কাঁচা পাতার দাম ক্রমশ কমতে থাকায় বিপাকে উত্তরবঙ্গের প্রায় ৪০ হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি। পুজোর পর থেকে প্রতিদিনই বটলিফ কারখানাগুলির একাংশ ঘণ্টা পিছু চা পাতার দাম কমিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ চা চাষিদের। বৃহস্পতিবার চা পর্ষদের কর্তাদের বাজারের প্রবণতার কথা জানানো হয়েছে। চা পর্ষদের সহকারী অধিকর্তা অমৃতা চক্রবর্তী বলেন, “প্রতি ঘণ্টায় পাতার দাম কমানোর অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দেখে যা বলার বলব।”
অভিযোগ পেয়েও পর্ষদ কর্তারা কোনও পদক্ষেপ করতে না চাওয়ায় ক্ষুব্ধ জলপাইগুড়ি ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের কর্তারা। সংস্থার জেলা সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, “পর্ষদ কর্তাদের নজরদারির অভাবে বাজারে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন সপ্তাহ অন্তর পাতার দাম কমতে দেখেছি। পুজোর পর থেকে বটলিফ কারখানার মালিকরা এক জোট হয়ে দিনের প্রতি ঘণ্টায় পাতার দাম কমাতে শুরু করেছেন। পর্ষদ কর্তারা সব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন।”
যদিও ক্ষুদ্র চা চাষিদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বটলিফ কারখানার মালিকদের সংস্থা। নর্থ বেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সংস্থার সম্পাদক অমন বৈদ জানান, “জোট করে পাতার দাম কমানোর কোন বিষয় নেই। পুজোর ছ’দিন বন্ধের পরে বাগান খুলেছে। ওই সময়ের মধ্যে একদিকে যেমন পাতার উত্পাদন বেড়েছে, অন্যদিকে পাতার গুণগত মান কমেছে। জোগান বেড়ে যাওয়ায় পাতার দাম কমছে।” তাঁর দাবি, চা পর্ষদের নির্দেশ মেনে বেলা ১২টার মধ্যে ১২ টাকা থেকে ১৪ টাকা কেজি দামে পাতা কেনা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এর পরেও পাতার প্রয়োজন না হলেও চাষিরা হাজির হচ্ছেন আমরা কি করতে পারি।”
যদিও ক্ষুদ্র চা চাষিরা বটলিফ কারখানা মালিকদের দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তাঁদের অভিযোগ, পুজোয় ষষ্ঠীর দিন পর্যন্ত কেজি প্রতি পাতার দাম ১৪ টাকা মিলেছে। গত সোমবার ওই দিন পাতার দাম কমে হয় ১২ টাকা কেজি। মঙ্গলবার সকালে সেটা নেমে হয় ১০ টাকা বেলা ১২টায় কেজি প্রতি পাতার দাম আরও নেমে ৮ টাকায় দাঁড়ায়। বিকেল চারটার পরে চাষিরা ৬ টাকা কেজি দামে পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হয় বলে অভিযোগ। বুধবার এবং বৃহস্পতিবারেও একই ভাবে দাম কমে বলে জানানো হয়েছে।
ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের জেলা সম্পাদক বলেন, “গত দেড় দশকে বাজারের এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। চা পর্ষদ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রাস্তায় নামতে বাধ্য হব। একই মানের পাতা পুজোর আগে ১৪ টাকা কেজি দরে যে কারখানাগুলি কিনেছে এখন তাঁরা একজোট হয়ে ৬ টাকার বেশি দিচ্ছে না।” কেজি প্রতি চা পাতা উত্পাদনে ১৩ টাকা খরচ পড়ে বলে ক্ষুদ্র চা চাষিদের দাবি।