টোটোপাড়ায় এসএসবি ক্যাম্পে বিক্ষোভ।
দীর্ঘদিন ধরেই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করার অভিযোগ উঠছিল টোটোদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছে মজুত করা ৩৮ কিলোগ্রাম এলাচ এসএসবি জওয়ানরা বাজেয়াপ্ত করার পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মাদারিহাটের টোটোপাড়া।
জওয়ানদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলে শুক্রবার চার ঘণ্টা এস এস বি ক্যাম্প ঘিরে বিক্ষোভ দেখাল টোটোরা। ক্যাম্পের জল সরবরাহের পাইপ ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। হাউড়ি নদীর ধারে কাঠ ও খড় দিয়ে তৈরি যে ঘরে বসে জওয়ানরা নজরদারি চালান, সেই অবজারভেশন ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও মাদারিহাটের বিডিও কে ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে হয়। এসএসবির ডেপুটি কমান্ড্যান্ট আই এস পাননেই এর কথায়, “ভুটানের সঙ্গে এক মাত্র জয়গাঁর পথ দিয়ে ব্যবসা করা যায়। এই সমস্ত রাস্তা দিয়ে পণ্য নিয়ে আনা- নেওয়ায় সরকারের কর আদায় হচ্ছে না। এটাই টোটোদের বোঝানো হয়েছিল। ” আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেছেন, “ঘটনার পর নতুন করে উত্তেজনা ঠেকাতে নজরদারি চালানো হচ্ছে। অভিযোগ না পড়ায় কোন মামলা দায়ের হয়নি।”
২০০৪ সাল থেকে ভারত ভুটান সীমান্তে নজরদারি চালানোর জন্য ডুয়ার্সের মাদারিহাট ব্লকের টোটোপাড়া গ্রামে সশস্ত্র সীমা বলের ক্যাম্প তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পর এলাকায় এস এস বি ক্যাম্প তুলে দেবার দাবি তুলতে থাকেন বাসিন্দারা। শুক্রবার সকাল থেকে কয়েকশো টোটো বাসিন্দা সশস্ত্র সীমা বলের ক্যাম্প ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। শুরু হয় উভয় পক্ষের বচসা। টোটো উপজাতির বাসিন্দারা জানান, তাদের নিজস্ব জমিতে মারুয়া চাষ হয়। কয়েকজন সামান্য পরিমাণে আদা ও এলাচের চাষ করে সংসার চালান। অধিকাংশই আর্থিকভাবে ভুটানের উপর নির্ভরশীল। কয়েক যুগ ধরে তারা ভুটান থেকে কমলা লেবু, আদা ও এলাচ কিনে এনে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিয়ে রোজগার করে আসছেন। জয়গাঁ ছাড়া অন্য পথ দিয়ে এ সমস্ত সামগ্রী আনা বেআইনি বলে দাবি করে জওয়ানরা তাঁদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
টোটোপাড়া-বল্লালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে। এদিনের বিক্ষোভে তারা ছিলেন পুরোভাগে। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য রূপচাঁদ টোটোর কথায়, “জওয়ানদের অত্যাচারে সকলে তিতিবিরক্ত। যারা সুরক্ষা দিতে এসেছিল এখানে তারাই এখন আমাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলছে।”দারিদ্রকে সামনে রেখে বেআইনী ব্যবসার পক্ষে সওয়াল করলেন টোটো কল্যাণ সমিতির সদস্য তৃণমূল নেতা অশোক টোটোও। তাঁর কথায়, “বাপ,দাদার আমল থেকে আমরা ভুটানের সঙ্গে এ ভাবে সম্পর্ক রেখে আসছি। ভুটানে গিয়ে দিন মজুরি করে অনেকের সংসার চলে। গরু, ছাগল কেনা বেচা হলে জওয়ানরা এসে বাধা দিচ্ছে। ফলে টোটোদের জীবন জীবিকার উপর আঘাত করছে তারা।”
সকাল আট টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলার পর ফালাকাটা থেকে এস এস বি-র ডেপুটি কমান্ডেন্ট আই এস পাননেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন। মাদারিহাটের বিডিও স্থানীয় টোটোদের সঙ্গে বৈঠকের করে বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলে শান্ত হন টোটোরা। ডেপুটি কমান্ডেন্টের কথায়, “জয়গাঁ ছাড়া অন্য পথ দিয়ে ব্যবসা করা হলে সরকারের কর আদায় হবে না। এটাই টোটোদের বোঝানো হয়েছে। আমাদের জওয়ানরা খারাপ ব্যবহার করে না। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতে হবে সেই কারণেই থানায় ঘর জ্বালানো বা বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে কোনও অভিযোগ করিনি।”
মাদারিহাটের বিডিও পেম্বা শেরপা অবশ্য বলেন, “সামান্য পণ্য টোটোরা ভুটান থেকে এনে মহাজনদের কাছে বিক্রি করেন। তবে কী ধরনের সামগ্রী আনা যাবে তা নিয়ে আমরা টোটোদের সঙ্গে আলোচনায় বসব।” ফের হয়রানি করা হলে ক্যাম্পের জওয়ানদের সামাজিক বয়কট করা হবে বলেও এদিন হুমকি দিয়েছেন টোটোরা।