এসজেডিএ-র লাইসেন্স নিয়ে তোলা আদায়ের অভিযোগ

টোল আদায়ের জন্য এসজেডিএ থেকে লাইসেন্স নিয়ে তোলা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে। শিলিগুড়ির উপকন্ঠে নৌকাঘাট এলাকার নিত্যযাত্রীদের একাংশের তরফে এই অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫২
Share:

একই রসিদে জোর করে যাওয়া-আসার জন্য টাকা তোলা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।

টোল আদায়ের জন্য এসজেডিএ থেকে লাইসেন্স নিয়ে তোলা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে। শিলিগুড়ির উপকন্ঠে নৌকাঘাট এলাকার নিত্যযাত্রীদের একাংশের তরফে এই অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। টোল গেটে একমুখি রাস্তাতে যাওয়ার সময়েও যাওয়া এবং ফেরা দুইয়ের জন্যই ফি দিতে যাত্রীদের বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-র (এসজেডিএ) তৈরি নৌকাঘাট এলাকায় টোল গেটে মঙ্গল এবং বুধবার দিনভর বিধি ভেঙে একমুখি যাত্রার জন্যও দ্বিগুণ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ দিন রাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান গৌতম দেবের কাছেও এই অভিযোগ পৌঁছেছে। মন্ত্রী বলেন, “এমন ঘটনা কী ভাবে ঘটল তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। একবার যাওয়ার জন্য একবারই ফি দিতে হবে, কেন দু’বারের ফি নেওয়া হচ্ছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব।”

Advertisement

শিলিগুড়ি শহর তথা জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে যেতে হলে নৌকাঘাট হয়েই যেতে হয়। নৌকাঘাট মোড়ের পরেই তৃতীয় মহানন্দা সেতু। এসজেডিএ-এর তৈরি টোল গেট রয়েছে সেতুর একপ্রান্তে। নিয়ম অনুযায়ী চারচাকা গাড়ি থেকে টোল সংগ্রহ করা হয়। যাত্রীবাহী ছোট গাড়ির এক বার যাওয়ার জন্য ৫ টাকা নেওয়া হয়। যদিও, এ দিন যে রসিদ দেওয়া হয়েছে তাতে যাওয়ার জন্য ৫ টাকা এবং ফেরার জন্য ৫ টাকা লেখা ছিল। এক রসিদ দিয়ে একবার যাওয়ার জন্য জোর করে ১০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এসজেডিএ-এর সিইও আর বিমলা অবশ্য এ দিন ফোন তোলেননি। টোল গেটের দায়িত্বে রয়েছেন সংস্থার সহকারী নির্বাহী আধিকারিক অশ্বিনী রায়। তিনি বলেন, “যে সংস্থা টোল সংগ্রহের দায়িত্বে রয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কেন এমন ঘটল তা জানতে চাওয়া হবে।”

নৌকাঘাট হয়ে মেডিক্যাল কলেজের পাশ দিয়ে রাস্তাটি দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি রাস্তা মাটিগাড়ায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে গিয়ে মিশেছে। অন্য রাস্তাটিও রানিডাঙ্গা হয়ে জাতীয় সড়কে যোগ হয়েছে। শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়ি থেকে জাতীয় সড়কে যাওয়ার জন্য এই রাস্তাটি বাইপাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিনই অসংখ্য গাড়ি শুধুমাত্র একবারই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। সেই গাড়িগুলির যাত্রীদেরও দু’বার যাতায়াতের জন্য বাধ্য হয়ে টোল দিতে হচ্ছে। গাড়ি চালকদের অভিযোগ, একবার যাতায়াতের কথা বললেও, টোল সংগ্রহের কর্মীরা কোনও কথা শুনতে রাজি হনননি। জোর করে দু’বার যাতায়াতের রসিদ নিতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

দ্বিগুণ ফি আদায় করাই শুধু নয়, টোল আদায়ের রসিদে সংস্থার লাইসেন্স নম্বর অথবা কোনও নির্দেশিকার নম্বর উল্লেখ্য নেই বলে অভিযোগ। এসজেডিএ-এর কোনও সিলও রসিদে দেখা যায়নি। সে কারণেই নিত্যযাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, ভুয়ো রসিদ ছাপিয়ে জোর করে টোল আদায় করা হচ্ছে। বাড়তি টোলের হিসেবও সরকারি নথিতে জমা না পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে অভিযোগ। সংস্থা সূত্রের খবর, সম্প্রতি কোচবিহারের একটি সংস্থা নৌকাঘাটের টোল গেটটির দায়িত্ব পেয়েছে। এক বছরের জন্য সংস্থাটিকে এসজেডিএকে ৭৫ লক্ষ্যেরও বেশি টাকা জমা দিতে হবে বলে জানা গিয়েছে। আগেভাগেই এই টাকা তোলার জন্য যাত্রীদের থেকে তোলা আদায় চলছে বলে অভিযোগ।

অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংস্থার কার্যনির্বাহী আধিকারিক অমিতাভ চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, “মাত্র ৪ দিন হল টোল গেটের দায়িত্ব পেয়েছি। এখনও সব রসিদ ছাপানো হয়নি। সে কারণেই দু’বার যাতায়াতের রসিদ দিয়ে বুধবার টাকা নেওয়া হয়েছিল।” অমিতাভবাবুর দাবি, আজ থেকে শুধুমাত্র একবার যাতায়াতের জন্যই ফি দিতে হবে। যদিও, এসজেডিএকে না জানিয়ে কেন জোর করে দ্বিগুণ ফি আদায় করা হল তার কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি সংস্থাটির থেকে। যাত্রীদের অনেকেই টাকা বাড়তি ফেরতের দাবি তুলেছেন। এসজেডিএ-এর সদস্য নান্টু পাল বলেন, “বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাব। যদি কারও দোষক্রুটি থাকে তবে আধিকারিকরা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করি।” আরেক সদস্য চন্দন ভৌমিকের কথায়, “কী ভাবে টোল সংগ্রহ করা হবে তা নিয়ে এসজেডিএ-এর নীতি রয়েছে। সেই নীতি ভেঙে কেউ নিজের ইচ্ছে মতো ফি আদায় করতে পারে না। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন