উত্তরের চিঠি

দূষণের কবলে উত্তরবঙ্গ

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০১
Share:

দূষণের কবলে উত্তরবঙ্গ

Advertisement

সব ধরনের দূষণে আক্রান্ত উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে ডুয়ার্স। জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি। কোচবিহারের সরকারি এম জে এন হাসপাতাল সংলগ্ন চিকিৎসকদের বাসস্থান এবং একমাত্র সরকারি নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসর্বত্রই নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে নোংরা কালো জল তীব্র দৃশ্যদূষণ এবং পরিবেশ দূষণ ঘটিয়ে চলেছে। সরকারি নার্সিং হোস্টেল, যেখানে সব শিক্ষার্থী নার্সরা থাকেন, তাঁদের বাথরুম ও শৌচাগার বেয়ে গজিয়ে উঠেছে বড় বড় গাছ আর শ্যাওলা, আর জল চুঁইয়ে পড়ায় সবুজ শ্যাওলায় দেয়াল পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছে। এই শহরে নিকাশি ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বদ্ধ নোংরা জলের পাশেই অসংখ্য ডাক্তারবাবু তাদের প্রাইভেট চেম্বারে চুটিয়ে প্র্যাকটিস চালাচ্ছেন। সেই ড্রেনের পাশেই গজিয়ে উঠেছে অগণিত প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরি। খোলা ড্রেনের উপরেই চলছে শতেকের উপর ওষুধের দোকান। নোংরা ভর্তি ড্রেনের ওপর কোনও রকমে কাঠের পাটাতন সাজিয়ে চা-পান, খাবারের দোকান রমরম করে চলছে। কোচবিহারের অদূরে আলিপুরদুয়ার, জয়গাঁ, ফুন্টশিলিং, মালবাজার, মেটেলি, চালসা, নাগরাকাটা, ময়নাগুড়ি, মউলানি, লাটাগুড়ি, জলপাইগুড়ি সদর, মাদারিহাট, জলদাপাড়া যা ডুয়ার্স পর্যটন ক্ষেত্র নামে পরিচিত, সেখানকার হাটবাজারে পয়ঃপ্রণালী, নিকাশি ব্যবস্থা বলে কিছু নেই।


বেহাল কোচবিহার নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

Advertisement

এনজেপি স্টেশন তো বহু দিন ধরেই মডেল স্টেশন। প্রতিদিন অন্তত দশ হাজার যাত্রী এবং বিদেশি পর্যটক এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু স্টেশনের চারপাশের প্রবেশপথে সুদৃশ্য নিয়নলাইটের তলায় জঞ্জালের পাহাড় মাসের পর মাস পড়ে থাকে। জলপাইগুড়ি শহরের করলা নদীর দূষণও বেড়েই চলেছে। শিলিগুড়ির মহানন্দা নদীকে পরিবেশবিদরা এখন নোংরা ড্রেনের সঙ্গে তুলনা করছেন। শিলিগুড়ির বিপুল জনসংখ্যার বর্জ্য এসে মিশছে এই মহানন্দাতেই। অসংখ্য অবৈধ খাটাল মহানন্দার গতিকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। শিলিগুড়ির পাশেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শিবমন্দির, লেলিনপুর, আঠারোখাই, রানিডাঙা, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ প্রভৃতি অঞ্চলে পাহাড়ি নদী, ঝোরা আটকে লক্ষাধিক ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে। প্রতিটি বহুতল বাড়ির পাশেই কালো জঞ্জালের স্তূপ ও নোংরা আবর্জনা। কখনই শোনা যায় না, জঞ্জাল নিষ্কাশন নিয়ে পুরকর্তারা উদ্বিগ্ন। কখনই শোনা যায় না বর্জ্যের দুর্গন্ধ আটকাবার জন্য কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ এবং তাদের নিদান অনুযায়ী পরিকল্পনা রূপায়ণের কথা। এখনকার চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রমুখের দল বদল নিয়ে ভাবতে হয় অনেক অনেক বেশি। জঞ্জাল অপসারণ নৈব নৈব চ।

শান্তনু বসু। চাঁচল কলেজ, মালদহ

জলপাইগুড়ি স্টেশনে মরণফাঁদ

অনেকেই বলেন জলপাইগুড়ির মানুষ নাকি খুবই সহনশীল। নিজেদের প্রতিবাদী প্রমাণ করতে চাইলেও সচরাচর অবরোধ ও আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে চান না। কিন্তু গুরুতর সমস্যার পাশ কাটিয়ে স্থানীয় প্রশাসন যখন নির্লিপ্ত ও নির্বিকার হয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকে, তখন কি আর ধৈর্য রাখা সম্ভব? প্রতিদিনের একটি নরকযন্ত্রণার ছবি এখানে তুলে ধরতে চাই। জলপাইগুড়ি স্টেশনের তিন নম্বর রেলগুমটির কাছে রেললাইন ধসে গিয়ে এক মরণফাঁদের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারী, স্কুলের ছাত্রছাত্রী, বৃদ্ধবৃদ্ধা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিন নম্বর গুমটি পারাপার করছেন। যে কোনও সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন তাঁরা। কিন্তু বারবার জানিয়েও ফল মেলেনি কোনও। প্রশাসনের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের কি কোনও মূল্য নেই? জনস্বার্থে এই মরণফাঁদটি বুজিয়ে ফেলা তো দূরের কথা, প্রশাসনের গড়িমসি ও উদাসীনতা মানুষের ভোগান্তি যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক সময়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রশাসনের গাফিলতি খুঁজে পেলে রাস্তা অবরোধ ও আন্দোলনে সোচ্চার হয়ে উঠে জনজীবন স্তব্ধ করে দেয়। কেন জানি না কোনও অজ্ঞাত কারণে তারাও এই ব্যাপারে নীরব। জানি না এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটির প্রতি প্রশাসনের নজর পড়বে কি না বা স্থানীয় মানুষ রেলগুমটি অবরোধ করে প্রশাসনের ঘুম ভাঙাতে পারবে কি না। তবে এই মরণফাঁদটির সংস্কার না হলে সেখানে যে বড় রকমের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা যে থেকেই যাচ্ছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

অরবিন্দকুমার সেন। মহামায়াপাড়া, জলপাইগুড়ি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন