উত্তরের কড়চা

ষাটের দশকে খ্যাতনামা ব্যায়ামবীর ‘বিশ্বশ্রী’ মনোহর আইচ দিনহাটা হাইস্কুলের একটি অনুষ্ঠানে দেহসৌষ্ঠব প্রদর্শন করতে এসেছিলেন। তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হন এলাকার একদল খুদে পড়ুয়া। দরমার বেড়া আর টিনের চাল দিয়ে গড়ে ওঠে ‘মহামায়াপাট ব্যায়াম বিদ্যালয়।’ সেখানে শরীরচর্চা করে দেশে-বিদেশে দিনহাটার নাম রেখে এসেছে, এমন ছেলেমেয়ে কম নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৫
Share:

Advertisement

দ্রোণাচার্য ১০৩

ষাটের দশকে খ্যাতনামা ব্যায়ামবীর ‘বিশ্বশ্রী’ মনোহর আইচ দিনহাটা হাইস্কুলের একটি অনুষ্ঠানে দেহসৌষ্ঠব প্রদর্শন করতে এসেছিলেন। তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হন এলাকার একদল খুদে পড়ুয়া। দরমার বেড়া আর টিনের চাল দিয়ে গড়ে ওঠে ‘মহামায়াপাট ব্যায়াম বিদ্যালয়।’ সেখানে শরীরচর্চা করে দেশে-বিদেশে দিনহাটার নাম রেখে এসেছে, এমন ছেলেমেয়ে কম নয়। গোটা দিনহাটা যাঁকে ‘বিভুদা’ নামে এক ডাকে চেনে, সেই বিভুরঞ্জন সাহা এখন ওই ব্যায়াম বিদ্যালয়ের সচিব। আটান্ন বছরের ‘যুবক’ বিভূদা এক হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। মনোহর আইচের ভাবশিষ্য বিভুদা নিজেই এখন ছাত্রদের অনুপ্রেরণা। জুনিয়র দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় উত্তরবঙ্গ চ্যাম্পিয় থেকে শুরু করে জুনিয়র বেঙ্গল, সিনিয়র বেঙ্গল, হয়ে একেবারে ‘স্ট্রংম্যান অব ইন্ডিয়া’, অজস্র খেতাব জিতেছেন তিনি। তৈরিও করেছেন চ্যাম্পিয়নদের। গত বছর ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ হন

Advertisement


বিভুরঞ্জন সাহা।

‘বিভুদা’র ছাত্র অয়ন দত্ত। তার আগে নিশীথ মন্ডল ওই খেতাব পান। সিওলে আয়োজিত এশিয়ান পাওয়ার লিফটিং প্রতিযোগিতায় ২০০৫ সালে সোনা জেতেন চন্দনা দাস। এঁদের সবার আদর্শ মনোহর আইচ। আশি, নব্বইয়ের দশকে বার তিনেক দিনহাটার ব্যায়াম বিদ্যালয়ে এসেছেন মনোহরবাবু। বিদ্যালয়ের দেওয়ালে বিশ্বশ্রীর বিশাল হোর্ডিং। ১৭ মার্চ তাঁর ১০৩তম জন্মদিনও ঘটা করে পালন করলেন সকলে। জন্মদিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে খ্যাতনামা ওই দেহসৌষ্ঠব ব্যাক্তিত্বের ছবির সামনে ১০৩ লেখা রঙিন মোমবাতি জ্বালিয়ে, ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’ গানের সুরে কাটা হয় বড়সড় কেক। এক হাজার সদস্য ও উত্‌সাহী বাসিন্দাদের কেক ও লাড্ডু বিলি করা হয়। কলকাতায় তাঁর বাড়িতে পাঠানো হয় শুভেচ্ছাবার্তা। বিভুরঞ্জন বলেন, “মনোহর আইচ আমাদের আইডল, দ্রোণাচার্যের মতো।”

নীলকুঠির নেমন্তন্ন

কাণ্ডারণ গড়ের বাংলোটি তৈরি করেছিল নীলকর সাহেবরা। তাই নাম ছিল সাহেবকুঠি। মালদহের সামসি রেল স্টেশন থেকে কিলোমিটার দেড়েক। ছোটবড় টিলায় ভর্তি এলাকা, এক সময় ছিল জঙ্গলে ভরা। সেখানেই অপেক্ষাকৃত উঁচু একটি টিলার উপরে বাংলোটি। চারপাশে খোলা জায়গায় সাহেবদের খেলার আসর বসত। নীলচাষের পাট উঠল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৬৩ সালে সামসিতে যখন রেললাইন তৈরি হয়, তখন রেলের ইঞ্জিনিয়াররা ওই বাংলোয় থাকতেন। সেই অফিসও উঠে গিয়েছে অন্যত্র। অনেক দিন পড়ে থাকার পর এ বার রেলের কর্তারা ঠিক করেছেন, সাহেবকুঠি এবার হবে কমিউনিটি হল। উত্‌সব-অনুষ্ঠানে ভাড়া নিতে পারবেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাতে খুশি বাসিন্দারাও। তাঁদের আবেগ-জড়ানো সাহেবকুঠিও বাঁচবে, আর চাইলেই ভাড়ায় তা নিজের মতো করে পাওয়া যাবে।

দেবীর বট

জলপাইগুড়ির উপকণ্ঠে বুড়ো বটের ঝুরি নেমে মাটি ছুঁয়েছে। তার নীচে শ্মশানকালীর মন্দির। লোকে বলে, সেই মন্দিরে পুজো দিয়ে নাকি ডাকাতি করতে যেতেন দেবী চৌধুরানি। তখন তিস্তাও বইত কাছ দিয়ে। বট গাছের গোড়া থেকে নাকি রূপো, পেতলের অনেক বাসন উদ্ধার হয়েছে। বড় নৌকা, বজরা বেঁধে রাখার লোহার আঙটাও নাকি গাছের গোড়ার মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয়েছে। সে সব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। তবে যা নিয়ে সংশয় নেই তা হল বটগাছের বয়স। ১৮৯০ সালের সরকারি নথিতে এই বুড়ো বটের উল্লেখ্য পাওয়া যায়। এক তান্ত্রিক তখন গাছের নীচে ডেরা গেড়েছিলেন। সেখানে নরবলি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ব্রিটিশ সরকার তাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল। নব্বইয়ের দশকের শেষে কেরলের উদ্ভিদবিদ্যার এক গবেষক পরীক্ষানিরীক্ষা করে দাবি করেন, গাছটির বয়স অন্তত ৩০০ বছর। এখন জঙ্গল কেটে শহর হয়েছে, বটের গোড়ায় তৈরি হয়েছে মনসার থান, শিবমন্দির। সেই নির্জনতা নেই, তবু দিনেও গা ছমছম করে। বাসিন্দাদের আক্ষেপ, গাছ বাঁচিয়ে রাখতে যদি সরকারি সাহায্য মিলত! বুড়ো বটের গোড়ায় যে সময় থমকে রয়েছে।

টাকায় দু’টো

তিন দশক পার করে দাম বাড়ল, এক লাফে দ্বিগুণ। তা বলে বিক্রি কমেনি। কমবে কী করে, গোড়ায় যে দামটা ছিল ২৫ পয়সা, টাকায় চারটে। তা থেকে ৫০ পয়সা দাঁড়ালে বিক্রি কমবে, এমন ভয় পাচ্ছেন না ‘সিঙ্গাড়া কাকু’। ওই নামেই পুরাতন মালদহের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজন চেনে রাম কুণ্ডুকে। বাঁধা রোডের ধারে প্রায় ৩০ বছর ধরে সিঙ্গাড়া বিক্রি করে আসছেন রামবাবু। অন্য সব দোকানে যেখানে একটা সিঙ্গাড়ার দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা, সেখানে রামবাবুর সিঙ্গাড়ার দাম ৫০ পয়সা কেন? রামবাবু বললেন, তাঁর একটা বড় অংশের খদ্দের পাড়ার স্কুলের কচিকাঁচারা। তাদের কাছে দু-এক টাকার বেশি থাকে না। লাভ খুব বেশি থাকে না, কিন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামান না রামবাবু। “ওদের জন্যই সিঙ্গাড়া তৈরি করছি। যতদিন বাঁচব, তা-ই করব।” আকারে একটু ছোট হলও, স্বাদের টানে দিনে গোটা চারশো সিঙ্গাড়া বিক্রি হয়ে যায়। ছোটদের পাশে দাঁড়িয়ে তারিয়ে তারিয়ে খান বড়রাও।

যেমন কুকুর

আপনা হাত জগন্নাথ। সরকারের জন্য অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই কুকুরকে টিকা দেওয়ার কাজে নামলেন দিনাজপুর পিপল ফর অ্যানিম্যালস সদস্যরা। রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর পুরসভায় শুরু হয়েছিল সাত দিনের টিকাকরণ কর্মসূচি। লক্ষ্য, এক হাজার পথ কুকুরকে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া। এ যাবৎ সাতশোরও বেশি কুকুরকে সংস্থার তরফে টিকা দেওয়া হয়েছে। এ-ও যথেষ্ট নয়। দুটি শহরে প্রায় সাত হাজার কুকুর রয়েছে। সংগঠনের জেলা সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া জানান, সংগঠনের সদস্যরাই চাঁদা দিয়ে জলাতঙ্কের টিকা কিনে অভিযান শুরু করেছেন। কুকুরপিছু তাঁদের খরচ হচ্ছে ৯৫ টাকা। গৌতমবাবুর দাবি, কুকুরের কামড়ে জখম মানুষকে টিকা দিতে স্বাস্থ্য দফতরের যা খরচ হয়, তার চাইতে কুকুরের জলাতঙ্কের টিকার দাম অনেক কম। সরকারি সাহায্য মিললে তাঁরাই ধারাবাহিক ভাবে জেলাজুড়ে পথ কুকুরদের জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেবেন।

অন্য ফ্রেমে

দিনহাটা চিকিত্‌সকরা এ বার অন্য ভূমিকায়। ছবিতে অভিনয় করছেন তাঁরা। ছবির লেখক, প্রযোজক দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, উজ্জ্বল আচার্য। তাঁর স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘আবর্তন’-এ অভিনয় করেছেন দিনহাটার সাত চিকিত্‌সক, তার মধ্যে আছেন মহকুমা হাসপাতালের সুপার রঞ্জিত মণ্ডলও। জলাতঙ্কের মতো এক মারাত্মক অসুখ বিষয়ে সচেতন করার জন্য ছবিটি তৈরি হয়েছে বলেই তাতে অংশ নিতে চিকিত্‌সকদের এই উত্‌সাহ। উজ্জ্বলবাবুর বক্তব্য, কুকুর কামড়ানোর পর টিকা ঠিক মতো নেন না অনেকেই। অনেকে ওঝার কাছে যান। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। এর আগে কন্যাভ্রূণ হত্যা, এইডস নিয়ে ছবি তৈরি করেছেন উজ্জ্বলবাবু। দিনহাটায় রয়েছে তাঁর নিজস্ব ফিল্ম প্রোডাকশন হাউস, বিবর্তন।

প্রাণের মেলা

বইমেলা তো নয়, গান-নাটক-আবৃত্তির উচ্ছ্বাসে আনন্দমেলা। ‘গ্রেটার শিলিগুড়ি পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর ৩২ বছরের বইমেলা ঘিরে শহর সংস্কৃতির বৈচিত্রে, প্রাণশক্তিতে ভরপুর ন’টা দিন। যাঁর হাত ধরে শিলিগুড়িতে বইমেলার সূচনা, তাঁর নামাঙ্কিত ‘হরেন ঘোষ মঞ্চ’ ১৩-২২ মার্চ যেন শহরের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। একটা দিন কচিকাঁচারাই দখল করল সেই মঞ্চ। ‘হতেম যদি ইছামতি নদী’ অনুষ্ঠানে ৮০ খুদে অংশ নেয়। বাচিক িশল্প প্রসারে প্রতিযোগিতায় মালবাজারের ‘সৃজনী’ প্রথম, দ্বিতীয় শিলিগুড়ির ‘উবাচ’ ও তৃতীয় ‘কথা ও কবিতা’। ‘কথকতা’-র খুদে শিল্পীরাও মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছিল।

নাটকের দিন

বিশ্বনাট্য দিবস উপলক্ষে শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে আয়োজন করা হয়েছিল এক দিনের অণু নাটক উত্‌সব। সেখানে মঞ্চস্থ হয় সৃজনসেনার ‘বুলেটইন’, ইঙ্গিতের ‘সংবর্ধনা’, শিলিগুড়ি থিয়েটার অ্যাকাডেমির ‘মুখ ও মুখোশ’, ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের উত্তরধ্বনি শাখার ‘আবছায়া তার’, দর্পণ নাট্যসংস্থার ‘মাত্র ১৫ মিনিটের মহড়া’, বলাকা নাট্যগোষ্ঠীর ‘নশ্বর লোকগাথা-এক’। এর পর ২ এপ্রিল থেকে শিলিগুড়িতে শুরু হবে নাটকের কর্মশালা। চার দিনের নাট্যশালার আয়োজন করেছে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের উত্তরধ্বনি শাখা। কলকাতা থেকে আসছেন অরুণ মুখোপাধ্যায়, চন্দন সেন, শুভেন্দু মাইতি। প্রথম দু’দিন কর্মশালা বাঘা যতীন পার্কের রবীন্দ্রমঞ্চে, শেষ দু’দিন তথ্যকেন্দ্রে।

নৃত্যযোগী

দিল্লিতে ২০০৫-এ দিল্লিতে শো করতে গিয়ে মঞ্চেই চোট পেয়েছিলেন তিনি। পরের ছ’মাস বিছানায়। কোমরের নীচ থেকে ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যেতে শুরু করেছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, আর যা-ই হোক, নাচটা এ যাত্রা বন্ধ রাখতেই হবে। কিন্তু হাল ছাড়েননি বছর বিশেকের রাহুলদেব মণ্ডল। খবর পেয়েছিলেন, চেন্নাইয়ের এক জায়গায় যোগব্যায়ামের মাধ্যমে রোগ সারানো হয়। কয়েক মাস ধরে চলে চিকিৎসা। বছরখানেকের মধ্যেই স্টেজে ফেরেন বারাসতের তরুণ নৃত্যশিল্পী। ছোটবেলা থেকেই তাঁর প্রথাগত তালিম ভরতনাট্যমে। ২০০৭ সালে জাতীয় যুব উৎসবে সেরা শিল্পীর পুরস্কার পান। বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষে গিয়েছেন শিকাগোতেও। কী ভাবে ভরতনাট্যমের সঙ্গে প্রাচীন যোগশাস্ত্রের মেলবন্ধন ঘটানো যায়, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন থাকেন অনেক আগে থেকেই। তাতে বেরিয়ে আসে ‘নৃত্য-যোগসূত্র’। ইতিমধ্যে অক্সফোর্ডে তা নিয়ে পেপারও পড়া হয়ে গিয়েছে রাহুলের। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নৃত্য-যোগের কর্মশালা হয়। পরে সেখানকার সিলেবাসেও আবশ্যিক পেপার হিসেবে ঢুকে পড়েছে নৃত্য-যোগ। আপাতত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরবঙ্গ ক্যাম্পাসে নৃত্যকলা শেখাচ্ছেন রাহুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন