কৃষ্ণেন্দুর দিকে আঙুল, তোপ দাগলেন সাবিত্রী

বৈঠকে হাজির দলের দুই লোকসভা প্রার্থী। আর তাঁদের সামনে জেলার বাসিন্দা, দলেরই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব নিয়ে আঙুল তুলছেন আর এক মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার মালদহ কলেজ অডিটোরিয়ামে এমনই দৃশ্য দেখলেন জেলা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

Advertisement

পীযৃষ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৪:০৯
Share:

বৈঠকে হাজির দলের দুই লোকসভা প্রার্থী। আর তাঁদের সামনে জেলার বাসিন্দা, দলেরই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব নিয়ে আঙুল তুলছেন আর এক মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার মালদহ কলেজ অডিটোরিয়ামে এমনই দৃশ্য দেখলেন জেলা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। অথচ, তাঁরা জানতেন বৈঠক হচ্ছে লোকসভা ভোটে ভাল ফল করার জন্য দলের প্রচার কৌশল ঠিক করতে।

Advertisement

গোষ্ঠী রাজনীতিতে মদত দেওয়া নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী তথা রাজ্যের সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের তোপের পরে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, “কেউ যেন না ভাবেন, ‘আমি বড়, ও ছোট’। দলে সবাই সমান। এক জনই নেত্রী। তাঁর নাম মমতা বন্দোপাধ্যায়।”

উত্তর এবং দক্ষিণ মালদহ আসনে কী ভাবে নির্বাচনী প্রচার করা হবে, কোন এলাকায় কাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং জেলার নির্বাচনী কোর কমিটি ঠিক করতে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ওই বৈঠক ডেকেছিলেন সাবিত্রী। কিন্তু তাঁর ডাকা বৈঠকেও মালদহ কলেজ অডিটোরিয়ামের হাজার আসনের অনেকগুলিই ফাঁকা ছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, তাতেই চটে যান সাবিত্রী। বলতে শুরু করেন, “আমি জেলায় দলের সভানেত্রী। অথচ, আমাকে কিছু না জানিয়ে ব্লকের কিছু নেতা অন্য দলের নেতা-কর্মীদের পর্যটনমন্ত্রীর কাছে নিয়ে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়াচ্ছেন। কেউই আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করছেন না। কিছু ব্লকের নেতা ভাবছেন, জেলায় সাবিত্রী মিত্রর একটা গোষ্ঠী আছে। আর কৃষ্ণেন্দুর একটা গোষ্ঠী আছে। এতে দল দুর্বল হচ্ছে।”

Advertisement

এর পরেই সাবিত্রীর হুঁশিয়ারি, “মাতব্বরি করলে দল থেকে বেরিয়ে যান। মাতব্বরি সহ্য করব না। যত দিন দলের জেলা সভানেত্রী থাকব, তত দিন আমার নির্দেশ জেলার সমস্ত নেতাকে মানতে হবে।” তাঁর সংযোজন, “আমি ওই পদ থেকে সরে গেলে যিনি নেতৃত্বে আসবেন, তখন আমি তাঁকে মানব। আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।” মঞ্চ থেকে সাবিত্রী যখন এ কথা বলছেন, পাশেই বসা কৃষ্ণেন্দুর মুখ তখন মেঘলা।

লোকসভায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকে তৃণমূলের অন্দরের অসন্তোষের মেঘ ছায়া ফেলেছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। সামাল দেওয়ার চেষ্টাও চলছে। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল আগেই বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অনুপম হাজরাকে পাশে নিয়ে সভা করেছেন। মঙ্গলবার বনগাঁয় খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উপস্থিতিতে মেঘ কেটেছে মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর ও তাঁর ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের মধ্যে। বুধবার বহরমপুরে হাত মেলালেন হুমায়ুন কবীর এবং ইন্দ্রনীল সেন। মালদহে কী হবে?

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের দাবি, “এতে ভোটের ফলে কোনও প্রভাব পড়বে না।” সাবিত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “আমাদের দলে গণতন্ত্র রয়েছে। উনি এমন বলেছেন, তো কী হয়েছে? দলের বৈঠকে বলবেন না তো কোথায় বলবেন?”

সাবিত্রীর বক্তব্য-বিতর্কের পরে, অন্য বিতর্কেরও রসদ মিলেছে তৃণমূলের এ দিনের বৈঠক থেকে। সেখানে তৃণমূল নেতা তথা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান স্বপন মিশ্র বলেন, “মালদহ জেলাকে বাঁচাতে কোতোয়ালি ভবনে (গনি-পরিবারের বাসভবন) তালা মারতে হবে। ওই ভবনের অবসান করতে হবে।” যা জেনে দক্ষিণ মালদহ আসনে কংগ্রেস প্রার্থী আবু হাসেম খান চৌধুরীর মন্তব্য, “এ দিনই তো শুনলাম, তৃণমূলের বৈঠকে মন্ত্রীতে-মন্ত্রীতে বিবাদ হয়েছে। এর পরেও যদি ওঁরা ভাবেন কোতোয়ালিতে তালা ঝোলাবেন, মুর্খের স্বর্গে আছেন।”

বৈঠকের অভিজ্ঞতা কেমন? দক্ষিণ মালদহের প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন মন্তব্য করেননি। তবে উত্তর মালদহের প্রার্থী সৌমিত্র রায়ের প্রতিক্রিয়া, “তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়ার পরে অনেকেই বলেছিল, ‘নোংরামিতে জড়াচ্ছিস। রাজনীতি নোংরামি’। আমি বলি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রীর রাজনীতিতে নোংরামির জায়গা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন