একদা কাণ্ডারীই নেই উত্‌সবে, জল্পনা

গত তিন বছরে তিনিই কার্যত উত্তরবঙ্গ উত্‌সবের অন্যতম ‘কাণ্ডারি’ ছিলেন। সামনে না আসলেও ছয় জেলার উত্‌সবের অধিকাংশ পরিকল্পনার বাস্তবায়নের কাজ তিনিই করতেন। গতবার অবধি ছিলেন উত্‌সবের কার্যকরী সভাপতি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ঘোষণার সময় সাংবাদিক সম্মেলন তাঁকে মন্ত্রীর পাশেই দেখা যেত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৫
Share:

গত তিন বছরে তিনিই কার্যত উত্তরবঙ্গ উত্‌সবের অন্যতম ‘কাণ্ডারি’ ছিলেন। সামনে না আসলেও ছয় জেলার উত্‌সবের অধিকাংশ পরিকল্পনার বাস্তবায়নের কাজ তিনিই করতেন। গতবার অবধি ছিলেন উত্‌সবের কার্যকরী সভাপতি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ঘোষণার সময় সাংবাদিক সম্মেলন তাঁকে মন্ত্রীর পাশেই দেখা যেত। অথচ বুধবার চতুর্থ উত্তরবঙ্গ উত্‌সবের প্রথম বৈঠক বা সাংবাদিক সম্মেলনে দেখা মিলল না শিলিগুড়ির প্রাক্তন কাউন্সিলর ও একসময়ের তৃণমূল নেতা অরবিন্দ ঘোষের। মাস কয়েক আগেই তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন অরবিন্দবাবু, অমুদা নামেই যাঁকে সবাই চেনে।

Advertisement

এদিন দুপুরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব উত্তরকন্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিতিতে উত্‌সব শুরু হবে বলে ঘোষণা করেন। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি অবধি সাত জেলায় উত্তরবঙ্গ উত্‌সব হবে। প্রথম দিন উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উত্‌সব কমিটি সূত্রের খবর, যদিও প্রবীণ অরবিন্দবাবুকে এদিন বৈঠকে আনার জন্য কম চেষ্টা হয়নি। সকাল থেকে বিভিন্ন অফিসার, দলীয় নেতা থেকে শুরু করে খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অরবিন্দবাবুকে টেলিফোন করে মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যায় আসার অনুরোধ করেন। অরবিন্দবাবু ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে দেন, একাংশ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নীতিহীনতার প্রশ্ন তুলে কয়েক মাস দল থেকে সরেছেন। নতুন করে তিনি আর কোনও বিতর্কে যেতে চান না বলে মন্ত্রীর অনুরোধ রাখতে পারেননি। অরবিন্দবাবু শুধু বলেছেন, “মন্ত্রী আমাকে টেলিফোন করে বৈঠকে যেতে বলেছিলেন। আমার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। ব্যক্তিগত কাজও আছে। নাগরিক হিসাবে আছি। কোনও বৈঠক বা কমিটিতে থাকতে পারব না বলে জানিয়ে দিয়েছি।”

Advertisement

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, “আমি এসব নিয়ে কিছু বলব না। কার সঙ্গে আমার কী কথা হয়েছে তা গোটাই উত্‌সব কমিটির আভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে বাইরে আলোচনার তো কিছু নেই।”

অবশ্য উত্‌সবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “সবই অনৈতিক উত্‌সব হচ্ছে। নাগরিক পরিষেবা শিকেয় তুলে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। মানুষ কিছুই জানতে পারছে না। দুর্নীতিও হতে পারে। তাই অরবিন্দ ঘোষেরা আর জড়াতে চাইছেন না মনে হয়।”

জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুবীন ভৌমিকের আশঙ্কা, উত্‌সবের নামে টাকা নয়ছয় হচ্ছে। তাঁর দাবি, “কোথা থেকে টাকা আসছে, কোথায় যাচ্ছে সবই ধোঁয়াশা। তাই অনেকে এসবের মধ্যে আর জড়াতে চাইছেন না।” বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসুর অভিযোগ, “উত্‌সবের নামে কোটি কোটি সরকারি টাকা অপচয় হচ্ছে। মানুষের কোন কাজে এই উত্‌সব লাগছে কে জানে। তাই হয়ত অনেকেই আর এসবের মধ্যে নিজেদের রাখতে চাইছে না। আসলে আসন্ন ভোটের কথা মাথায় রেখেই তো সব হচ্ছে।”

এদিন বৈঠকের পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানিয়েছেন, সাত জেলার মধ্যে এবার জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং শিলিগুড়িকেই থিম জেলা করে চতুর্থবার উত্তরবঙ্গ উত্‌সব করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। রাজ্যের ২৪ শতাংশ এলাকা নিয়ে এরকম বড় মাপের অনুষ্ঠান হয় না। যাত্রা, নাটক, সিনেমা, তথ্যচিত্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়ানুষ্ঠান হবে। উত্তরবঙ্গ থেকে ৮ জন এবং কলকাতার একজনকে মুখ্যমন্ত্রী বঙ্গরত্ন দেবেন। জেলাশাসকদের মাধ্যমে আসা নাম কলকাতায় চূড়ান্ত হবে। ১০০ টি ক্লাবকে আর্থিক অনুদান, ১০০ জন পিছিয়ে পড়া মেধাবীকে সাহায্য ছাড়াও খেলায়াড়দের আর্থিক সাহায্য করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১৫ হাজার অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে বসেআঁকো এবং স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান হবে।

মন্ত্রী কথায়, “উদ্বোধনের দিনই উত্তরকন্যার এক বছর পূর্তিও হচ্ছে। উত্তরকন্যার অডিটোরিয়াম-সহ নানা কাজ চলছে। কোনও একটি জানুয়ারিতে উদ্বোধনের কথাও ভাবা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন