এখনও পাওয়া যায়নি দুর্ঘটনার ফুটেজ রিপোর্ট

সেবক রোডের দুর্ঘটনার সময়ের সিসি ক্যামেরার ‘ফুটেজ’ ঘিরেও রহস্য দানা বেধেঁছে। দুর্ঘটনা নিয়ে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই মতো ফুটেজ সংগ্রহ হলেও তার কোনও রিপোর্ট এখনও পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ি থেকে পাঠানো হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ১৭:৫২
Share:

এই সেই গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

সেবক রোডের দুর্ঘটনার সময়ের সিসি ক্যামেরার ‘ফুটেজ’ ঘিরেও রহস্য দানা বেধেঁছে। দুর্ঘটনা নিয়ে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই মতো ফুটেজ সংগ্রহ হলেও তার কোনও রিপোর্ট এখনও পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ি থেকে পাঠানো হয়নি। দুর্ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালত। আদালত নির্দেশ দিলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজও পুলিশকে জমা দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে পুলিশ রিপোর্ট এবং ফুটেজের মধ্যে কোনও অমিল থাকলে পৃথক মামলাও দায়ের করা কথা। যদিও, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে কোনও রিপোর্ট এখনও পুলিশ কর্তাদের হাতেই না আসায় পুরো বিষয়টি নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

গত ১৮ নভেম্বর রাতে শিলিগুড়ির সেবক রোডে একটি বিলাসবহুল গাড়ির ধাক্কায় বাইক আরোহী দুই কিশোর গুরুতর জখম হয়। এলাকায় জড়ো হওয়া কয়েকজন ঘটনার পরেই, দ্রুত গাড়িটিকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। গাড়িটি শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের ব্যবসায়ী মহেন্দ্র সিঙ্ঘলের। দুর্ঘটনার কিছু আগেই শিলিগুড়ি সার্কিট হাউসে ওই গাড়ি থেকেই মহেন্দ্রবাবু এবং তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর নান্টু পালকে নামতে দেখা গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া একাংশের অভিযোগ, দুর্ঘটনার সময়ে গাড়িতে কারা ছিলেন সেটিও ফুটেজ দেখে জানা যাবে। সে ক্ষেত্রে নান্টুবাবুকে রাজনৈতিক ভাবে হেনস্থা করার ষড়যন্ত্র হয়েছে কি না তারও প্রমাণ পাবে পুলিশ। দুর্ঘটনার সঙ্গে ‘প্রভাবশালীদে’র যোগ থাকায়, সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সে কারণেই ফুটেজ সংগ্রহ হলেও, এখনও তার রিপোর্ট কেন জমা পড়েনি তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। যদিও শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ভোলানাথ পাণ্ডে অবশ্য ফুটেজ ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে শুনেছি। যদিও এখনও এ বিষয়ে কোনও রিপোর্ট পাইনি। ফুটেজে কী পাওয়া গিয়েছে তা জানতে চাইব।”

এ দিকে, গত রবিবার জখম এক কিশোরের কলকাতায় অস্ত্রোপচার হয়েছে। গত ১৮ নভেম্বর মোবাইলের কার্ড কিনতে বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল দুই ভাই স্নেহাশিস এবং শৌভিক। গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে দুই ভাই। দু’জনকেই সেই রাতে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছিল। গত ২১ নভেম্বর শিলিগুড়ি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র স্নেহাশিসকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যেতে হয়েছে। তাঁর চোয়াল এবং নাক ভেঙে গিয়েছে। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে স্নেহাশিস। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত স্নেহাশিসের অস্ত্রোপচার হয়েছে। চোয়াল এবং নাকের কিছুটা অংশ জোড়া দিতে হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ফের আরেক প্রস্থ অস্ত্রোপচার হবে বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, স্নেহাশিসের ভাই শৌভিক শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে ভর্তি আছে। শৌভিকের ডান পায়ে দু’টি অস্ত্রোপচার হয়েছে, ডান পায়ের একটি আঙ্গুল কেটে বাদ দিতে হয়েছে বলে নার্সিংহোম সূত্রে জানান গিয়েছে।

Advertisement

বড় ছেলের দেখভালের জন্য রেল কর্মী সুভাষ ভট্টাচার্য গত সপ্তাহ থেকেই কলকাতায় রয়েছেন। অস্ত্রোপচারের আগে তাঁর স্ত্রী শ্রাবণী দেবীও কলকাতায় গিয়েছেন। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, শিলিগুড়ি এবং কলকাতার দুই নার্সিংহোম মিলিয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। আরও টাকা লাগবে। পরিবারের এক সদস্যের কথায়, “সুভাষবাবু সাধারণ রেলকর্মী। তার পক্ষে এত টাকা খরচও সম্ভব নয়। পরিবারের পাশেও কেউ দাঁড়ায়নি।” সুভাষবাবুর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির অভিযোগ, দুর্ঘটনায় প্রভাবশালীরা জড়িয়ে যাওয়াতেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। দুর্ঘটনার পরে জখম কিশোরদের ভর্তির ব্যবস্থা তিনিই করে দিয়েছিলেন বলে নান্টুবাবু দাবি করেছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, “যে অভিযোগের কথা বারবার বলা বা লেখা হচ্ছে তা ঠিক নয়। শুধুই এটাই বলার রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন