উত্তরের চিঠি

এনবিএসটিসি-র অমানবিক মুখ

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩৯
Share:

এনবিএসটিসি-র অমানবিক মুখ

Advertisement

আমরা সভ্য দেশের নাগরিক। রাজ্য সরকারের অধিগৃহীত এনবিএসটিসি-র যে কর্মপ্রক্রিয়া চলছে, তা জানলে কিন্তু এমনটা মনে হয় না, শিউরে উঠতে হয়। তিন বছর হতে চলল, এখনও কর্তৃপক্ষ স্থায়ী কর্মীদের মাসের শেষে প্রাপ্য মজুরিবাবদ বেতন তুলে দেওয়া নিশ্চিত করতে পারেনি। ছি! প্রতিদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কর্মীদের স্যালারি অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট হচ্ছে গত মাসের বেতনের কখনও বা ষাট শতাংশ, আবার কখনও বিগত আট নয় মাস আগের বকেয়া বেতনের দশ শতাংশ। অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। লিভ স্যালারি, গ্র্যাচুইটির টাকা তো দূর অস্ত, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে অন্তিম সম্বল পেনশনও পাচ্ছেন অর্ধেক, কোনও মাসে তাও পাচ্ছেন না। অসুস্থ পেনশনাররা ওষুধ কেনার কথা এখন আর ভাবেন না। পেটের ভাত কী ভাবে জোগাড় করবেন সেই চিন্তাতেই রাতের ঘুম উঠে গিয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বা তাঁদের বিধবারা এখন অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে দিন গুজরান করছেন। কিন্তু অবাক করা তথ্য দেখা যাচ্ছে কর্মরত কর্মীদের প্রতি মাসের বেতন সংবলিত ‘পে-স্লিপ’-এ। কর্মরতদের মাসের শেষে যে পে-স্লিপ দেওয়া হচ্ছে, তাতে পুরো বেতনের উল্লেখ থাকলেও ব্যাঙ্কে স্যালারি অ্যাকাউন্টের পাস-বই আপ-টু-ডেট করলে দেখা যাচ্ছে বেতন হয়েছে গত মাসের প্রাপ্য নির্দিষ্ট বেতনের চেয়ে অনেক কম। শুধু তাই নয়, রাস্তায় যান্ত্রিক গোলমালে অনডিউটি চালকের অনিচ্ছাকৃত ভুলেও যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তবে সংস্থার গাড়ি মেরামতির খরচ কেটে নেওয়া হচ্ছে কর্মীর বেতন থেকে। কেন এমন হবে? এ যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। যদিও সবার ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে না। যারা পদস্থ কর্তাদের স্নেহভাজন, তাদের জন্য রয়েছে ছাড়। কোনও কর্মী কি ইচ্ছে করে সংস্থার সম্পত্তিহানি ঘটাবেন? যদি তাই হত, তবে এই কর্মীদের হাত ধরেই ১৯৯১ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে ‘ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অ্যাওয়ার্ড’-এর ট্রফি ও শংসাপত্র কোচবিহারের সাগরদিঘির পাশে অবস্থিত পরিবহণ ভবনের দেওয়ালে শোভা পেত না। স্থায়ী কর্মীরা পুরো বেতন পাচ্ছেন না, অস্থায়ী কর্মীদের ছাটাই করে দেওয়া হয়েছে ক্ষতির অজুহাত দেখিয়ে, এমন অবস্থায় সংস্থায় ১৮০০ চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থা। এ কর্মীদের মাসের শেষে বেতন দিতে পারবে তো সংস্থা? এমনিতে এনবিএসটিসি-র সুষ্ঠু যাত্রী পরিষেবা বলতে আর কিছুই তো অবশিষ্ট নেই। কর্তারা পরিষেবার কাজ শিকেয় তুলে ব্যস্ত থাকেন প্রোমোশন নিয়ে। কী ভাবে উচ্চপদস্থ কর্তাদের তোষামোদ করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়া যায়, সেটাই এখন প্রধান লক্ষ্য। দিন যাচ্ছে আর ‘অন রুট’ বাস কমছে। যেগুলো পথে চলছে সেগুলো গন্তব্যে নিয়মিত পৌঁছয় কিনা তা যাত্রীরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।

এনবিএসটিসির বাসে ভ্রমণ করলে কান ঝালাপালা করা শব্দ ফ্রি। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই, বাসের ছাদ চুঁইয়ে আসা জল রয়েছে উপরি পাওয়া হিসেবে। বাসের ভিতরে লাইট জ্বলছে না। বাসের সিট দেখলে মনে হবে যেন বাসগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তুলে আনা হয়েছে। বাসের মেঝে ছেয়ে নোংরায়। সুস্থ রুচিবোধসম্পন্ন মানুষের পক্ষে যে সব বিষয় সহ্য করা দায়, সবই মজুত এনবিএসটিসির অধিকাংশ বাসে। কে দেখবে এ সব? কর্তারা তো সদাব্যস্ত উপরের কর্তাদের পদলেহনে। উত্তরবঙ্গের মধ্যে চলাচলকারী দূরপাল্লার রাতের বাস সার্ভিস তো এখন উধাও। কোচবিহার-শিলিগুড়ি-বালুরঘাট রুটে নাইট বাস সার্ভিস সংস্থার কাছে এখন ব্রাত্য। এ সব রুটে বেসরকারি বাস প্রতি রাতে যাত্রিবোঝাই করে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছে। যেগুলোতে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য বলতে কোনও বিষয় অন্তত চোখে পড়ে না। নিরুপায় যাত্রীরা তবুও বাধ্য হচ্ছেন এ চড়তে। এনবিএসটিসি কি পারে না এ সব রুটে কয়েকটি রাতের বাস সার্ভিস চালু করতে। রাজায় রাজায় যুদ্ধ এখানে হয় না, হয় কর্তায় কর্তায় ভাব আর যাত্রীর অবস্থা হয় উলুখাগড়ার মতো। বহু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে যে জেএনএনইউআরএম-এর থেকে বাস আসবে। কিন্তু কবে সে সব আসবে? কোচবিহার, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ, মালদহ আর বালুরঘাটের মধ্যে কি দিন ও রাতের বাস সার্ভিস আরও বাড়বে? নাকি সবই ঘোষণায় রয়ে যাবে? সংস্থা কি তার মানবিক মুখটাকে দেখাবে না? উত্তরবঙ্গবাসী কিন্তু এ বার নতুন কিছু দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন।

Advertisement

সন্দীপন রাহা, জলপাইগুড়ি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন