কাঠ-চোর সন্দেহে গণপ্রহারে হত দুই

কাঠ চোর সন্দেহে দুই যুবককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে বানারহাটে। বুধবার সকালে হলদিবাড়ি চা বাগান লাগোয়া ঝোপ থেকে দুই যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দুই যুবকের নাম নাম প্রেমচাঁদ ওরাও (৩৫) এবং বাসিয়া ওঁরাও (৩২)। দু’জনেই হলদিবাড়ি চা বাগানের বাসিন্দা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গয়েরকাটা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০১:৪০
Share:

হলদিবাড়ি চা বাগান লাগোয়া ঝোপে পড়ে দেহ। ছবি: রাজকুমার মোদক।

কাঠ চোর সন্দেহে দুই যুবককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে বানারহাটে। বুধবার সকালে হলদিবাড়ি চা বাগান লাগোয়া ঝোপ থেকে দুই যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দুই যুবকের নাম নাম প্রেমচাঁদ ওরাও (৩৫) এবং বাসিয়া ওঁরাও (৩২)। দু’জনেই হলদিবাড়ি চা বাগানের বাসিন্দা। অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে প্রেমচাঁদ ও বসিয়া সহ বাগানেরই বাসিন্দা শিবা খড়োয়ার এবং অনুপ ওঁরাও গয়েরকাটা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময়ে কাঠচোর ভেবে পাশের তেলিপাড়া চা বাগানের তিন চৌকিদার তাঁদের পথ আটকে মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। অন্য দুই জন পালিয়ে গেলেও প্রেমচাঁদ ও বসিয়া পালাতে পারেননি বলে বাগানের বাসিন্দাদের দাবি। চৌকিদাররাই দুই যুবককে খুন করেছে বলে অভিযোগ করে এ দিন সকালে বানারহাট-গয়েরকাটা সড়কে দেহ রেখে তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে হলদিবাড়ি চা বাগানের বাসিন্দারা। এ দিকে, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা চৌকিদাররা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে। এক চৌকিদারের বাড়ি থেকে নিহত প্রেমচাঁদের সাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

Advertisement

জলপাইগুড়ির ডিএসপি প্রভাত চক্রবর্তী বলেছেন, “পুরনো বিবাদের জেরে দুই যুবককে খুন করা হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একটি খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দু’জনের হাতে, পায়ে, বিকে এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বাসিয়া ওঁরাও হলদিবাড়ি বাগানের শ্রমিকের কাজ করেন, নিহত প্রেমচাঁদ দিনমজুরি করে সংসার চালান। এ দিন সকালে চা বাগানের ঝোপে দুই যুবকের দেহ উদ্ধার হওয়ার পরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, হলদিবাড়ি চা বাগানের বড়া লাইনের বাসিন্দা চার যুবক মঙ্গলবার বিকেলে সাইকেলে চেপে গয়েরকাটা বাজারে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৮ টা নাগাদ তাঁরা তেলিপাড়া বাগানের পাশ দিয়ে ফিরছিলেন। তেলিপাড়া চা বাগানের গেটের কাছে পৌঁছোতেই চৌকিদাররা তাঁদের ঘিরে ফেলে বলে অভিযোগ। চৌকিদাররা বাগানের ছায়া গাছ কাটার চেষ্টা করার অভিযোগ তোলায় যুবকদের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। এরপরেই চৌকিদাররা মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। শিবা খড়োয়ার ও অনুপ ওঁরাওয়ের দাবি, “সাইকেলে চেপে আমরা গয়েরকাটা বেড়াতে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় সহজ পথে তেলিপাড়া বাগানের পাশ দিয়ে আসতে শুরু করি। আচমকা তিন চৌকিদার লাঠি উঁচিয়ে আমাদের পথ আটকায়। বাগানের গাছ কাটতে এসেছি বলে অভিযোগ তোলার পর আমাদের সঙ্গে বচসা বাধে। চৌকিদাররা প্রথমেই প্রেমচাঁদ এবং বসিয়াকে প্রথমে মারধর শুরু করে। আমরা পালিয়ে গেলেও, ওঁরা দু’জন পালাতে পারেনি।”

Advertisement

এ দিন সকালে ঘটনাটি জানাজানি হতেই প্রেমচাঁদ এবং বাসিয়ার খোঁজ শুরু হয়। হলদিবাড়ি বাগান লাগোয়া গয়েরকাটা বাগানের ঝোপের আড়ালে সকাল ১০টা নাগাদ নিহত দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়। প্রত্যক্ষদর্শী দুই জনের বয়ান নথিবদ্ধ করে তেলিপাড়া চা বাগানের তিনি চৌকিদারের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। যদিও তিন চৌকিদার বা তাদের পরিবারের কোনও সদস্যকেই বাড়িতেই কাউকে পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিহত প্রেমচাঁদের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী, বাবা-মা রয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা শোনার পর থেকে স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রেমচাঁদের দাদা প্রভু ওঁরাও বলেন, “আমার ভাই কোনও অন্যায় কাজ করতে পারে না। তাঁদের নামে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে।” একই পরিস্থিতি বাসিয়ার বাড়িতেও।

নিহত দু’জনের নামে থানায় আগে কখনও অপরাধমূলক কোনও রকম কাজকর্মের অভিযোগ রয়েছে কিনা তাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা তথা হলদিবাড়ি বাগানের বাসিন্দা লিওস হাসাপূর্তি বলেছেন, “নিরপরাধ ওই যুবকদের খুনের ঘটনায় জড়িতরা দ্রুত ধরা না পড়লে আন্দোলন শুরু হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন