প্রশাসক বোর্ডে অনুমোদন ২০ লক্ষ

কার্নিভ্যাল কমিটিকে ঋণ পুরসভার, বিতর্ক

উত্‌সবে যোগদানকারী শিল্পীদের প্রাপ্য দেওয়ার জন্য শিলিগুড়ি কার্নিভ্যাল কমিটিকে ২০ লক্ষ টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে শিলিগুড়ি পুরসভা। গত ২১ নভেম্বর পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের বৈঠকে ওই ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। আমজনতার কর, ফি বাবদ দেওয়া টাকা কোনও উত্‌সব কমিটিকে ঋণ দেওয়া যায় কি না তা নিয়ে পুরসভার অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী দল সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপির পক্ষ থেকে ওই ভাবে জনতার টাকা ধার দেওয়া বিধিভঙ্গ বলে দাবি করা হয়েছে।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০০
Share:

উত্‌সবে যোগদানকারী শিল্পীদের প্রাপ্য দেওয়ার জন্য শিলিগুড়ি কার্নিভ্যাল কমিটিকে ২০ লক্ষ টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে শিলিগুড়ি পুরসভা। গত ২১ নভেম্বর পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের বৈঠকে ওই ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। আমজনতার কর, ফি বাবদ দেওয়া টাকা কোনও উত্‌সব কমিটিকে ঋণ দেওয়া যায় কি না তা নিয়ে পুরসভার অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী দল সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপির পক্ষ থেকে ওই ভাবে জনতার টাকা ধার দেওয়া বিধিভঙ্গ বলে দাবি করা হয়েছে।

Advertisement

বিরোধী দলের তরফে যে সব প্রশ্ন ও অভিযোগ উঠেছে তা এরকম: প্রথমত যে সংস্থার (শিলিগুড়ি কার্নিভ্যাল কমিটি) নামের রেজিস্ট্রেশন হয়নি বা নথিভুক্ত নয় তাদের এ ভাবে ঋণ দেওয়া কতটা বিধিসম্মত। দ্বিতীয়ত, শিলিগুড়ি পুরসভায় মেয়র বা পারিষদরা নেই। প্রশাসক বোর্ড চালাচ্ছে। প্রতিদিনের নাগরিক পরিষেবার তদারকি করাই তাদের কাজ। সেক্ষেত্রে এ ধরনের ঋণ অনুমোদনের এক্তিয়ার এই পুরসভার রয়েছে কী?

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা উত্‌সব কমিটির মুখ্য পৃষ্ঠপোষক গৌতম দেবের যুক্তি, “পুরসভার প্রশাসক বোর্ড চাইলে সংস্কৃতি খাতে অর্থ বরাদ্দ করতেই পারে। পুরসভার সাধারণ তহবিল থেকে ওই টাকা খরচ করার ক্ষমতা রয়েছে। শিলিগুড়ি উত্‌সবের টাকা তো এতদিন পুরসভাই খরচ করেছে। তবে আমরা চাই না-পুরসভার অর্থ উত্‌সব খাতে খরচ করা হোক। সেই টাকা বরং রাস্তাঘাট-অন্যান্য উন্নয়ন কাজে খরচ হবে। তাই ঋণ হিসাবে টাকা নেওয়া হয়েছে।” পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন তথা এসজেডিএ-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আর বিমলা বলেন, “শিল্পীদের অগ্রিম দেওয়ার জন্য ঋণ হিসাবে ওই টাকা দেওয়া হচ্ছে। তবে তা সরাসরি কমিটিকে দেওয়া হয়নি। নিয়ম মেনেই সব কিছু হয়েছে।”

Advertisement

প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, অতীতে পুরসভার টাকা সংস্কৃতি উত্‌সবে অনুদান হিসেবে, বিজ্ঞাপন বাবদ দেওয়া হয়েছে। তা বলে ঋণ দেওয়ার কোনও সুযোগ পুর আইনে নেই। তিনি বলেন, “পুরসভা কোনও অর্থ লেনদেনকারী সংস্থা নয়। এটা কখনও হতে পারে না।” তাঁর অভিযোগ, আমজনতার করের টাকা নানা অছিলায় ব্যবহার করা হচ্ছে। পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেন, “পুরসভার খাতে দ্রুত টাকা ফেরত্‌ নেওয়া হবে।” একই সুরে পুর সচিব সপ্তর্ষি নাগ ও ফিনান্স অফিসার সুদীপ বসু জানিয়েছেন, পুরসভার কোনও টাকা কার্নিভ্যালে খরচ করবেন না তাঁরা। ঋণের টাকা শীঘ্রই পুরসভার তহবিলে ফেরত্‌ দেওয়া হবে।

পুরসভা এবং কার্নিভ্যালের উদ্যোক্তা কমিটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, কার্নিভ্যালের জন্য প্রথমে পুরসভা থেকে আর্থিক সহায়তার ভাবনা হয়। কিন্তু পুরসভার ভাঁড়ার যে ফাঁকা, মেয়র এবং তাঁর পারিষদরা কয়েক মাস আগে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকেই তা স্পষ্ট হয়েছে। পুরসভার অস্থায়ী কর্মী-আধিকারিকদের বেতন দেওয়া নিয়েই কয়েক মাস আগে কর্তৃপক্ষকে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে। পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে যে ভাতা গরিব, বিধবা বা প্রতিবন্ধীদের দেওয়া হয় তা কয়েক মাসের বকেয়া রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে তাই পুরসভা কোনও অর্থ দিলে প্রশ্ন উঠবে দেখেই সরাসরি অর্থ অনুমোদনের রাস্তায় যাওয়া হয়নি। কিন্তু কার্নিভ্যালের আয়োজনে শিল্পীদের অগ্রিম টাকা দেওয়ার নাম করে ওই ২০ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু টাকা সংগ্রহের কাজও পুর কমিশনার, পুর সচিব থেকে আধিকারিকেরা করতে পারেন কি না সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। কেন না অর্থের বিনিময়ে কোনও সংস্থা পুরসভা থেকে ভবিষ্যতে অবাঞ্ছিত সুবিধা চাইতেও পারে।

এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী রাজনাতিক নেতারা। পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “যে অফিসাররা এটা করেছেন তাদের জবাবদিহি করতে হবে। আমরা আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলছি।”

ওই কার্নিভ্যালে কত টাকা ব্যয় হবে জানতে চাইলেন বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু। তিনি বলেন, “পুরসভা বা প্রশাসন যে অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত তার বাজেট, ব্যয় নিয়ে এমন গোপনীয়তা কেন?” উত্‌সবের টাকা কোথা থেকে কী ভাবে এল তা জানাতে হবে বলে তারা দাবি করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন