন চলার পরে, ভোর রাতে বড় পাত্রে লাল রঙের মন্ডকে সমান করে চৌকো আকার দেওয়া হয়। উত্‌সবের দিনগুলিতে সকাল না-গড়াতেই কালাকাঁদ নিঃশেষ হয়ে যায়। গড়পড়তা দিনেও দেড় হাজার পিস কালাকাঁদ বিক্রি হয়। দাম সাধ্যের মধ্যেই, সাত টাকা। রাজাবাবুর ঠাকুরদা নারায়ণচন্দ্র পালের হাতে মিষ্টির দোকানের প্রতিষ্ঠা। তবে তাঁর ছেলে দুলালচন্দ্র পালের হাতে জন্ম নেয় নরম, লালচে কালাকাঁদ। অনেকে দাবি করেন, ছানার সঙ্গে গুড়ও মেশানো হয়, না হলে এই লালচে রঙ হয় কী করে? অনেকে বলেন, এ হল কড়াপাকের কলাকাঁদ। রাজা জানান, গুড় নয়, কড়াপাকও নয়। ছানার সঙ্গে বেশি করে ক্ষীর মেশানো হয় বলেই লালচে রং হয়। আর তাই মুখে দিলেই কালাকাঁদ মাখনের মতো গলতে শুরু করে। কিন্তু ‘ভাঙাঘরের কালাকাঁদ’ কেন? জানা গেল, বছর ২০ আগে সংস্কারের জন্য দোকান একবার ভাঙা হয়েছিল। তখন থেকে মিষ্টির নাম হয়, ‘ভাঙাঘরের কালাকাঁদ।’ ৭৫ বছরে বদলেছে অনেক কিছু। দোকান ও দরমার বেড়া থেকে পাকা দেওয়াল, শাটার-টানা দরজায় উন্নত হয়েছে। কিন্তু ক্ষীর আর ছানার অনুপাতটা বদলায়নি, দাবি রাজাবাবুর।

Advertisement

যারা থাকে ওধারে

কেমন আছে ছিটমহলের মেয়েরা? তাদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছেন মার্কিন-প্রবাসী অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য বিষয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করার কাজে বেশ কয়েকবার ছিটমহল এলাকা ঘুরে গিয়েছেন তিনি। সেই সূত্রেই সেখানকার মহিলাদের সমস্যা গভীরভাবে নাড়া দেয় তাঁকে। আন্তজার্তিক নারী দিবসের মুখে সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির আমেরিকায় চালু-হওয়া শাখার আহ্বায়ক হিসাবেও দায়িত্ব নিয়েছেন অনামিকা। সব ঠিকঠাক চললে এপ্রিল মাস নাগাদ ফের ছিটমহলে এসে শু্যটিং শুরু করবেন তিনি। তথ্যচিত্রের নামকরণও চূড়ান্ত করে ফেলেছেন, ‘হোয়্যার দ্য লাইনস বিকাম ডটস’ - যেখানে রেখা হয়ে যায় বিন্দু। দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলে মোট জনসংখ্যা ৫১ হাজারের বেশি। বাসিন্দাদের প্রায় অর্ধেক মহিলা ১৫-২৫ বছরের মধ্যে রয়েছেন। অন্তত আট শতাংশ। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, ছিটমহলের বাসিন্দা তিনজন মহিলাকে মূল চরিত্র হিসেবে তুলে ধরে সেখানকার গোটা মহিলা সমাজের সমস্যা তুলে ধরা হবে। ওই মহিলাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম কতটা কঠিন, বিশ্ব জানবে। তথ্যচিত্র তৈরি হবে সাব টাইটেল থাকবে ইংরেজি ভাষায়। ভারত- বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, নাগরিকত্ব না থাকায় ছিটমহলের বাসিন্দা অভিভাবকেরা কমবেশি সকলেই মেয়ের বিয়ে দিতে সমস্যায় পড়েন। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ছিটমহলে মেয়ের বাড়ি জানামাত্র পাত্রপক্ষ বিয়ের প্রস্তুতি থেকে সরিয়েও নিয়েছেন। ফলে নিজেদের পরিবারের কাছে বিবাহযোগ্যা অনেক মেয়ে মাথাব্যাথার কারণ হয়ে রয়েছেন। সমস্যা এড়াতে তাই অনেক অভিভাবক নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আইনের শাসন, থানা, পুলিশের ব্যবস্থা না থাকায় বহুক্ষেত্রে বধূদের নীরবে ‘অত্যাচার’ সহ্য করার অভিযোগও রয়েছে। কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, মেয়ে গাব্বুর (প্রাপ্তবয়স্ক) হলে বাবা-মা’কে স্রেফ ছিটের বাসিন্দা বলে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এমন নজির অনেক। পণের অঙ্কও বেড়ে যায়। নাবালিকা বিয়ে আটকানো যাচ্ছে না। তথ্যচিত্রে এটা তুলে ধরা হলে সমস্যাটা যে কেউ বুঝতে পারবেন, আশা দীপ্তিমানের।

