‘কুপ্রস্তাবে’ নারাজ মহিলাকে খুনে অভিযুক্ত জওয়ান

এক মহিলাকে গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক জওয়ানের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে দাবি, মহিলাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন ওই জওয়ান। মহিলা রাজি না হওয়াতেই তাঁর গলায় গুলি করা হয়। বিএসএফ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়েছে। তাদের দাবি, গরু পাচারে বাধা দেওয়ার সময় গোলমালে জওয়ান আত্মরক্ষার্থে গুলি চালালে বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলা মারা যান। বিএসএফের দাবি, ওই জওয়ানও ঘটনায় আহত হয়েছেন। তিনি হাসপাতালে ভর্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩০
Share:

এক মহিলাকে গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক জওয়ানের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে দাবি, মহিলাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন ওই জওয়ান। মহিলা রাজি না হওয়াতেই তাঁর গলায় গুলি করা হয়। বিএসএফ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়েছে। তাদের দাবি, গরু পাচারে বাধা দেওয়ার সময় গোলমালে জওয়ান আত্মরক্ষার্থে গুলি চালালে বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলা মারা যান। বিএসএফের দাবি, ওই জওয়ানও ঘটনায় আহত হয়েছেন। তিনি হাসপাতালে ভর্তি।

Advertisement

ওই মহিলার বাড়ি কোচবিহারের দিনহাটা থানার সীমান্তবর্তী এলাকায়। শনিবার রাতে তাঁকে সেখানেই খুন করা হয়। তাঁর পরিজনদের দাবি, বাড়ির চৌহুদ্দির মধ্যেই খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে তাঁকে। সেখান থেকেই তাঁর দেহ মিলেছে। মহিলার ছোট ছেলে পুলিশে বিএসএফের এক জওয়ানই তাঁর মা-কে খুন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের এক আত্মীয় জানান, ওই জওয়ান অত রাতে অসাধু উদ্দেশ্যেই এসেছিলেন। ওই মহিলা রাতে শৌচাগারে যেতে বেরিয়েছিলেন। আচমকা গুলির শব্দ আসে। অন্যরা জেগে উঠে দেখেন মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে। সে সময় বিএসএফের এক জওয়ানকেও সেখানে দেখেন তাঁরা। তাঁর পরিবারের লোকদের দাবি, সেই জওয়ান তাঁদের মুখ না খোলার হুমকিও দেন। তবে বিএসএফের আরও কোনও জওয়ানও সেখানে থাকতে পারেন বলেও সন্দেহ করছেন তাঁরা। অন্ধকারের মধ্যে তাঁকে অবশ্য তাঁরা দেখতে পাননি। তাঁর পরিজনেরা জানান, মহিলার সম্মান রক্ষায় পুলিশের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে কুপ্রস্তাবের কথা বলা হয়নি। দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহের বক্তব্য, “কুপ্রস্তাব দেওয়ায় ওই মহিলা ওই জওয়ানের নামে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে চেয়েছিলেন বলেও শুনেছি। সম্ভবত তার জেরেই তাঁকে বাড়িতে ঢুকে খুন করা হল।” বিএসএফের দাবি, ওই মহিলা পাচারকারীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই রাতে গরুপাচারে বাধা দেওয়ায় দুষ্কৃতীদের ৩০-৪০ জনের দল জওয়ানদের উপরে হামলা চালায়। একজন জওয়ান শূন্যে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে চান। সেই জওয়ানকে লাঠি, ধারালো অস্ত্র, পাথর দিয়ে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। অন্ধকারে দুষ্কৃতীদের উদ্দেশে চালানো গুলি ওই মহিলার গায়ে লাগে। জখম জওয়ান দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। বিএসএফের কোচবিহার সেক্টরের ডিআইজি দলবীর সিংহ সাঁধু বলেন, “ওই মহিলার বাড়িতেই পাচারকারীরা আশ্রয় নেয়। পাচারকারীদের হামলার জেরে আত্মরক্ষায় এক জওয়ান গুলি চালান। অন্য অভিযোগ ভিত্তিহীন।”

কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব জানান, মৃতার পরিবারের অভিযোগে খুনের মামলা করা হয়েছে। বিএসএফের অভিযোগের ভিত্তিতেও মামলা করে তদন্ত হচ্ছে।

Advertisement

২০০৪-এ উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্তেও এমন অভিযোগ উঠেছিল বিএসএফের বিরুদ্ধে। এক মহিলা ছাগল চরাতে গিয়েছিলেন। এক বিএসএফ জওয়ান তাঁকে ধর্ষণ করে। প্রতিবাদ করলে মহিলার পেটে গুলি চালায় ওই জওয়ান। কলকাতার পথে মারা যান ওই মহিলা। বিএসএফের চৌকি ঘিরে বিক্ষোভ দেন গ্রামবাসীরা। জওয়ানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার সাজা ঘোষণা করে আদালত।

দিনহাটায় ময়না তদন্তের পরে এই মহিলার দেহ আসার পর এলাকার বাসিন্দাদের ভিড় করে এসে বিএসএফের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “ওই এলাকা নয়, বিএসএফ নানা জায়গাতেই অত্যাচার করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন