কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্র
মালদহে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল কোনও নতুন ঘটনা নয়। বরং আকারে ইঙ্গিতে দুই গোষ্ঠীর নেতা-নেত্রী পরস্পরের দিকে আঙুল তুলে শনিবার ফের বুঝিয়ে দিলেন, দলনেত্রীর কড়া নির্দেশ সত্ত্বেও এ সমস্যা দ্রুত মেটার নয়।
দুই গোষ্ঠীর বিবাদে জেলা পুলিশও যে ‘নিরপেক্ষ’ নয়, শাসকদলের মন্ত্রী তথা বিবাদমান একটি গোষ্ঠীর নেতা কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর কথাতেই তা স্পষ্ট।
জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রতিভা সিংহ প্রকাশ্যেই প্রহৃত হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও মূল অভিযুক্ত, রতুয়া ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের মহম্মদ ইয়াসিনকে গ্রেফতার করতে না পারায় তাদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কৃষ্ণেন্দু। কোনও রাখঢাক না রেখেই তিনি বলছেন, “পুলিশের ভুমিকা লজ্জাজনক। প্রকাশ্য সভায় গোলমাল হতে পারে এই আশঙ্কায় রতুয়া থানার ওসিকে আগাম জানানো হয়েছিল। কিন্তু আগাম পদক্ষেপের কোনও চেষ্টাই করেননি তিনি।”
মন্ত্রীর দাবি, “সভাচলাকালীন হামলাকারীরা যখন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিভাকে মারধর করছিল, তখন রতুয়া থানার ওসি পাশেই দাঁড়িয়ে হাসছিলেন।” তাঁর দাবি, হামলাকারীরা বোমা, গুলি চালালেও প্রতিভাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসার প্রয়োজনই মনে করেননি ওই ওসি। সেই সময়ে সামসি ফাঁড়ির ইনচার্জ সুমন সিংহ না এগিয়ে এলে ‘বিপদ বাড়ত।’ তিনিই ওই মহিলা নেত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন বলে দাবি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রীর।
রতুয়া থানার ওসি, পরিমল সাহার বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন কৃষ্ণেন্দু। এ দিনও তিনি বলেন, “রতুয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তবে এ বার যথাযথ জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছি।” কার কাছে? এ দিন কলকাতা ফেরত মন্ত্রী অবশ্য তা ভাঙতে চাননি।
এ দিন মালদহ ফিরেই হাসপাতালে ওই নেত্রীকে দেখতে গিয়েছিলেন কৃষ্ণেন্দু।
তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রও অবশ্য প্রতিভাকে দেখতে গিয়েছিলেন এ দিন। তবে কৃষ্ণেন্দু বেরিয়ে যাওয়ার পরে।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনিও বলছেন, “আমি জেলা সভাপতি থাকার সময়ে ইয়াসিন দলে ঢুকেছিল ঠিকই তবে, এখন ও দলে কী করেছে তা জানি না। তার দায়ও আমার নয়।” তবে কার? সাবিত্রী তা ভাঙতে চাননি। আর কৃষ্ণেন্দুর কথায়, “প্রতিভার ব্যাপারে যা বলার রাজ্য নেতৃত্ব বলবেন।”
দলীয় কর্মীরা অবশ্য বলছেন, এত বড় ঘটনার পরে দুই মন্ত্রী অন্তত এক সঙ্গে প্রতিভাকে দেখতে হাসপাতালে যেতে পারতেন। তাহলে অন্তত গোষ্ঠী বিবাদটা সাময়িক হলেও আড়াল করা যেত। দু-জনের কেউই অবশ্য সে সবের ধার ধারেননি।
তবে মালদহে কোনওরকম ‘গোষ্ঠী বিবাদ’-এর কথা মানতেই চাননি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়।
এ দিকে ইয়াসিনকে গ্রেফতার করা না গেলেও ওই নেত্রীর উপর হামলার অভিযোগে তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা তিনজনেই তৃণমূলকর্মী। রতুয়া থানার ওসি বলেন, “ঘটনার পর তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্তকে ধরার চেষ্টা চলছে। এরপরেও আমার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠছে?” জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “ওই নেত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের ধরতে তল্লাশি চলছে। সেই সঙ্গে পুলিশের ভূমিকাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তদন্ত শুরু হয়েছে।”