শিল শিল্পী

শিলপাটআআ... কুটআআ! হাঁক শুনে হেঁসেল ছেড়ে বের হতেন বধূরা। শিলপাটা কুটুনিকে বাড়িতে নিয়ে যেতে শুরু হয়ে যেত তত্‌পরতা! মশলা বাটতে তখন শিলের বিকল্প ছিল না, তাই পাটায় একটু ধার কমলেই গৃহিনীরা অপেক্ষায় থাকতেন, কখন শিলপাটা কুটুনি আসবেন। তাঁরাও অতি নিপুণ হাতে কুটাকুট শব্দে শিল কুটিয়ে দিতেন। শৌখিন গৃহিনীদের চাহিদামতো কুটুনিরা শিলে ফুটিয়ে তুলতেন নানা নকশা -- শঙ্খ, ফুল, মাছ। দিন পাল্টেছে। গুঁড়ো মশলার প্যাকেট বাজারে মেলে। সম্পন্ন ঘরে ঠাঁই হয়েছে মিক্সারের। ফলে কদর কমেছে শিলনোড়া, আর পাটাকুটুনিদের। মালদহের চাঁচলের পাহাড়পুর, সিহিপুরের বহু পরিবার এক সময় পাটাকুটুনির পেশায় যুক্ত ছিলেন। এখন কুটুনিদের কদর নেই। পাহাড়পুরের সুবল কর্মকার বলেন, “কুড়ি বছর আগে যখন কাজ শুরু করেছিলাম, তখন একটা শিল কাটতে দু’টাকা নিতাম, কিন্তু কাজ ছিল প্রচুর। এখন খেতমজুরি করি, মাঝেসাঝে সময় পেলে বেরোই। একটা শিল কাটতে ২৫-৩০ টাকা পাই, কিন্তু কাজ মেলে কই?” শিলপাটা কুটুনির ডাক এখনও শোনা যায়। সেই স্বরে ব্যস্ততা থাকে না, থাকে বিষন্নতা।

আবার এসো

শীত ফুরিয়ে এল, বিদায় নিলেন অতিথিরাও। মালদহের হরিশচন্দ্রপুর এখন আবার অপেক্ষায়। জুলাই মাস শুরু হতেই বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সপরিবারে ফের আসবেন মাখনা তৈরির কারিগরেরা। হরিশ্চন্দ্রপুরে মাখনা তৈরির কারখানা-লাগোয়া ছোট ছোট বেড়ার ঘরে সংসার পাতেন। সংখ্যাটা নেহাত কম নয়, প্রায় হাজার পাঁচেক। হরিশ্চন্দ্রপুরে মাখনা চাষ হয়, রয়েছে ৬০টি ‘প্রসেসিং ইউনিট।’ মাখনা শুকানো থেকে শুরু করে মাখনা ভেজে খই তৈরি করাই কাজ বিহারের ওই দক্ষ শ্রমিকদের। এক দশকের বেশি সময় ধরে ওরা হরিশ্চন্দ্রপুরে কাজ করতে আসেন। ফলে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ওদের। স্বজনের মতোই পরিবারের খোঁজখবর নেন দুই পক্ষই। আট মাস বাদে ঘরে ফেরার সময় স্বজনের মতোই চোখের জলে বিদায় নেন ওঁরা।

নবারুণ স্মরণে

কয়েকজন মিলে নিজেদের টাকা খরচ করে শুরু করেন ‘মাসিক কবিতাপত্র।’ ২০১৩ সালের স্বাধীনতা দিবসে মালদহ শহরের জেলা গ্রন্থাগারে উদ্বোধন। টানা ১২টি সংখ্যা বের হয়, তারপর আর্থিক অনটনে ব্যহত হয় নিয়মিত প্রকাশনা। কিন্তু মালদহের রাজীব সিংহ, কলকাতার সন্তোষপুরের অনীক রুদ্র, ঊমাশঙ্কর বড়ুয়ারা বন্ধ হতে দেননি কাগজটি। ২০১৫ সালে ফের বের হয়েছে বইমেলা সংখ্যা, নবারুণ ভট্টাচার্যকে স্মরণ করে। নবারুণকে নিয়ে লিখেছেন পীযুষ ভট্টাচার্য, ‘নবারুণ লিখতেন, পেশা সাংবাদিকতা।’ নবারুণের ‘সেই কবি’ লেখাটি পুনর্মদ্রিত হয়েছে। পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছেন কবিদেরই কয়েকজন, তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের কবি মাসুদুর রহমানও আছেন।

সম্মানিত সমরেশ

ঢাকা শহরের দুই সাংবাদিক এক ভারতীয় সাহিত্যিকের সাক্ষাত্‌কারের প্রার্থী। একজন তাঁর নাম বললেন মাধবীলতা রহমান। দ্বিতীয়জনের নাম শোনার পর তাঁর আই কার্ড দেখতে চাইলেন ওই সাহিত্যিক। দেখলেন সত্যিই সেই সাংবাদিকের নাম লেখা, ‘অনিমেষ’। এ-ও কি সম্ভব? এই নামদুটি তো তাঁর উপন্যাসের দুই চরিত্র। সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা’ আর ‘উত্তরাধিকার’ এতটাই ভাল লেগেছিল, যে বাংলাদেশের ওই সাংবাদিকযুগল নাম ‘এফিডেভিট’ করে বদলে প্রিয় লেখকের চরিত্রের নামে রেখেছিলেন। শুনে সেদিন আবেগ ধরে রাখতে পারেন নি সমরেশবাবু।

এমন অনেক অভিজ্ঞতা তাঁর ঝুলিতে। একবার নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রবল শীতের রাতে এক পেট্রোল পাম্পের কর্মী অস্পষ্ট আলোয় ভেতরে-বসা যাত্রীকে দেখে কাছে চলে এসেছিলেন। “আপনি সমরেশ মজুমদার না?” ব্যাগ থেকে ‘গর্ভধারিণী’ উপন্যাসটি বের করে দেখিয়েছিলেন ওই কর্মী। দেশ-বিদেশে পাঠকদের থেকে এমন অনেক সমাদর পেয়েছেন সমরেশ মজুমদার। এ বার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডি লিট’সম্মান দিল তাঁকে। সম্প্রতি ডুয়ার্সের চা বাগানে বেড়াতে এসে লেখক জানালেন, আগামী এক বছর তিনি উপন্যাস লিখবেন না বলে ঠিক করেছেন। এই লম্বা ছুটির দিনগুলির বেশ কিছুটা অংশ তিনি নিজের মতো করে চা বাগানে কাটাবেন। স্বর্গ-ছেঁড়া চা বাগানের সেই শৈশবকালের ‘অনি’ হয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন