ইতিহাসের সরণি ধরে
জলপাইগুড়ি ফ্রেন্ডস ড্রামাটিক ক্লাবের সৌজন্যে শহরবাসী শিশিরকুমার ভাদুড়ি, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মলিনা দেবী, মহেন্দ্র গুপ্তের মতো নাট্যব্যক্তিত্বদের দেখতে পেয়েছিল খুব কাছ থেকে। ক্লাবের নাট্যশালাতে পরপর সাত দিন ‘সীতা’, ‘আলমগীর’, ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি। এক রজনীতে আলমগীর মঞ্চস্থ করে বিক্রিত টিকিটের অর্থ ক্লাব সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। এম জি এন্টারপ্রাইজ প্রযোজিত নাটকে অভিনয় করতে এসেছিলেন গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মলিনা দেবী। বাদ যাননি মহেন্দ্র গুপ্তও। অভিনয় করে ছিলেন ‘দেবলা দেবী’ নাটকে খিজির খানের ভূমিকায় এবং ‘শাহজাহান’ নাটকে ঔরঙ্গজেবের চরিত্রে। ফ্রেন্ডস ড্রামাটিক ক্লাবের পরিচিতি বান্ধব নাট্য সমাজ নামেই। প্রথম দিকে শহরের এ দিকে সে দিকে মঞ্চ তৈরি করে নাটক করতেন ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন। সময়টা ১৯৪২। সেই নাট্যমোদীরাই গড়ে তুলেছিলেন ফ্রেন্ডস ড্রামাটিক ক্লাব। মানজান্নেসা খাতুনের কাছ থেকে বার্ষিক ২০০ টাকা খাজনার বিনিময়ে পাওয়া ৩২ কাঠা জমির ওপর তৈরি হয়েছিল নাট্যভবন। মঞ্চনির্মাণে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নবাব মোসারফ হোসেন, রাজা প্রসন্নদেব রায়কত, মুকলেসুর রহমান, কালীপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, লোকেন বাগচী, কালীপদ মৈত্র প্রমুখ। ‘কারাগার’, ‘ষোড়শী’, ‘বঙ্গে বর্গী’, ‘কিন্নরী’, ‘পথের শেষে’, ‘রঘুবীর’, ‘বিসর্জন’, ‘বেহুলা’, ‘পরমা’, ‘প্রতাপাদিত্য’, ‘মহানিশা’, ‘দেবলাদেবী’, ‘চন্দ্রগুপ্ত’ মঞ্চস্থ হয় প্রথম দশ বছর। নাটকগুলি বান্ধব নাট্য সমাজের নিজস্ব নির্মাণ। তিরিশের দশকের শেষাংশে অভিনীত হল ‘সীতা’, ‘বাংলার মেয়ে’, মানময়ী গার্লস স্কুল। ১৯৪৪-এ ‘নবান্ন’ মঞ্চস্থ হলে গণনাট্য আন্দোলনের সাড়া ফেলে দিল এই শহরেও। মঞ্চস্থ হল ‘দুঃখীর ইমান’, ‘বাস্তুভিটা’, ‘ভোলামাস্টার’, ‘দ্বীপান্তর’, ‘ছেঁড়া তার’, ‘ডাক্তার’, ‘রাষ্ট্রবিপ্লব’, ‘পি ডব্লিউ ডি’-র মতো একের পর এক সামাজিক নাটক। বাদ যায়নি ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক নাটকও। ১৯৫৭ সালে যোগ দিলেন নাট্যকার রবি ঘোষ। সাত বছর নাটক মঞ্চস্থ বন্ধ থাকার পর অভিনীত হল তাঁরই লেখা ‘জলসাঘর’ ও ‘মহেশ’-এর নাট্যরূপ। জলসাঘর সেই নাটক যেখানে প্রথম পুরুষের বদলে মঞ্চে এলেন মেয়েরা। রবীন্দ্রশতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে মঞ্চস্থ হল ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘অচলায়তন’ ও ‘মুক্তধারা’। ‘ক্ষুধিতপাষাণ’ মঞ্চস্থ হওয়ার সময় দর্শকাসনে ছিলেন স্বয়ং সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তী তিন দশকের উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল—‘শ্রীরামকৃষ্ণ’, ‘বল্লভপুরের রূপকথা’, ‘দুর্যোধন ও সায়াহ্ন সংলাপ’। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নিজস্ব প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল ‘বায়েন’, ‘বিরিঞ্চিবাবা’, ‘শোভাযাত্রা’, ‘পাগলাগারদ’ও ‘একটি অবাস্তব কাহিনী’। বান্ধব নাট্য সমাজ শুরু থেকেই তাদের প্রেক্ষাগৃহটি সিনেমা কোম্পানিকে লিজ দিয়ে এসেছে। বছরের ২৪ দিন তারা নিজেরা ব্যবহার করবে এই শর্তে। প্রথম দিকে নির্বাক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করত স্পেনসার টকিজ। তার পর নিউ চিত্রাবলী। ১৯৫৭ থেকে এখন পর্যন্ত এই ভার দীপ্তি টকিজের উপর। ১৯৭৪-এ ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে জয়ন্তী ভবন (ছোট থিয়েটার হল)। ক্লাবের নিজস্ব গ্রন্থাগারে রয়েছে শতাধিক বই। এটি নিছক একটি রঙ্গশালা নয়, বহু নাট্যব্যক্তিত্ব ও মনীষীদের স্মৃতিধন্য এই নাট্যমন্দিরটি জলপাইগুড়ি শহরের অহঙ্কার।
লেখা ও ছবি : অনিতা দত্ত
যাত্রাপ্রসাদ স্মরণে
যাত্রাপ্রসাদ খুব মিশুকে ছিল । সামনে গেলে শুঁড় তুলে দিত আদর খাওয়ার জন্য। পিঠে উঠিয়ে দুলকি চালে জঙ্গলে ঘুরিয়ে দেখাতে জুড়ি ছিল না তার। বহু বছর আগে চলে গিয়েছে সে। সেই থেকে তার জন্য কিছু করা যায় কি না ভাবছেন যাত্রাপ্রসাদের ‘ফ্যান’রা। সেই যাত্রাপ্রসাদের স্মরণে কিছু করার জন্য বন দফতরের কাছেও অনুরোধ গিয়েছে। যাঁরা অনুরোধ পাঠিয়েছেন তাঁদের স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে অনেক কিছুই। যেমন একজন পর্যটকের মনে পড়েছে দু-দশক আগেকার কথা। গরুমারা বনবাংলো হয়ে গরাতি নদীর পাড়ে নজরমিনারে একটা রাত কাটানো। ঘন জঙ্গলের মধ্যে নজরমিনারে বসে থাকা। নিচে গণ্ডারের আনাগোনা। তার চেয়েও রোমাঞ্চকর ছিল যাত্রাপ্রসাদের পিঠে চেপে গণ্ডারের খাসতালুকে ঢুকে পড়া। পথে বাইসনের দল। এক মনে ঘাস খেতে খেতে চকিতে ফিরে তাকানোর দৃশ্য। সে রাতে ফেরার পথে কখনও বুনো হাতির পালের মুখোমুখি। কখনও বাইসনের পাল থমকে দাঁড়িয়ে রাস্তা জুড়ে। অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কী ভাবে বাঁচিয়েছিল যাত্রাপ্রসাদ, সেটা ভোলা সম্ভব হয়নি।
১৯৭১ সালে বন দফতর অসম থেকে যাত্রাপ্রসাদকে এনেছিল। স্বভাবে শান্ত যাত্রাপ্রসাদ দ্রুত প্রশিক্ষিত হয়েছিল। কুনকি হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে বহু কঠিন কাজ অনায়াসে করেছে যাত্রাপ্রসাদ। দুষ্টু বুনো হাতি ধরা, অসুস্থ বুনো জন্তুকে ঘুম পাড়িয়ে চিকিৎসা করানোর কাজেও আগাগোড়া সাহায্য করেছে সে। বন দফতরের পরিকল্পনা ছিল ১৯৯৭ সালে বন্যপ্রাণী সপ্তাহে যাত্রাপ্রসাদের রজত জয়ন্তী পালন করা। কিন্তু, সে বছরের ১৪ জুলাই যাত্রাপ্রসাদ দুনিয়ে ছেড়ে বিদায় নেয়। গরুমারা বনবাংলোর পাশে দেহটি কবর দেওয়া হয়েছে। যাত্রাপ্রসাদ ওয়াচ টাওয়ারের পাশে একটি একটি মূর্তিও তৈরি করিয়েছিল বন দফতর। কিন্তু, বুনো হাতির দল তা একাধিকবার ভেঙে দেয়। এখন অনেকে চাইছেন, যাত্রাপ্রসাদের স্মরণে শীতের পর্যটন মরসুমে একটা স্মরণসভা হোক। বন দফতরের তরফে সাড়া না মিললে নিজেরাই তা করার কথা ভেবেছেন বন ও পরিবেশপ্রেমীরা।
লেখা ও ছবি: গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য।
নর্থবেঙ্গল পেন্টার্স
জলপাইগুলি ও শিলিগুড়ির মোট ১০ জন চিত্রশিল্পী প্রদর্শনী করে গেলেন কলকাতার অ্যাকাদেমি অব ফাইন আর্টসের সেন্ট্রাল গ্যালারিতে। “কাজের বৈচিত্র বেশ ভাল লেগেছে” বলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কপুর। বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীর কথায়, ‘শিল্পীরা প্রত্যেকেই স্বশিক্ষিত হওয়ার ফলে তাঁদের কাজে স্বতঃস্ফূর্ততা ও সহযোগিতার প্রকাশ আকর্ষণীয়।’ আর নাট্যকার চন্দন সেন বলেন, “উত্তরবঙ্গের সংস্কৃতি ও জনজীবনকে রং ও তুলিতে ধরবার এই প্রয়াস প্রশংসাযোগ্য।’’
২০—২৭ অক্টোবর নর্থবেঙ্গল পেন্টার্স গ্রুপ অব কনটেম্পোরারি আর্টসের চিত্রপ্রদর্শনী দেখে বিশিষ্ট জনের এই প্রশংসায় উজ্জীবিত শিল্পীরাও। শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়, নির্মল চন্দ, ঝুলন সরকার, সুজয় মিত্র, রাজীব বাগ, শ্রীপর্ণা সেনরা এর আগে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতে প্রদর্শনী করলেও অ্যাকাদেমিতে এই প্রথম। “অ্যাক্রিলিক অন পেপার, অ্যাক্রিলিক অন ক্যানভাস, কাগজের কোলাজ এবং জল রং ব্যবহারের মাধ্যমে যে বৈচিত্র ফুটে উঠেছে তা অনবদ্য” আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অসীম বসু, বাদল পালের প্রতিক্রিয়া ছিল এমনই। মোট ৪৮টি ছবির মধ্যে শ্রেয়সী (৬টি ছবি) গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবির শিরোনাম ছিল চড়ক, ব্যালেরিনা, ইউফোবিয়া, স্টারভেশন, প্রেয়ার এবং দ্য ওমেন, সঞ্জয় দের (৬টি ছবি) সিরিজ ‘দ্য আনটাইটলড ওয়ানস’, তন্ময় রায়ের সিরিজ ‘কনভারসেশন ১, ২, ৩, ৪, রাজীব বাগের সিরিজ ‘স্টাডি ১, ২, ৩, ৪ নজর কাড়ে। স্বপন বর্মনের ফিশিং, ওয়ার্কিং লেডি, হিডেন হেভেন, নির্মল চন্দের পাপেট, ঝুলন সরকারের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড, শেল্টারও নজর কেড়েছে। জয়ন্ত কুমার পাল, সুজয় মিত্র এবং শ্রীপর্ণা সেনের ছবির ভাবনাও উল্লেখযোগ্য। উত্তরবঙ্গের বর্তমান প্রজন্মের সম্ভাবনাময় চিত্রশিল্পীদের প্রতিনিধি নর্থবেঙ্গল পেন্টার্স যে ভাবে অভিনবত্ব ও স্বপ্নের মেলবন্ধন ঘটিয়ে কলা রসিকদের মন ছুঁয়েছে তাতে আশান্বিত অন্যরাও।
লেখা ও ছবি: তুহিনশুভ্র মণ্ডল
তাঁহাদের কথা
কোচবিহারের “ক্ষুদিরাম স্মৃতিরক্ষা কমিটি”র উদ্যোগে প্রকাশিত হল “উত্তরবঙ্গের স্বাধীনতাসংগ্রামীদের জীবনালেখ্য”র প্রথম খণ্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড। “উত্তরবঙ্গ নামাঙ্কিত ভৌগোলিক ভূখণ্ডের সীমাটি ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে পরিবর্তিত হয়েছে। আজকের উত্তরবঙ্গের যে মানচিত্র দেখছি, তা বৃহত্তর উত্তরবঙ্গ রূপে কথিত অঞ্চলের এক তৃতীয়াংশ মাত্র। দেশ বিভাজনের ফলে উত্তরবঙ্গের দুই তৃতীয়াংশই পূর্ব পাকিস্তনে পড়েছে। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ অংশের স্বাধীনতাসংগ্রামীদের জীবনী-তথ্যের অনেকটাই দেশ বিভাজন ও ১৯৭১-এ পাকিস্তানের খান সেনাদের কাজের ফলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” এই বই এর ‘প্রাক-কথা’য় লিখেছেন আনন্দগোপাল ঘোষ। তাঁর মতে তাই স্বাভাবিক ভাবেই ‘ভারতস্থিত উত্তরবঙ্গ তুলনামূলক ভাবে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।’ কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার ২৭৭ জন স্বাধীনতাসংগ্রামীর জীবনী স্থান পেয়েছে প্রথম খণ্ডে। স্থান পেয়েছে কিছু তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধও। রয়েছে আলোকচিত্রও। দ্বিতীয় খণ্ডে দুই দিনাজপুর এবং মালদহ জেলা। এই পর্বে জানা যায়, ৯৬ জনের কথা। এই খণ্ডেও রয়েছে প্রবন্ধ, আলোকচিত্র এবং পেনশনপ্রাপকদের তালিকা। আলোচ্য দু’টি খণ্ডে, যাঁদের কথা কেউ লেখেননি, যাঁরা হয়তো কোনও পুরস্কারও পাননি, যাঁরা অন্তরালেই থেকে গেছেন, হয়তো পরবর্তী কালে পেয়েছেন বংশধরদের উপেক্ষা, তাঁদের কথাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। এই সংকলন শুধু স্বাধীনতাসংগ্রামীদের রক্তঋণ শোধ নয় ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধের সময়ে দাঁড়িয়ে তা অন্য এক সময়ের কথাও বলে। যে সময়ে অনুভবে ছিল দেশপ্রেম, আদর্শ, ত্যাগ, সহিষ্ণুতা ও সাধনা। হারিয়ে যাওয়া সেই সময়ের সন্ধান দেওয়ার এই প্রয়াস বিরল তো বটেই, নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়ও।
লেখা ও ছবি: সুদীপ দত্ত
সংবর্ধিত সত্যজিৎ
বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে সংবর্ধনা দেওয়া হল গায়ক সত্যজিৎ মুখোপাধ্যায়কে। ৩ নভেম্বর। সম্প্রতি লন্ডনে তিনটে অনুষ্ঠান করে এসেছেন সত্যজিৎবাবু। শিলিগুড়ির দেশবন্ধু পাড়ার সত্যজিৎবাবু জানান, বাংলা এবং হিন্দি পুরোনো সিনেমার গানই তিনি গেয়ে থাকেন। বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব মিডলটনের উদ্যোগে ২৭ জুলাই লন্ডনে প্রথম অনুষ্ঠান ছিল সত্যজিতবাবুর। ১৬ অগস্ট মিলটন কেইসন স্কুলে এবং সেপ্টেম্বর লন্ডনের ওয়াইএমসিএ হলে তৃতীয় এবং শেষ অনুষ্ঠান ছিল তাঁর।
ছিটমহলে ‘মুক্তি’র সৈনিক
প্রয়াত হয়েছেন বাবা। তাঁরই স্বপ্ন পূরণে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ছিটমহলের বাসিন্দাদের ‘মুক্তি’র দাবিতে লড়ছেন কোচবিহার জেলার দিনহাটার বাসিন্দা এক যুবক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। ওই লড়াইয়ে দিনহাটার মত প্রত্যন্ত এলাকায় থেকেও সুদূর দিল্লি, কলকাতা কিংবা পাশের দেশের রাজধানী ঢাকায় আকছার ছুটে যেতে হয় তাঁকে। চলতি নভেম্বর মাসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপকদের নিয়ে আয়োজিত মানব বন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাংলাদেশ যান তিনি। সদ্য ওই সফর সেরে দিনহাটা ফিরেছেন তিনি। আপাতত ছিটমহল বিনিময়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ‘স্থলসীমান্ত চুক্তি’ বিলের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তবে নিজেই জানাচ্ছেন, ফলের আশা না করে ‘কর্ম’ করাই তাঁর লড়াইয়ের মন্ত্র।
একটি নামী মোবাইল সংস্থার মোটা মাস মাইনের চাকরি ছেড়ে কয়েক বছর আগে ছিটমহল আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন দীপ্তিমান। শুরু হয় এক অন্য লড়াই। প্রথমে প্রশাসন থেকে রাজনীতি, কোনও মহলেই সে রকম কদর পাননি। মিছিল, সভা, স্মারকলিপি প্রদান থেকে অনশনের মত নানা কর্মসূচি নিয়ে সকলের টনক নড়িয়েছেন। এখনও একাই কার্যত ব্যস্ত রাখছেন প্রশাসনিক মহলকে। দমে না যাওয়ার এমন ধারাবাহিকতায় হালে অবশ্য ছবিটা খানিক বদলেছে। ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের তাবড় সংবাদমাধ্যমেও ছিটমহল ইস্যুতে দীপ্তিমানবাবুর বক্তব্য অনেকটা প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছিটমহলের সামাজিক পরিবেশ ‘সুস্থ’ রাখতেও সমান উদ্যোগী তিনি। এক সময় পুলিশ, আইনের শাসনের আওতার বাইরে থাকা ছিটমহলগুলিতে ব্যাপক গাঁজা চাষ হত। ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহকারি সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালনের তাগিদেই গাঁজা চাষের ক্ষতি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে লড়াই করেছেন। দেওয়ালির রাতে মূলত তাঁর উদ্যোগেই প্রথম ছিটমহলে মঞ্চ বেঁধে নাটক পরিবেশন করেন বাংলাদেশের একটি খ্যাতনামা নাট্যগোষ্ঠী। দুধ সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে নিজের মোটর সাইকেল নিয়ে ছুটে যান ছিটমহলবাসীর সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে। কিন্তু কেন? দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, বাবা প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক দীপক সেনগুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের দুর্দশা ঘোচানোর স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন পূরণই এখন তাঁর ধ্যানজ্ঞান।