নিজের বাড়ির সামনে দোল খেলছেন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী।
একটা সময় ছিল যখন গ্রাম হোক বা শহর, দোল উত্সব মানে হাতে খোল, করতাল নিয়ে নগরকীর্তন দেখা যেত। বছর পাঁচেক আগেও মালদহে এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছে। এখন খোল-করতালের জায়গা দখল করেছে ডিজে সাউন্ডবক্স। শহরের রাজপথ থেকে গলি, সবত্রই ডিজে বক্সের দাপুটে উপস্তিতি দেখল মালদহ। সেই উত্সবে সামিল হলেন, কচিকাঁচা থেকে বিভিন্ন বয়সীরা। রাজ্যের দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী এবং সাবিত্রী মিত্রকেও দেখা গেল আবির খেলতে।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ ইংরেজবাজারের গোলাপট্টি এলাকায় নিজের বাড়ির সামনে সপরিবার এবং এলাকার মানুষদের নিয়ে রঙ খেলায় মেতে উঠলেন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু। হাতে পিচকিরি নিয়ে মন্ত্রী রঙ দিলেন পথ চলতি মানুষদের। একই সঙ্গে সকলের সঙ্গে গানেও গলা মেলালেন। গানের তালে বাঁশি বাজিয়ে নাচলেনও তিনি। তিনি বলেন, “দোল মানুষের কাছে রঙিন দিন। তবে আগে যেমন হত এখন ঠিক ততটা হয় না। এখনকার ছেলেমেয়েরা বক্স বাজিয়ে পাড়ায় মেতে থাকছে। আমাদের সময় নাচ, গান করে বিভিন্ন পাড়ায় ঘুরে বেড়াতাম।” এ দিকে, রাজ্যের আরেক মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র নিজের বাড়ি ইংরেজবাজারের সদর ঘাটে পরিবারের সঙ্গে দোল খেললেন। নিজেই জলের সঙ্গে রঙ গুলে পিচকিরিতে করে রঙ মাখালেন অন্যদের। তিনি বলেন, “আমাদের সময় দোলের আনন্দটা অন্য স্বাদের ছিল। ছেলে মেয়েদের এখন খোল করতাল নিয়ে পাড়ায় ঘুরতে দেখা যায় না।”
সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই রং খেলা শুরু হয়ে যায় মালদহে। ইংরেজবাজারের কালিতলা, গোলাপট্টি, সদরঘাট, ফুলবাড়ি, গৌড় রোড, মকদমপুর, সুকান্ত মোড়, মাধবনগর প্রভৃতি এলাকায় দেখা যায় এলাকার ছেলেরা বক্স বাজিয়ে দোলের গানের তালে নাচে। পুরাতন মালদহ, হবিবপুর, মানিকচকেও বক্স বাজিয়ে দোল উত্সব উপভোগ করেন সাধারণ বাসিন্দারা। এই জেলায় আবার দুই সময়ে রঙ খেলা হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে রঙের পালা। সূর্য ডুবতেই শুরু হয়ে যায় আবির খেলা। লাল, নীল, সুবজ হরেক রঙের আবির। ইংরেজবাজারের শুভঙ্কর শিশু উদ্যানে বস্তন্ত উত্সবেও ভিড় উপচে পড়েছিল। সকাল বেলা বিভিন্ন নাচের সংস্থার সদস্যরা প্রভাত ফেরি করে এই উদ্যানে আসেন। তারপরে এখানে চলে নাচ, গান এবং আবির খেলাস্কুল শিক্ষক, মৃণাল চৌধুরী, রবীন্দ্র নাথ পান্ডে প্রমুখেরা বলেন, “জেলাতে দোলের উত্সব যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। পাড়াতেই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মাইক বাজানো হচ্ছে। যাতে অন্যদেরও কারও অসুবিধা না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।” কালীতলা ক্লাবের সদস্য প্রসেনজিত্ দাস, সুকান্ত মোড়ের সুরজিত্ সরকারেরা বলেন, “আমরা কেউ খোল, করতাল বাজাতে পারি না। তাই ডিজে বক্স-ই ভরসা।”
ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।