উত্তরকন্যায় এখনও হল না পরিকাঠামো

যে কোনও প্রয়োজনে উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতা যাওয়ার ঝক্কি এড়াতে উত্তরকন্যায় শিশু ও নারী উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দফতরের শাখা সচিবালয় তৈরি হয়েছে। বছর ঘুরলেও সেই দফতরের কাজের পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ। দফতর থেকে ফ্যাক্স বা ই-মেল পাঠানোর কোনও ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ৪ জন কর্মী-আধিকারিক নিয়ে দফতরের কাজ শুরু হয়েছিল, সে সংখ্যাও বাড়েনি।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৫
Share:

যে কোনও প্রয়োজনে উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতা যাওয়ার ঝক্কি এড়াতে উত্তরকন্যায় শিশু ও নারী উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দফতরের শাখা সচিবালয় তৈরি হয়েছে। বছর ঘুরলেও সেই দফতরের কাজের পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ। দফতর থেকে ফ্যাক্স বা ই-মেল পাঠানোর কোনও ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ৪ জন কর্মী-আধিকারিক নিয়ে দফতরের কাজ শুরু হয়েছিল, সে সংখ্যাও বাড়েনি।

Advertisement

পরিকাঠামো না থাকায় এখনএও দফতরের যে কোনও কাজে ফাইল নিয়ে কলকাতায় যাওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে আধিকারিক এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অভিযোগ। যে দফতর তৈরি করে করে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে সদর দফতরের দূরত্ব কমানোর পরিকল্পনা হয়েছিল, ফ্যাক্স, ই-মেলহীন সেই দফতর-ই বর্তমানে ‘বিচ্ছিন্ন’ অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। মন্ত্রীর কথায়, “সব দফতরের পরিকাঠামো তৈরির কাজই চলছে। রাতারাতি সব তৈরি করে ফেলা সম্ভব নয়। এই দফতরের বিষয়ে খোঁজ নেব। প্রয়োজনে আমরাও পরিকাঠামোগত সব ধরণের সাহায্য করব।”

উত্তরবঙ্গের ৭ জেলার সরকারি কাজ উত্তরবঙ্গে বসেই সারতে উত্তরকন্যায় নিজের শাখা সচিবালয় তৈরি করার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের এবং সাধারণ বাসিন্দাদেরও যে কোনও প্রয়োজনে কলকাতায় যাতে ছুটতে না হয়, তার জন্য উত্তরকন্যায় সব দফতরকে শাখা সচিবালয় তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই মতো গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই শিশু, নারী এবং সমাজ কল্যাণ দফতরের শাখা রয়েছে। উত্তরকন্যার দোতলায় দফতরের অফিস রয়েছে। অফিসে বর্তমানে তিনটি টেবিল রয়েছে। যার একটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বসেন। অফিসের মোট কর্মী-আধিকারিক সংখ্যা ৪ জন। কোনও দিন দফতরে সকলেই হাজির থাকলে, একজনকে সোফায় বসতে হয় বলে জানা গিয়েছে। দফতরের সিংহভাগ নথি এখন কম্পিউটারে সংরক্ষিত। বেশিরভাগ কাজকর্মও কম্পিউটারে হয়। যদিও উত্তরবঙ্গের শাখা সচিবালয়ে শিশু ও নারী উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দফতরের অফিসে কোনও কম্পিউটার নেই। সে কারণে কোনও কাজের ফাইল এলে, সেটিকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া ছাড়া বর্তমানে কাগজপত্রে কোনও কাজ দফতর থেকে হওয়া সম্ভব নয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

উত্তরকন্যায় সমাজকল্যাণ দফতরের সচিবালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন সহ অধিকর্তা মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, “এখনও দফতরের কাজ পুরোপুরি শুরু হয়নি। এখনও এটি প্রাথমিক প্রস্তুতি পর্যায়ে রয়েছে। তবে পরিদর্শন সহ বিভিন্ন কাজ দফতর থেকেই হচ্ছে।”

এক বছরের বেশি সময় ধরে শাখা সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি দফতর ‘প্রস্তুতি পর্যায়ে’ কী ভাবে থাকতে পারে সেই প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশু এবং মহিলাদের জন্য তৈরি বিভিন্ন বেসরকারি হোম পরিদর্শন, হোমের লাইসেন্স নবীকরণ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অডিট রিপোর্ট জমা নিয়ে পরীক্ষা করা, আর্থিক বরাদ্দ মঞ্জুর করার মতো সিদ্ধান্তগুলি উত্তরকন্যার দফতর থেকে নেওয়া হবে। মূলত এই কাজগুলির জন্য কোচবিহার থেকে মালদহ, দিনাজপুর থেকে জলপাইগুড়ির বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা সরকারি বেসরকারি হোম কর্তৃপক্ষকে কলকাতায় ছুটতে হয়। গত বছর উত্তরকন্যায় সচিবালয় তৈরির পরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন সকলে। যদিও, যে দফতর ঘিরে আশার সঞ্চার হয়েছিল, সেই দফতরেই ফ্যাক্স, ই মেল থাকায় কোনও সরকারি নির্দেশ সরাসরি পৌঁছতে পারে না বলে অভিযোগ।

দফতরে অন্তত ৯ জন আধিকারিক-কর্মী থাকার কথা থাকলেও, তা পূরণ হয়নি। দফতরের খাতা, পেন, ফাইল কেনার বছর খানেক বরাদ্দ হলেও, তারপরে মেলেনি বলে অভিযোগ। এমনকী দফতরের সহ অধিকর্তা স্তরের আধিকারিক থাকলেও তাঁর জন্য গাড়ি বরাদ্দ হয়নি বলে জানা গিয়েছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তা সুব্রত সরকারের অভিযোগ, “দফতরের পরিকাঠামো নিধিরামের দশা। কোনও কাজই উত্তরবঙ্গ থেকে হয় না। ফাইল পত্র পোস্ট অফিসের মতো সিল মেরে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পূর্ণক্ষমতায় কাজ করতে না পারায় হোমগুলির পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগ থাকলেও পদক্ষেপ হচ্ছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন